২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নারীর বিশেষ সৌন্দর্য বাড়াতে মেমোপ্লাস্টি

-


সৌন্দর্যের প্রতি সবারই রয়েছে স্বাভাবিক দুর্বলতা। নিজেকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করতে, বিশেষ করে নারীরা ধরনা দিচ্ছে প্লাস্টক সার্জনদের কাছে। উন্নত বিশ্বে প্লাস্টক সার্জারির মাধ্যমে রাতারাতি পাল্টে ফেলা সম্ভব হচ্ছে সামগ্রিক দৃশ্যপট। এই সৌন্দর্য বাড়াতে মেমোপ্লাস্টর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
লিখেছেন ডা: সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকী

মেমোপ্লাস্টি কি : এটি এমন ধরনের প্লাস্টক সার্জারি, যাতে স্তনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়। অর্থাৎ ছোট স্তনকে শরীরের সাথে মানানসই আকার যেমন দেয়া হচ্ছে, তেমনি বেমানান বড় আকারের স্তনকেও ছোট করা সম্ভব। মানুষের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য যে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়Ñ তাকেই এস্থেটিক (অবংঃযবঃরপ) বা কসমেটিক (ঈড়ংসবঃরপ) সার্জারি বলা হয়। এই নামকরণ এসেছে গ্রিক শব্দ 'কড়ংসবঃরপড়ং' থেকেÑ যার মানে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা (ঃড় নবধঁঃরভু)। তাই এ ধরনের মেমোপ্লাস্টি সার্জারির অন্তর্ভুক্ত।
প্রকারভেদ : মেমোপ্লাস্টি মূলত তিন ধরনেরÑ
* অগমেন্টেশন মেমোপ্লাস্টিÑ এখানে ছোট স্তনকে বড় করা হয়।
* রিডাকশন মেমোপ্লাস্টিÑ এ ক্ষেত্রে বড় স্তনকে ছোট করা হয় এবং
* মাস্টোপেক্সিÑ এখানে ঝুলে পড়া স্তনকে স্বাভাবিক অবস্থানে নিয়ে আসা হয়।
অগমেন্টেশন মেমোপ্লাস্টি : কৃত্রিম ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহারের মাধ্যমে ছোট স্তনকে শরীরের সাথে মানানসই করে দেয়ার প্লাস্টিক সার্জারিকে বলা হয় অগমেন্টেশন মেমোপ্লাস্টি। এ অপারেশনে সিলিকন জেল ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করা হয়।
ইতিহাসÑ শত শত বছর ধরে মানুষ কত কিছুই না করেছে স্তনের সৌন্দর্য বাড়াতে। বিভিন্ন ধরনের জিনিস প্রতিস্থাপন করে স্তনের আকার বৃদ্ধি করা হয়েছে, যেমনÑ হাতির দাঁত, ষাঁড়ের তরুনাস্থি, উল, স্পঞ্জ (ঝঢ়ড়হমব) ও সিলিকন ইনজেকশন। শরীরের অন্য জায়গা থেকে চর্বি। (ঋধঃ) দিয়েও চেষ্টা করা হয়েছে অগমেন্টেশন মেমোপ্লাস্টির। কিন্তু বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে কোনোটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।
মাক্টোপেলি : ঝুলে পড়া স্তনকে স্বাভাবিক স্থানে নিয়ে আসার প্লাস্টিক সার্জারিকে বলা হয় মাস্টোপেক্সি। এ ক্ষেত্রে স্তনের নিচে ইনসিশন দিয়ে স্তনকে আপলিফট করে স্বাভাবিক স্থানে নিয়ে আশা হয়। এরপর পেছনের অংশে সেলাই দিয়ে চেস্টওয়ালের সাথে ফিক্সড করে দেয়া হয়। এখানেও নিপলকে প্রয়োজনমতো ওপরে রিলোকেট করা হয়। এতে কোনো সমস্যা হয় না।
স্তন রিকনস্ট্রাকশন (ইৎবধংঃ জবপড়হংঃৎঁপঃরড়হ) : ক্যান্সারের কারণে যদি স্তন কেটে ফেলা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে স্তন রিকনস্ট্রাকশনের প্রয়োজন হয়। এখানে ইমপ্লান্টের মাধ্যমে নতুর স্তন তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বেকারস ইমপ্লান্ট। স্যালাইন দিয়ে ক্রমান্বয়ে এ ইমপ্লান্টিকে ফোলানো হয়। এতে কয়েক মাস সময় লাগলেও হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। ইমপ্লান্ট ছাড়াও কৃত্রিম স্তন তৈরি করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় শরীরের অন্য স্থানের মাংসপেশি যেমনÑ পিঠের (ল্যাটিসিমাস ডরসি) অথবা পেটের নিচের অংশের (রেকটাস এবডোমিনিস)। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি ইমপ্লান্টও ব্যবহার করা হয়। সাধারণত মাংসপেশিকে পুরোপুরি আলাদা না করে (রক্তে চলাচল সচল রেখে) ঘুরিয়ে এনে স্তনের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হয়। সাম্প্রতিকালে অবশ্য মাংশপেশিকে আলাদা করে স্তনের জায়গায় বসান হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে বুকের রক্তনালীর সাথে মাংসপেশির রক্তনালীর সংযোগ করে দেয়া হয়। এতে যদিও সময় ও খরচ দু’টিই বেশি লাগে, তারপরও এর রেজাল্ট বা ফল তুলনামূলক ভালো। এসব রোগীর ক্ষেত্রে নিপল তৈরিরও প্রয়োজন পড়ে। এরও বিভিন্ন লোকাল ফ্ল্যাপ (খড়পধষ ঋষধঢ়) পদ্ধতি রয়েছে। নিপলের চার পাশের কালো অংশ (এরিওলা) তৈরি করা হয় একটু গাড় ধরনের ত্বক যেমন কুচকির ত্বক দিয়ে। অবশ্য কৃত্রিম নিপলও পাওয়া যাচ্ছে, যা কোনো অপারেশন ছাড়াই খুব সহজেই লাগিয়ে নেয়া সম্ভব।
