২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হেপাটাইটিস

-

হেপাটাইটিস বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই হেপাটাইটিসে আক্রান্তের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) মতে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৪০ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত আর এ সমস্যায় প্রাণ হারায় ১৫ লাখের বেশি। যা একটি সংক্রমিত রোগ আর সংক্রমিত হচ্ছে বিপজ্জনকভাবে প্রতিনিয়ত। এর উপর সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হিসেবে গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে সারা বিশ্বে।
কাকে বলে : ঐবঢ়ধ শব্দের ইংরেজি হলো খরাবৎ আর বাংলা হলো যকৃত। ওঃরং শব্দের অর্থ হলো প্রদাহ। হেপাটাইটিস মানে লিভারে/যকৃতের প্রদাহ। কোনো কারণে যকৃতের প্রদাহ এবং এ কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রমের ব্যাঘাত দেখা দিলে সাধারণত যকৃতের প্রদাহ বলে। যদি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে ইনফেক্টাস হেপাটাইটিস বলে। যার ফলে লিভার তার নিজস্ব ক্রিয়াশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয় ও উপসর্গ দেখা যায়।
লিভারের কাজ : লিভার বা যকৃত আমাদের মানব দেহের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ গ্রন্থি। বক্ষ গহ্বরের নিচে ডান দিকে, ডান ফুসফুসের নিচে ও ডান নি¤œ পঞ্জরাস্থির পশ্চাৎভাগে অবস্থিত। লিভার প্যারেনকাইমাল কলা দিয়ে গঠিত এবং চারটি লোবে বিভক্ত। এর মাঝে রক্তবাহী নালী, লসিকা গ্রন্থি, পিত্তনালী ও স্নায়ু রয়েছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের লিভারে ১.৫ লিটার রক্ত প্রভাহিত হয় প্রতি মিনিটে। এ ছাড়াও * লিভার পিত্তরশ নিঃসরণ করে, যা পরিপাক কাজে সহয়তা করে। * অ্যালবুমিন গ্লবিউলিনসহ অনেক রকম প্রোটিন লিভার উৎপাদন করে থাকে। লিভারে গ্লাইকোজেনের সঞ্চয় ও গ্লুকোজের বিপাক ঘটায়।
* রক্ত পরিষ্কারের একটি বিশেষ যন্ত্র হিসেবে কাজ করে লিভার। * লিভারে ভিটামিন বি, লৌহ, ফলিক এসিড সঞ্চিত রাখে। * এ ছাড়াও স্নেহজাতীয় খাদ্য ও ফ্যাটি দ্রব ভিটামিন আত্তীকরণে বিশেষ সাহায্য করে এ কথা অনস্বীকার্য যে, লিভার জীবের জন্য একটি অতীব গুরুত্ববহ গ্রন্থি। কারণ, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নানাবিধ কারণ প্রমাণিত, লিভার প্রদাহের জন্য যেমনÑ
* বি কোলাই লিভারের এ্যামোবায়োসিস প্রভৃতি রোগ * অবরোধজনিত লিভার-সাধারণত পিত্তনালীতে অবরুদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়, পিত্তপাথরি জীবাণু সংক্রমণ, পিত্তনালীর সঙ্কোচন এবং পিত্তনালী, লিভার, পাকস্থলী, কিডনিতে অবরোধ হতে পারে।
রাসায়নিক : রাসায়নিক পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলেও লিভারের সমস্যা হতে পারে। * ওষুধ তথা ওষুধজাত : আর্সেনিক, ম্যাপেনাইন কার্বনটেট্রা ক্লোরাইড, ক্লোরোফর্ম, মদ্যপান বা সুরাসার ইত্যাদিসহ আরো কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় ও বিষ ক্রিয়ায় হতে পারে। রোগের কারণ : ইনফ্লুয়েঞ্জা, কালাজ্বর, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, প্লেগ, সিফিলিস ইত্যাদি রোগের কারণে হতে পারে। ভাইরাস : বিভিন্ন রকমের ভাইরাসের মাধ্যমেও লিভারের প্রদাহসহ নানা সমস্যা হতে পারে। ক. ভাইরাস ‘এ’ এই ভাইরাস রোগীর মলে থেকে এরা সাধারণত খাদ্য, পানীয় ইত্যাদির মাধ্যমে অন্ননালীর সাহায্যে সংক্রমিত হয়। অপরিষ্কার ঘনবসতি, নোংরা এলাকা থেকে মাছির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। খ. ভাইরাস ‘বি’ এ জাতীয় ভাইরাস রোগীর রক্তে পাওয়া যায়। হেপাটাইটিস অ্যাসোসিয়েটেড এ্যান্টিজেনের (ঐঅঅ) সংশ্লিষ্ট। যা মানুষের শরীরে দীর্ঘকালব্যাপী সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে এবং খুব ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যা ছড়ায় রক্ত এবং রক্ত বহন, প্রদান সংক্রান্ত ইস্টোমেন্টের মাধ্যমে। গ. শুধু বাংলাদেশেই এক কোটির বেশি লোক ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত এবং প্রথিবীতে প্রায় ৪০ কোটি লোক আক্রান্ত। আর মারা যায় বছরে ১৫ লাখ, ডঐঙ পরিসংখ্যান অনুসারে। ঘ. ভাইরাস ‘সি’ এর ভয়াবহতাও অনেক বেশি, এটিও রক্ত ও রক্তজাত দ্রব্য এবং যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। বিশ্বে প্রতি বছর সারে তিন লাখ মানুষ মারা যায় এ ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। ঙ. ডি ভাইরাস- হেপাটাইটিস ‘বি’ দ্বারা আক্রান্ত থাকলে ‘ডি’ সংক্রমণ ঘটায়।
চ. ভাইরাস ‘ই’-এর প্রভাবও কম নয়। বিশ্বে প্রায় দুই কোটি মানুষ আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণও করে অনেক। এটা নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায় অনেক সময়। মল ও দূষিত পানির মাধ্যে ছড়ায়।
* অন্যান্য কারণ : অনিয়মতান্ত্রিক জীবন জাপন, অতিভোজন, মানসিক উত্তেজনা, অবসন্নতা, আঘাত, শোক, ক্রোধ, বংশধারায় থাকা ইত্যাদি কারণেও হতে পারে।
লক্ষণ : জীবাণু সংক্রমণ হলে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। তখন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। শরীরের তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৪ ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
* লিভার বিনেয় ব্যথা হতে পারে। * সামান্য টিপ/চাপ দিলে রোগী প্রণ্ড ব্যথা পায়। * লিভারের আকার বৃদ্ধি পায়। * রোগ ভোগকাল দীর্গ হলে লিভারেরও বৃদ্ধি ঘটতে থাকে।
পরীক্ষা : রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এইচবিএসএজি এইচবিএস এ, বি, সি, ডি, এ পর্যায়ক্রমে জানা।
* এসজিপিটি। * এসজিওটি জানা, * লিপিড প্রোফাইল করে। * আলট্রাসনোগ্রাম করে। * লিভার এক্স-রে করে রোগ নির্ণয় করা যায়।
* লিভার বায়োপসি করে। এ ছাড়া চিকিৎসক নিজেও পরীক্ষা করে জানতে পারেন।
চিকিৎসা : লিভারের গুরুত্ব বুঝে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে, সাথে ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া বিকোলাই থাকলে তাও দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে সারাতে হবে।
* অতিরিক্ত, অনিয়মিত, গুরুপাক, উত্তেজক, উগ্র দ্রব্য পান, মধ্যপান, এলকোহল বর্জন করতে হবে। * অতিরিক্ত শারীরিক, মানবিক পরিশ্রম না করা। * যথেচ্ছভাবে ওষুধ গ্রহণ না করা।
* যত্রতত্র খাদ্য ও পানীয় পরিহার বিধেয়Ñ পর্যাপ্ত শারীরিক মানসিক বিশ্রাম। * লঘু এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ। * গ্লুকোজ ও সেবীকাদের স্বাস্থ্য বিধিগুলো ভালোভাবে মানা। * প্রয়োজনে হাসপাতালে রাখা।
ওষুধ : একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি, যথাসময়ে হোমিও চিকিৎসা গ্রহণ করলে যথেষ্ট ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সমস্যা হলোÑ তখন আসে, যখন আর কোনো গতি থাকে না। এ জন্যই একটা কথা সমাজে প্রচলিতÑ ‘যার নাই কোনো গতি, সে খায় হোমিওপ্যাথি’। যথাসময়েই চিকিৎসা করা বুদ্ধিমানের কাজ। যে সব ওষুধ লিভার সমস্যায় ব্যবহৃত হয় এর কয়েকটি তুলে ধরছিÑ লাইকো পোডিয়াম, কারডোয়াস ক্যারিকাপ্যাপা, চেলিডোনিয়াম, ব্রায়ুনিয়া, চায়না, ন্যাট্রামসালফ, নাক্স ভমিকা ইত্যাদি ওষুধ। তবে প্রত্যেক ওষুধই লক্ষণ সাদৃশ্যে ব্যবহৃত হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, তানজিম হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ।
চেম্বার: সিটি হোমিও ইন্টারন্যাশনাল ২৩, জয়কালি মন্দির, ঢাকা। ০১৯১২৮৪২৫৮৮


আরো সংবাদ



premium cement
‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সকল