২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ডেঙ্গু : ইতিহাসের ফিরে আসা রোগ

ডেঙ্গু : ইতিহাসের ফিরে আসা রোগ - ছবি : সংগ্রহ

প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ পর্যায়ে। যে কোন বছরের ডেঙ্গুর তুলনায় এবারের ডেঙ্গুর বৈশিষ্ট্যও কিছুটা ভিন্ন।
জনমনে বিরাজ করছে এক ভয়াবহ আতঙ্ক। এ নিয়ে লিখেছেন ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল

ডেঙ্গু ও ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসের যেকোনো একটির সংক্রমণে ঘটে। এডিস, বিশেষ করে এডিস ইজিপটাই মশার কামড়ে ভাইরাসটি মানব শরীরে প্রবেশ করে। প্রতি বছর আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে কয়েক শ’ হাজার ডেঙ্গু এবং ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভারে আক্রান্ত রোগীর রিপোর্ট পাওয়া যায়। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোতে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর কথা জানা যায়।

ডেঙ্গুর সবচেয়ে মারাত্মক ধরন ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার। এটি ১৯৮১ সালে কিউবায় মহামারীর আকারে দেখা দেয় এবং ১৯৮৯ সালে দেখা দেয় ভেনিজুয়েলায়।
ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার সবচেয়ে বেশি ঘটেছে দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট মতে, ১৯৮১ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে সাত লাখ ৯৬ হাজার ৩৮৬ জন এবং ডেঙ্গুর কারণে মারা গেছে ৯ হাজার ৭৭৪ জন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ডেঙ্গু মহামারী আকারে প্রথম ঘটে ফিলাডেলফিয়ায় ১৭৮০ সালে। দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকার বিভিন্ন অংশে ডেঙ্গু মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে ঊনিশ এবং কুড়ি শতকে। ডেঙ্গু মহামারী আকারে দেখা দেয় লুসিয়ানায় ১৯৪৫ সালে। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ সালে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ব্যাপক হারে এডিস ইজিপটাই মশা নির্মূল করার মধ্য দিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু সাফল্যের সাথে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকায় এই মশার প্রজাতি নির্মূল করা
সম্ভব হয়নি।

১৯৮০ এবং ১৯৮৬ সালে আমেরিকার টেক্সাসে ডেঙ্গু ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। পরে দেখা গেছে, এই ডেঙ্গুর কারণ হলো এডিস এলবোপিকটাস মশা যা এশিয়া থেকে এসেছে। মশার এই প্রজাতি আবিষ্কৃত হয় টেক্সাসে ১৯৮৫ সালে। এভাবে ডেঙ্গু হওয়ার কারণ হলো মশাগুলোর এক দেশ থেকে অন্য দেশে অনুপ্রবেশ।

১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আমেরিকা এবং হাওয়াইতে ১ হাজার ৪৫৭ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয় এবং ২৭৬ জনের রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করা হয়।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রথম দেখা দেয় ১৯৬৪ সালে। রোগ নির্ণয় সম্ভব হয়নি বলে তখন এটাকে ‘ঢাকা ফিভার’ বলা হতো। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে আবার ডেঙ্গু দেখা দেয় এরপর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে অনেকে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে নতুন রোগ চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষণীয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগ ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। এ বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং যে কোনো বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু আরও প্রাণঘাতী। এ বছর ১লা জানুয়ারি থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ২৪ হাজার ৮০৪ জন। সরকারি হিসেবে মারা গেছে ১৮ জন, যদিও বেসরকারি হিসেবে ৭১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এবারই প্রথম ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন বিভাগে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৪২৯ জন।

