২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কসমেটিক সার্জারি

-

‘প্লাস্টিক সার্জারি’ প্রকৃত অর্থে কী এ নিয়ে অনেকের নানা ধরনের ভুল ধারণা আছে। ‘প্লাস্টিক সার্জারি’ নামটা এসেছে
প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘প্লাস্টিকস’ থেকে। এর অর্থ, আকার ও আকৃতির পরিবর্তন আনা। যেহেতু প্লাস্টিক সার্জারিতে
পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি অঙ্গ বা ‘টিস্যুর’ আকৃতির পরিবর্তন করা হয়, তাই এ ধরনের সার্জারিকে
‘রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারিও বলা হয়ে থাকে। লিখেছেন অধ্যাপক ডা: সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকী
‘প্লাস্টিক সার্জারি’ দ্বারা বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসা করা হয়। যেমনÑ
১. জন্মগত ত্রুটিÑ কাটা ঠোঁট, কাটা তালু, বাড়তি আঙুল, জোড়া আঙুল, মুখমণ্ডলের বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি।
২. আঘাতজনিত রোগÑ দুর্ঘটনা বা আঘাতের পর শরীরের যেকোনো স্থানের পুনর্গঠন।
৩. ক্যান্সার বা টিউমার অপসারণের পর সেই স্থানের পুনর্গঠন।
৪. বেডসোরের চিকিৎসা।
৫. পুড়ে যাওয়া রোগীর চিকিৎসা।
৬. হাতের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা।
৭. কসমেটিক সার্জারি বা সৌন্দর্য বৃদ্ধির সার্জারি।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ‘প্লাস্টিক সার্জারি’Ñ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজন হয়। কসমেটিক সার্জারিও এর অন্তর্ভুক্ত। কোনো ব্যক্তির মুখমণ্ডল অথবা ফিগার সুন্দর করার জন্য যেকোনো প্লাস্টিক সার্জারিকেই আমরা কসমেটিক সার্জারি বলি। এই নামকরণটিও এসেছে আরেকটি গ্রিক শব্দ ‘কসমেটিকস’ থেকে, যার মানে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। আজকাল ‘কসমেটিক’ সার্জারিকে এইসথেটিকও বলা হয়।
কসমেটিক সার্জারির ইতিহাস
হাজার হাজার বছর ধরেই মানুষ সৌন্দর্যের পূজারি। সুন্দর হওয়ার ও থাকার জন্য মানুষ কত কিছুই না করেছে এবং এখনো করছে। সাত হাজার বছর আগে প্রাচীন মিসরে গ্রামবাসীর চোখের পাতায় রঙ ব্যবহার হতো। এ থেকেই কসমেটিক সার্জারির উৎপত্তি।
আড়াই হাজার বছর আগে মিসরে প্রথম ডার্মাব্রেশন পদ্ধতি চালু হয়। এতে বিভিন্ন ধরনের পাথর ঘষে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানো হতো। দুই হাজার বছর আগে এই উপমহাদেশেই নাকের প্লাস্টিক সার্জারি করা হতো। ২০০ বছরেরও আগে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে স্তনে চর্বি প্রতিস্থাপন করে এর আকৃতি সুন্দর করার চেষ্টা করা হতো। ১৯৬৩ সালে ক্লোনিন ও গেরো প্রথম সিলিকন ইমপ্লান্ট ব্যবহার করে স্তনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। লাইপোসাকশন (বাড়তি মেদ বের করা) প্রথম চালু করেন ইলুজ নামে এক ফরাসি ডাক্তার ১৯৭৭ সালে। এই তালিকার আসলে কোনো শেষ নেই।
কসমেটিক সার্জারি কী কী ধরনের হতে পারে? শরীরের বিভিন্ন স্থানের ওপর ভিত্তি করে প্রচলিত কসমেটিক সার্জারিগুলোকে চার ভাগে সাজানো যেতে পারে।
১. মুখমণ্ডলের কসমেটিক সার্জারি
* রাইনেপ্লাস্টিÑ নাকের সৌন্দর্য
* ফেসলিফটÑ কুঁঁচকে যাওয়া ত্বকের জন্য
* থ্রেড ফেসলিফটÑ বিনা অপারেশনে কুঁঁচকে যাওয়া ত্বকের জন্য সর্বাধুনিক চিকিৎসা
* ব্লিফারোপ্লাস্টিকÑ চোখের পাতার জন্য (ব্যাগি আইস)
* ডার্মাব্রেশন ও মাইক্রোডার্মা ব্রেশনÑ ব্রণ, মুখের দাগ ও সূক্ষ্ম বলিরেখার জন্য
* চোয়াল ও চিবুকের জন্য
* অবাঞ্ছিত তিল অপসারণ
* ফটোথেরাপিÑ ব্রণ চিকিৎসার জন্য
২. স্তনের কসমেটিক সার্জারি
* অগমেন্টেশন ম্যামোপ্লাস্টিÑ ছোট স্তনকে সিলিকন ব্রেস্ট ইমপ্লান্টের মাধ্যমে বড় করা।
* রিডাকশন ম্যামোপ্লাস্টিÑ অস্বাভাবিক বড় স্তনকে ছোট করে দেহের সাথে মানানসই আকার দেয়া।
* ম্যাস্টোপেক্সিÑ ঝুলে যাওয়া স্তনকে সঠিক স্থানে ‘আপলিফট’ করা।
৩. পেটের জন্য
* লাইপোসাকশনÑ ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে পেটের বাড়তি মেদ বের করে ফিগার সুন্দর করা। এই পদ্ধতিতে ঊরু, নিতম্ব, হাত, গলা ও পুরুষ স্তনের আকৃতিও ঠিক করে নেয়া যায়।
* অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টিÑ ঝুলে পড়া পেটের ত্বক ও বাড়তি মেদ কেটে ফেলে পুনর্গঠনের মাধ্যমে পেটের আকার সুন্দর করে দেয়া।
৪. অন্যান্য :
* ব্রাকিওপ্লাস্টিÑ মোটা ও ঝুলে যাওয়া হাতের পুনর্গঠনের সার্জারি ঊরুর প্লাস্টিক সার্জারি।
* থাইলিফটÑ ঊরুর প্লাস্টিক সার্জারি।
৫. হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টÑ টাক মাথায় প্রাকৃতিক ও স্থায়ী চুল লাগানো।
লেখক : প্লাস্টিক সার্জন, কসমেটিক সার্জারি সেন্টার লিমিটেড, শঙ্কর প্লাজা (পঞ্চম তলা), ৭২, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯। ফোন : ০১৭১১-০৪৩৪৩৫


আরো সংবাদ



premium cement