২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সমস্যা সৃষ্টি করে লিভারে

মানবদেহে বছরে ৭৩ হাজার অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা ঢুকছে

- সংগৃহীত

মানবদেহে প্রতি বছরে ৭৩ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক (অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা) পেটে ঢুকছে। দৈনিক মানুষের শরীরে ঢুকছে গড়ে ২০০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক। এ হিসেবে বছরে ৭৩ হাজার প্লাস্টিক কণা পেটে যায়। প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার সবচেয়ে বড় উৎস বোতলজাত পানি। প্রতিটি মাইক্রোপ্লাস্টিকের আয়তন পাঁচ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট (০.২ ইঞ্চি)। বোতলজাত পানি ছাড়াও সামুদ্রিক মাছের পেটেও পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর প্লাস্টিক কণা। গবেষকেরা ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার মানুষের ১০ গ্রাম মলের মধ্যে গড়ে ২০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন।

গবেষণা দলের প্রধান অস্ট্রিয়ার মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি ড. ফিলিপ স্কোয়াবল ডেইলি মেইলকে (গবেষণাটি ডেইলি মেইলে ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে।) বলেন, এ ধরনের গবেষণা এটাই প্রথম। আমরা এর আগে যে সন্দেহ করেছিলাম তাই প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের পেটে অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা ঢুকছে। প্লাস্টিক বর্জ্য, সিনথেটিক ফাইবার, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার বস্তু থেকে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা হচ্ছে। ড. স্কোয়াবল বললেন, ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার কারণে মানুষের মধ্যে কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে তা এখনো অজানা। কিন্তু এগুলো থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হতে পারে এবং এগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্রতর কণাগুলো রক্ত প্রবাহে ঢুকে যেতে পারে। এতে করে মানুষের গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল রোগ হতে পারে। ক্ষুদ্রতর প্লাস্টিক কণাগুলো রক্ত প্রবাহে, লিম্ফেটিক সিস্টেমে এবং এমনকি লিভারেও ঢুকে যেতে পারে।

‘এখন আমাদের কাছে প্রথম প্রমাণটা যা আমরা পেযেছি তা হলো- মানুষের দেহে আমরা অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পেয়েছি। এটা নিয়ে আমাদের আরো গবেষণা করতে হবে যে, এসব মানবদেহে কী ধরনের ক্ষতি করতে পারে। ফিনল্যান্ড, ইটালি, দ্য নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া থেকে আটজন স্বেচ্ছাসেবক আমাদের কাছে এসেছেন। তাদের সবার মলেই শতাধিক প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে।’ এসব প্লাস্টিকের কণা প্যাকেটজাত খাবার ও পানীয়ের বোতল থেকেই এসেছে, যেগুলো পলিপ্রোপাইলিন অ্যান্ড পলিইথিলিন-টেরেথালেট দিয়ে তৈরি। ড. স্কোয়াবল বলেন, প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকের ১০ গ্রাম মল থেকে আমরা গড়ে ২০টি করে অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পেয়েছি।’ প্রতিটি ব্যক্তি দৈনিক ১০০ গ্রাম মল ত্যাগ করে এবং এতে ২০০টি প্লাস্টিক কণা পাওয়া যায়।

এভাবে বছরে একজন ব্যক্তির পেটে ৭৩ হাজার প্লাস্টিক কণা ঢুকে যায়। তিনি বলেন, পলিইথিলিন থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি হয় এবং পলিইথিলিন টেরেথালেট (প্যাট প্লাস্টিক বোতল) থেকে মনুষ্য মলে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। ড. স্কোয়াবলের গবেষক দল অবশ্য পেটে আরো অন্যান্য সাত ধরনের প্লাস্টিক কণা পেয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে যে- একজন মানুষ শেলফিশ, ট্যাপ ওয়াটার, লবণ থেকেও যথাক্রমে ১১ হাজার, পাঁচ হাজার ৮০০ এবং এক হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক খাচ্ছে বছরে। গবেষকেরা বলছেন, দূষিত বাতাসেও মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। শ্বাস নেয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ বছরে ৭০ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক নিচ্ছে নিজের শরীরে।

গবেষক দল বোতলজাত পানি পানকারীদের দেহে সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন। এক লিটার বোতলজাত পানি থেকে গড়ে ১১৮ থেকে ৩২৫টি কণা পাওয়া গেছে। এভাবে বছরে একজন মানুষ বোতল থেকে ৯০ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক পাচ্ছে। উপরে উল্লিখিত কারণ ছাড়াও আবহাওয়াগত কারণে, ক্ষয় হয়ে যাওয়ায়, প্লাস্টিকের ভাঙা গড়া থেকে প্রকৃতিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করছে এবং এসব কণা শেষে মানুষের দেহে ঢুকছে।


আরো সংবাদ



premium cement