ইতিহাস
ডেঙ্গুর প্রাথমিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, অন্যান্য জ্বরজনিত অসুস্থতার সাথে ডেঙ্গু জ্বরের মিল থাকার কারণে আলাদাভাবে ডেঙ্গুকে নিয়ে চিন্তা করা হয়নি। ডেঙ্গুর মতো মহামারী প্রথম ঘটে ১৭৭৯ সালে মিসর এবং জাভায়। তবে সত্যিকার অর্থে তার জন্য দায়ী ছিল চিকুনগুনিয়া ভাইরাস। ডেঙ্গু কিংবা ডেঙ্গুসদৃশ মহামারীর প্রথম রিপোর্ট পাওয়া যায় ঊনিশ থেকে এবং কুড়ি শতকের প্রথম দিকে। এই মহামারী ঘটে আমেরিকা, দক্ষিণ ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াতে। ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর এবং ক্যারিবিয়ান সাগরের কিছু কিছু দ্বীপেও ডেঙ্গুর সন্ধান মেলে। এসব মহামারী আকারে ডেঙ্গু ছিল প্রাণঘাতী নয় এমন জ্বরজনিত অসুস্থতা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর সাথে যেসব উপসর্গ ছিল তা হলো র‌্যাশ এবং হয় মাংসপেশিতে ব্যথা নতুবা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা। ডেঙ্গুর কারণে প্রথম মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে ১৮৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এবং ১৯২৮ সালে গ্রিসে। সে সময় এক হাজারেরও বেশি লোকের প্রাণহানি ঘটে। হেমোর‌্যাজিক ডেঙ্গু অর্থাৎ ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণ ঘটনার মধ্যে রয়েছে পাকস্থলী ও অন্ত্রে রক্তক্ষরণ। সেটা মহামারী আকারে প্রথম ঘটে ১৯২২ সালে টেক্সাস ও লুসিয়ানায়। বিশ শতকের প্রথম ভাগে ডেঙ্গু উপসর্গ এত মারাত্মক ছিল না। তখন সাধারণ জ্বর এবং মাঝে মাঝে রক্তক্ষরণের উপসর্গ থাকত। ত্বকে লাল লাল দাগ, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাঢ়ি দিয়ে রক্ত পড়া এবং মেয়েদের যোনিপথে রক্ত পড়া উপসর্গ থাকলেও মৃত্যুর ঘটনা খুব কম ছিল। ১৯৪৪ সালে ডক্টর আলবার্ট সাবিন ডেঙ্গুর ভাইরাস শনাক্ত করেন এবং ডেঙ্গু- ১ ও ডেঙ্গু-২ নামে দুটো ভাইরাসকে পৃথক করেন। ১৯৫৬ সালে হ্যামন এবং তার সহকর্মীরা আরো দুটো নতুন ডেঙ্গু ভাইরাসকে শনাক্ত করেন, যাদের নাম দেয়া হয় ডেঙ্গু-৩ এবং ডেঙ্গু-৪। এ সময় ফিলিপিন্সের শিশুদের মারাত্মক আকারে হেমোর‌্যাজিক ডেঙ্গু দেখা দেয়। হেমোর‌্যাজিক ডেঙ্গুর কারণ রোগী শকে চলে যায়, রক্তচাপ কমে যায়। রোগীর মৃত্যু ঘটে। কবে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত করা হয়? ডেঙ্গু প্রথম শনাক্ত করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগর উপকূল অঞ্চলে। ডক্টর আলবার্ট সাবিন ইউএস আর্মি কমিশনে এ সময় ডেঙ্গু এবং স্যান্ডফ্লাই ফিভারের ওপর কাজ করতে গিয়ে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত করেন।

ডেঙ্গুর প্রাকৃতিক বাহক কী?
ডেঙ্গু ভাইরাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহক হলো এডিস মশা ও মানুষ। ডেঙ্গুর চার ধরনের ভাইরাসই জরাজীর্ণ এলাকায় এডিস ইজিপটাই মশা থেকে মানুষ এবং মানুষ থেকে
এডিস ইজিপটাই মশাতে সঞ্চালিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ভাইরাসগুলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে বিশেষ করে বিমান ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে। ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রথম বাহক বানর ছিল নাকি মশা ছিল তা জানা যায়নি। তবে এটা জানা গেছে, ডেঙ্গু ভাইরাস এশিয়ার জঙ্গলগুলোতে মশা-বানর-মশা চক্রাকারে আবর্তিত হয়েছে। তাই বলে বর্তমান বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে জঙ্গলের এই ধারাটির কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে- সাক্ষ্যপ্রমাণ সে কথা বলতে নারাজ।

ডেঙ্গু নিয়ে মনে যত প্রশ্ন

প্রশ্ন : ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার আসলে কী?
উত্তর : মানুষের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটলে সাধারণ ভাইরাল ফিভারের মতো সামান্য উপসর্গ থেকে মারাত্মক রক্তক্ষরণজনিত অসুস্থতা এবং মৃত্যু হতে পারে। ডেঙ্গুর কারণে এই মারাত্মক রক্তক্ষরণজনিত অসুস্থতাকেই ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার এবং ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ বলে।

প্রশ্ন : কত ধরনের ডেঙ্গুর কথা জানা যায়?
উত্তর : ডেঙ্গুর চার ধরনের ভাইরাসের কথা জানা যায়। এগুলো হলো- ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪।

প্রশ্ন : এসব ধরন কিভাবে আলাদাভাবে বোঝা যায়?
উত্তর : চার ধরনের ভাইরাসই ‘ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার’ বা ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ ঘটাতে পারে। তবে তীব্র অসুস্থতার ক্ষেত্রে সচরাচর ডেন-২ এবং ডেন-৩ এর সম্পৃক্ততা লক্ষ করা যায়।

প্রশ্ন : ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক এত ভয়াবহ কেন?
উত্তর : কারণ ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভারে রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যায় (প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে ১ লাখের কম হয়)। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে ২৪ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সময়টা সঙ্কটাপন্নকাল। এ সময় রক্তক্ষরণজনিত উপসর্গ দেখা দেয়। রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। শরীরে পর্যাপ্ত ফ্লুইড না দিলে রোগী শকে চলে যায় এবং মৃত্যু ঘটে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণজনিত উপসর্গ দেখা যায় ত্বকে। তবে নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাঢ়ি দিয়ে রক্ত পড়া, রক্তবমি হওয়া, পায়খানার সাথে রক্ত পড়া এবং প্রস্রাবের সাথে রক্ত পড়া প্রভৃতি উপসর্গও ঘটে থাকে।

