১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অবাঞ্ছিত লোম অপসারণে লেজার চিকিৎসা

-

একজন তরুণী যার মুখে লোম হয়। তার এ সমস্যা নিয়ে তিনি সব সময় চিন্তিত বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন। কারণ, এটা নিয়ে অনেক সময় তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই এটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা করে থাকেন। লিখেছেন অধ্যাপক ডা: সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকী

অবাঞ্ছিত লোম অপসারণে বা চিকিৎসার অনেক উপায়ই আছে। এর মধ্যে ধিীরহম, ঞযৎবফরহম, ইষবপরহম, ঈৎবধস বঢ়রষধঃরড়হ, ঊষবপঃৎড়ষুংরং-এর কথা আমরা সবাই জানি। যাদের মুখে অবাঞ্ছিত লোম থাকে তারা এ ধরনের একটি বা একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। কিন্তু সমস্যা একটাইÑ এসব চিকিৎসার কোনোটাই স্থায়ী নয়। তাই কিছু দিন পরপরই ধিীরহম, ঞযৎবফরহম ইত্যাদি করার জন্য বিউটিপার্লারে যেতে হয়। এর জন্য যেমন বারবার টাকা খরচ হয় তেমনি বিরক্তিকরও। আর এগুলো করতে বেশ ব্যথাও পাওয়া যায়।
কিন্তু আজকালকার অত্যাধুনিক লেজার পদ্ধতিতে এই অবাঞ্ছিত লোমের স্থায়ী চিকিৎসা করা সম্ভব।
প্রশ্ন : লেজার কিভাবে কাজ করে?
উত্তর : লেজার হচ্ছে বিশেষ ধরনের একটি আলোকরশ্মি; যা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসা করা যায়। লেজারও বেশ কয়েক ধরনের আছে। এর মধ্যে ঘফুধম ১০৬৪ লোম অপসারণে ব্যবহৃত হয়। যখন লেজার দিয়ে অবাঞ্ছিত লোমের চিকিৎসা দেয়া হয়। ওই বিশেষ ধরনের আলোকরশ্মিটি লোমের গোড়ায় যে কালো মেলানিন থাকে তাতে শোষিত হয়, এতে লোমকূপে বিশেষ ধরনের তাপের সৃষ্টি হয়, যাকে ঞযবৎসধষ বহবৎমু বলা হয়। এই ঞযবৎসধষ বহবৎমু লোমকূপকে ক্রমান্বয়ে সঙ্কুচিত করে ফেলে এবং পরবর্তীকালে ওইখান থেকে আগের মতো মোটা ও কালো লোম জন্মাতে পারে না।
প্রশ্ন : লেজার চিকিৎসা করে এক দিনেই কি ফলাফল পাওয়া যায়?
উত্তর : লেজার চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ফলাফল পেতে কয়েক মাস লেগে যায়। এটার কারণ, একটি জায়গায় সব লোম একই সময় জন্মপর্যায়ে থাকে না এবং লেজার শুধু জন্মপর্যায়ে যে লোম থাকে তাতেই ভালো কাজ করে। যেসব লোম ঘুমন্ত থাকে সেগুলো যখন আবার জন্মপর্যায়ে আসে তখন দ্বিতীয় ধাপে আবার একটি লেজার সেশনে দিতে হয়। এভাবে তিন থেকে চার সপ্তাহ অন্তর অন্তর চার থেকে ছয়টা লেজার সেশনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু রোগী দু-একটা সেশনের পরই অনেকখানি সুফল পেয়ে যান।
প্রশ্ন : লেজার চিকিৎসায় খরচ কেমন হয়?
উত্তর : যেহেতু অত্যাধুনিক লেজার মেশিনের দাম ৪০ লাখ থেকে দুই কোটি পর্যন্ত হতে পারে। এই চিকিৎসা স্বভাবতই একটু ব্যয়বহুল। কিন্তু অন্যান্য পদ্ধতিতে বারবার খরচ করার চেয়ে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন এই স্থায়ী লেজার পদ্ধতি।
প্রশ্ন : মেয়েদের হরমোনজনিত কারণে যদি মুখে অবাঞ্ছিত লোম হয় তাহলে কি লেজার কাজ করবে?
