২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

থানকুনির রোগ নিরাময় গুণ

-


থানকুনি একটি পরিচিত ভেষজ। গ্রামাঞ্চলের পুকুর পাড়ে রাস্তার ধারে এটি প্রায়ই চোখে পড়ে। বসন্তকালে থানকুনি গাছে ফুল আসে আর গ্রীষ্মকালে ফল পাকে। বীজ এবং কাণ্ড দুটোর মাধ্যমেই থানকুনি বংশ বৃদ্ধি করে। থানকুনি আর্দ্র মাটিতে ভালো জন্মে, তবে জলাবদ্ধতায় পচে যায়। ছোটকালে পেটে ব্যথা হলে মা বলতেন, টাকা মানকি পাতা নিয়ে আয়। এটি খেলে পেট ব্যথা ভালো হয়ে যায়। টাকা মানকি আমাদের এলাকায় থানকুনির আঞ্চলিক নাম। আবার কোথায় একে টাকা পাতাও বলে। থানকুনি অত্যন্ত বলকারক, রুচি বর্ধক, হজম বৃদ্ধিকারক ভেষজ। আমরা রোগ নিরাময়ে থানকুনি পাতার বিবিধ ব্যবহার জানব :
১। আমাশয় : আমাশয় হলে থানকুনি পাতার রস পাঁচ-ছয় চামচ একটু গরম করে খেলে অথবা পাতা থেঁতো করে একটু ভেজে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২। বদহজম : বদহজম হলে আমাশয়ের চিকিৎসার মতো থানকুনি পাতার রস পাঁচ-ছয় চামচ একটু গরম করে খেলে অথবা পাতা থেঁতো করে একটু ভেজে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৩। শরীরের ক্ষত : শরীরের যেকোনো স্থানে ক্ষত হলে থানকুনি পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দ্বারা ক্ষত স্থান ধুয়ে দিলে উপকার হবেই। আর থানকুনি পাতার রস দিয়ে ঘি তৈরি করে সেই ঘি ক্ষতে লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ক্ষত শুকিয়ে যাবে।
৪। স্মরণ শক্তি : কোনো কিছু মুখস্থ করার পর আজ মনে আছে তো কাল মনে নেই। কোনোভাবেই মনে থাকে না। মনে করা যাচ্ছে না। স্মৃতি শক্তি হ্রাস পেয়েছে। স্মৃতি শক্তি দুর্বল। চিন্তা না করে আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে থানকুনি পাতার রস দুই-তিন তোলা, আধা কাপ দুধ এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে সেবন করুন বা করান উপকার পাওয়া যাবে। তবে এ সময় টক, ঝাল, লবণ, ঘি, ডিম খেতে নেই।
৫। অনিয়মিত স্রাব : অনিয়মিত ঋতু স্রাব হলে থানকুনি পাতার রস তিন-চার চা চামচ প্রতিদিন একবার করে কয়েকদিন খেলে ভালো হয়ে যাবে।
৬। দেহের লাবণ্য: থানকুনি পাতার রস পাঁচ-ছয় চা চামচ একটু গরম করে এক কাপ দুধের সাথে খেলে দেহের লাবণ্য ও কান্তি ফিরে আসে।
৭। চুল উঠা: দেহের অপুষ্টিজনিত কারণে মাথার চুল উঠে গেলে থানকুনি পাতার রস পাঁচ-ছয় চা চামচ একটু গরম করে এক কাপ দুধের সাথে খেলে চুল ওঠা বন্ধ হবে।
৮। থেঁতলে যাওয়া: কোনো স্থান আঘাতে থেঁতলে গেলে থানকুনি গাছ বেটে অল্প গরম করে থেঁতলানো জায়গায় প্রলেপ দিলে থেঁতলানো ভালো হয়ে যায়।
৯। বাচ্চাদের কথা বলতে দেরি : অনেক বাচ্চার কথা বলতে দেরি হয়। পরিষ্কার করে কথা বলতে পারে না। এ অবস্থায় এক চামচ থানকুনি পাতার রস সামান্য গরম করে ঠাণ্ডা হলে ২০-২৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে ঠাণ্ডা দুধের সাথে কিছুদিন খাওয়ালে উপকার হবে।
১০। ঘামের দুর্গন্ধ : যাদের বেশি ঘাম হয় এবং ঘামে দুর্গন্ধ তাদের থানকুনি পাতার রস ৫-৬ চা চামচ একটু গরম করে এক কাপ দুধের সাথে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
১১। পায়খানায় সমস্যা: কফ যুক্ত পায়খানা, বারবার পায়খানায় যেতে হয়। পেট পরিষ্কার হচ্ছে না, পেটে বায়ু জমা মাঝে মধ্যে মাথা ব্যথাও হয় এ অবস্থায় থানকুনি পাতার রস ৩-৪ চামচ সামান্য গরম করে কাঁচা গরুর দুধ মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
১২। পেটের পিড়ায় : থানকুনি পাতা বেটে ভর্তা বানিয়ে খেলে অথবা ঝোল রান্না করে ভাতের সাথে খেলে পেটের বিভিন্ন অসুখ, বদহজম, ডায়রিয়া, আমাশয় পেটব্যথা সেরে যায়। এর রস আলসার একজিমা রোগ সারাতেও উপকারী।


আরো সংবাদ



premium cement