প্রশ্ন : শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশের কত দিন পর রোগের উপসর্গ প্রকাশ পায়?
উত্তর : শরীরে ভাইরাস প্রবেশের খুব অল্প সময়ে যেমন তিন দিনের মধ্যে আবার একটু বেশি সময় নিয়ে যেমন ১৪ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর কিংবা ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক জ্বরে উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। তবে সাধারণ সময় হলো চার থেকে ছয় দিন।

প্রশ্ন : ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত শরীরের কোন কোন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
উত্তর : ডেঙ্গু ভাইরাস রক্তে প্রবেশ করে রক্তকে দূষিত করে ফেলে। ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের ক্ষেত্রে সাধারণত লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত জটিলতায় ফুসফুস, কিডনি, প্লীহা এবং হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ডেঙ্গু সেরে গেলে ক্ষত চলে যায়।

প্রশ্ন : ডেঙ্গুরোগী সুস্থ হওয়ার পর তার কাছ থেকে কি অন্যের মধ্যে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে?
উত্তর : না। ডেঙ্গুরোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলে তার রক্তে জীবাণু অবশিষ্ট থাকে না।

প্রশ্ন : কোনো চিকিৎসা কিংবা ভ্যাক্সিন আছে?
উত্তর : না। এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা বা ভ্যাক্সিন পাওয়া যায়নি। তবে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অবস্থিত মহিদল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের জন্য এক ধরনের ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন করেন। অবশ্য বর্তমানে এটি পরীক্ষাধীন রয়েছে। সাধারণের ব্যবহারের জন্য ওই ভ্যাক্সিন কবে বাজারে পাওয়া যাবে তা অনিশ্চিত।

প্রশ্ন : ডেঙ্গুরোগী একবার সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলো। কিভাবে এটা ঘটল?
উত্তর : একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে এবং সুস্থ হয়ে উঠলে যে ভাইরাস কর্তৃক সে আক্রান্ত হয়েছিল ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগীর আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, আরো তিন ধরনের ভাইরাস রয়েছে যারা ডেঙ্গুর উদ্ভব ঘটায়। রোগী কোনো একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলেও অন্য তিনটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় না। ফলে রোগীর আরো তিনবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ একজন মানুষ তার জীবনকালে চারবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। এই চারবার সে চার ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।

প্রশ্ন : ডেঙ্গু মহামারী হিসেবে দেখা দেয়ার শর্তগুলো কী?
অর্থাৎ কিভাবে বুঝব ডেঙ্গু মহামারী রূপ ধারণ করেছে।

উত্তর : যে এলাকায় ডেঙ্গু দেখা দেয় ওই এলাকার ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রত্যেকের রক্তে যদি একই সেরোটাইপ ভাইরাস পাওয়া যায় এবং ভাইরাসের একটি এপিডেমিক স্ট্রেইন থাকে। ডেঙ্গু মহামারী হিসেবে দেখা দেয়ার শর্ত হলো তিনটি। এক. কার্যকর এপিডেমিক মশা, দুই. বিশেষ সেরোটাইপ ভাইরাস এবং তিন. ভাইরাসের এপিডেমিক স্ট্রেইন। এসব ছাড়া আরো কিছু কারণে ডেঙ্গু মহামারী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। যেমন- লোকসংখ্যা বেশি কিন্তু পরিচ্ছন্নতার অভাব, অপর্যাপ্ত বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত মশক নিধনে ব্যর্থতা প্রভৃতি বিষয় মহামারীর পথ উন্মুক্ত করে দেয়।

প্রশ্ন : ডেঙ্গু বিষয়ে কোনো আন্তর্জাতিক বিধি আছে কি?
উত্তর : ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার সম্পর্কে কোনো আন্তর্জাতিক বিধান নেই। ইয়োলো ফিভারের প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ কৌশলের অংশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে এবং এডিস এজিপটাই মশাক্রান্ত দেশগুলো থেকে বিমান উড্ডয়নকালে সেখানে এডিস এজিপটাই মশা নিয়ন্ত্রণের একটি গাইডলাইন প্রবর্তন করেছে। এ নিয়ে মতানৈক্য আছে।

প্রশ্ন : ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে আলাদা করে রাখার প্রয়োজন আছে কি?
উত্তর : ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভারে আক্রান্ত রোগীকে আলাদা ঘরে রাখার প্রয়োজন নেই কারণ এটা ছোঁয়াচে নয়। একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে এটা সরাসরি যেতে পারে না। তবে ডেঙ্গু হেমোর‌্যাজিক ফিভার সন্দেহ হলে রোগীকে এমন ঘরে রাখা উচিত যেখানে এডিস এজিপটাই মশা নেই। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই মশারির ভিতরে রাখতে হবে। নতুবা এডিস মশা রোগীকে কামড়ানোর পরে সংক্রমিত হয়ে সেই মশা সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দিলে উক্ত সুস্থ ব্যক্তিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা। ফোন: ০১৭১৬২৮৮৮৫৫

 


আরো সংবাদ



premium cement