উত্তর : হ্যাঁ। যাদের হরমোনজনিত সমস্যা থাকে, তারাও লেজার চিকিৎসায় উপকৃত হন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গড়ে তাদের দুটো সেশন বেশি নিতে হয়। বাস্তবে দেখা যায়, বেশির ভাগ মহিলার অবাঞ্ছিত লোমের কারণ খুুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এদের লেজার বিশেষজ্ঞরা ওফড়ঢ়ধঃযরপ ঃুঢ়ব বলে থাকেন। শুধু অল্পসংখ্যক মহিলার হরমোনজনিত সমস্যা বা চড়ষুপুংঃরপ ঙাবৎরবং ঝুহফৎড়সব পাওয়া যায়। তাদের জন্য লেজার চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু হরমোনাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন : লেজার চিকিৎসায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
উত্তর : না। সঠিকভাবে লেজার চিকিৎসা দেয়া গেলে এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। শুধু গর্ভাবস্থায় লেজার চিকিৎসা দেয়া উচিত নয়। এ ছাড়া সব ধরনের রোগীকেই লেজার চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। কয়েক বছর আগেও কালো ত্বকে (এশিয়ান বা আফ্রিকান) লেজার চিকিৎসা দেয়া যেত না। কিন্তু ইদানীং অত্যাধুনিক লেজার মেশিন দ্বারা যেকোনো ধরনের লেজার চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
প্রশ্ন : লেজার চিকিৎসায় কোনো নিয়ম পালন করতে হয় কি?
উত্তর : হ্যাঁ, কিছু সাধারণ নিয়ম আছে যেগুলো পালন করতে হয়। যেমনÑ চষঁপশরহম, ঃযৎবফরহম করার সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে লেজার চিকিৎসা দেয়া হয় না। কারণ, নতুন করে লোমকূপে লোম গজাতে না থাকলে লেজার ভালো কাজ করে না। লেজার চিকিৎসার ঠিক পরপরই ঝঁহ ইষড়পশ ছাড়া রোদে যাওয়া উচিত নয়।
নিয়মিত অষড়াবৎধ যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার কথাও বলে দেয়া হয়, যেকোনো কসমেটিক/মেকআপ ব্যবহারে কোনো বাধা নেই। এই লেজার চিকিৎসায় কোনো ব্যথা পাওয়া যায় না এবং সময় লাগে ৩০ মিনিটেরও কম। তাই যে কেউ অফিসের ফাঁকে এসে লেজার করিয়ে যেতে পারেন।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে এ প্রযুক্তির লেজার চিকিৎসা কি সম্ভব?
উত্তর : হ্যাঁ, এখন বাংলাদেশে ধামন্ডির কসমেটিক সার্জারি সেন্টারে এ ধরনের চিকিৎসা নিয়মিত করা হচ্ছে। এতে অনেক আগ্রহী রোগী সুফল পাচ্ছেন। উল্লেখ্য, বিদেশীরাও বাংলাদেশে এই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
প্রশ্ন : লেজার দিয়ে আর কী কী রোগের চিকিৎসা করা যায়?
উত্তর : মুখমণ্ডলে বয়সের ছাপ দূর করা। এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, লেজার দিয়ে বালিরেখা দূর করা যায়। এতে ত্বক যেমন টানটান হয় তেমনি উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পায়। সাথে সাথে লোমকূপগুলোও সঙ্কুচিত হয়। এই লেজার চিকিৎসা করার পর যেকোনো লোকের মুখের বয়সের ছাপ প্রায় দশ বছর কমে যায়।
মুখমণ্ডল ও শরীরের যেকোনো দাগের চিকিৎসাও লেজার দ্বারা সম্ভব। ব্রণ ও ব্রণের দাগও লেজার চিকিৎসা দিয়ে সারানো যায়।
পরবর্তী লেখায় আমরা এসব চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করব।
লেখক : প্লাস্টিক সার্জন, কসমেটিক সার্জারি সেন্টার লি.
শংকর প্লাজা (৫ম তলা), ৭২, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯। ফোন : ৮১৫৩৮০৮

 


আরো সংবাদ



premium cement