মেমোপ্লাস্টির মাধ্যমে যে কেউই নিজের সৌন্দর্য বাড়িয়ে নিতে পারেন। প্রতি বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই দুই লাখেরও বেশি মহিলা এই অপারেশন করাচ্ছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশে একাধিক চিত্রনায়িকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও গৃহবধূ সিলিকন ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট সার্জারি করিয়েছেন।
১৯৬৩ সালে প্রথম সিলিকন আবিষ্কার করেন এনিন ও গেরো নামক দুই বৈজ্ঞানিক। সিলিকন জেল ইমপ্লান্টের রয়েছে একটি আউটার শেল যার ভেতরে থাকে সিলিকন জেল। এ কারণেই এর নামকরণ এরূপ। বিভিন্ন সাইজে এ ইমপ্লান্ট পাওয়া যায়। হাল আমলে স্যালাইন ফিল্ড ইমপ্লান্টও ব্যবহার হচ্ছে।
সব ধরনের ইমপ্লান্টের আউটার শেল সিলিকন ইলাস্টেমার দ্বারা গঠিত। সাধারণত এই শেল মসৃণ (ঝসড়ড়ঃয) হয়। কিন্তু ইদানীংকালে অমসৃণ বা টেক্সচারড ইমপ্লান্টও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। পার্শ্বপ্রক্রিয়া হিসেবে কিছু ক্ষেত্রে জেল লিকেজ বা ক্যাপসুলার কন্ট্রাকচার (ঈধঢ়ংঁষধৎ ঈড়হঃৎধপঃঁৎব) হতে পারে। কিন্তু সাধারণত ইমপ্লান্ট ব্যবহারে কোনো অসুবিধা হয় না।
ইমপ্লান্ট ব্যবহার নিয়ে জনমনে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এতে করে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়েÑ যা সম্পূর্ণ অমূলক। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইরপ্লান্ট ব্যবহারকারী-অব্যবহারকারীর তুলনায় স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি বেশি নয়। এখানে মনে রাখতে হবে, ইমপ্লান্ট স্তনের ভেতর বসানো হয়, স্তনের পেছনে। ফলে অহেতুক ক্যান্সারের ভয় পাওয়ার কোনোই কারণ নেই। শুধু ইমপ্লান্ট ব্যবহারে ব্যান্সার হয় এ ধারণা মোটেও সঠিক নয়। এ অপারেশনটি করা হয় স্তনের সবচেয়ে নিচের স্থানে (সাব ম্যামারি ফোল্ড) ছোট করে কেটে। ফলে বাইরে থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় কাটা দাগ বোঝা যায় না। সৌন্দর্যহানির তো প্রশ্নই উঠে না। বরং আগের চেয়ে আপনার সৌন্দর্য বেড়ে যাবে দ্বিগুণ। এই অপারেশনের পর সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোনো সমস্যা হয় না, ফিলিংস বা সেনসেশনেও ব্যাঘাত ঘটবে না। সাধারণত এ অপারেশনের পরে হাসপাতালে থাকতে হয় না।
রিডাকশন মেমোপ্লাস্টি : এ অপারেশনের মাধ্যমে বৃহদাকার স্তনকে ছোট করে শরীরের সাথে মানানসই আকার দেয়া হয়। এখানে রোগী যেমন ফিরে পায় তার হারানো সৌন্দর্য, তেমনই রেহাই পায় বাড়তি ওজন বহন করার কষ্ট থেকে। এ ক্ষেত্রে স্তনের নিচের টিসু ছেটে ফেলা হয়। নিপলকে প্রয়োজন মাফিক ওপরে রিলোকেট করা হয়। এ অপারেশনের জন্য হাসপাতালে তিন-চার দিন থাকতে হয়। এতে যেহেতু ইসপ্লান্টের প্রয়োজন নেই, সেহেতু খরচও তুলনামূলক কম।

লেখক : প্লাস্টিক সার্জন, কসমেটিক সার্জারি সেন্টার লিমিটেড, শঙ্কর প্লাজা (পঞ্চম তলা) ৭২, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯।
ফোন : ০১৭১৯০৪৩৪৩৫

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজার ২৪টি হাসপাতাল অকার্যকর : জাতিসঙ্ঘ বাবরকে ফের অধিনায়ক করতে পিসিবির তোড়জোড় ‘বঞ্চিত ও অসহায় শিশুদের সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই’ ময়মনসিংহে বাসচাপায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত রমজানের প্রথমার্ধে ওমরাহ পালন করলেন ৮০ লাখ মুসল্লি পোরশায় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী যুবক লাশ ফেরত গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত, এতে আমরা বিজয়ী হবো : মির্জা ফখরুল নিঝুমদ্বীপে পুকুরে পাওয়া গেল ১০ কেজি ইলিশ ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় চলবে ১৫ ফেরি ও ২০ লঞ্চ দি স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের রক্তদাতাদের সংবর্ধনা প্রদান কক্সবাজারে ওরিয়ন হোম অ্যাপ্লায়েন্সেসের ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সকল