২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দাঁতের যতœ বিয়ের আগে

-

বিয়ে মানুষের জীবনে একটি নতুন ধাপ। বিয়ে মানে দু’টি মনের ব্যবধানকে শূন্যে নিয়ে এসে সামাজিকভাবে একে অপরকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
আগের দিন গুরুজনেরা কনে পছন্দ করতেন হাঁটা-চলা পড়াশোনা (কলমা জানা) ও গায়ের রঙ দেখার মাধ্যমে। দিন পাল্টেছে। এখন পাত্রপাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতাই এখন বেশি প্রাধান্য দেয়। তারপরও মুখাবয়ব যত সুন্দরই হোক না কেন, হাসতে বা কথা বলতে গিয়ে যদি দেখা যায় বর অথবা কনের ভাঙা দাঁত, ফাঁকা দাঁত, মুখে দুর্গন্ধ, কালো দাগযুক্ত দাঁত প্রভৃতি তাহলে উভয়ের পছন্দের মধ্যে ভাটা পড়তেই পারে। এজন্য বিয়ের আগে বর-কনের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মুখের সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করতে হবে।
যেমন বরের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো দেখায়Ñ
* ছেলেরা স্বভাবতই ধূমপান করে, ফলে দাঁতে কালো দাগ পড়ে। অতিরিক্ত চা-কফি পানেও এটি হতে পারে।
* মুখে দুর্গন্ধ থাকতে পারে।
* দাঁতে পাথর জমতে পারে।
* পানের দাগ থাকতে পারে।
* ভাঙা দাঁতের উপস্থিতি।
* দাঁতে ক্যারিজ থাকতে পারে।
কনের বেলায় থাকতে পারেÑ
* মাড়ি লালচে ও ফোলা ভাব।
* মুখে দুর্গন্ধ।
* আঁকা-বাঁকা, ফাঁকা দাঁত থাকতে পারে।
* বিবর্ণ দাঁত।
উল্লিখিত সমস্যাগুলো বর-কনে উভয়েই থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে সমস্যানুযায়ী প্রতিকারও আছে যেমনÑ
১। ধূমপানসহ অতিরিক্ত চা-কফি পানের ফলে দাঁতে কালচে দাগের সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে স্কেলিং, স্টেইন রিমুভিং ও পলিশিংয়ের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত দাঁত দূর করাতে হবে।
২। মুখের দুর্গন্ধের নানা কারণ আছে। যেমনÑ
* কিছু খাবার আছে যা খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয় যেমন বেশি মসলাদার খাবার, কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন খাওয়া প্রভৃতি।
* বহুদিন যাবৎ দাঁতে পাথর জমলে।
* মাড়িতে ইনফেকশন থাকলে।
* দীর্ঘদিন যাবৎ ফুসফুসের ইনফেকশনে ভুগলে।
* সাইনুসাইটিস থাকলে।
* দাঁতে ক্যারিজ থাকলে।
* মুখে আলসার থাকলে।
* মুখে ফাংগাল ইনফেকশন থাকলে প্রভৃতি।
ওই সমস্যাগুলো যদি থেকে থাকে তবে তার যথাযথ চিকিৎসা ডেন্টাল সার্জনের মাধ্যমে করিয়ে নিতে হবে।
* দাঁতে পাথর জমলে অবশ্যই স্কেলিং-পলিশিং করিয়ে নিতে হবে।
* দাঁতে পানের দাগসহ কঠিন কোনো দাগ থাকলে ব্লিচিং করিয়ে নেয়া যেতে পারে।
* মুখে ভাঙা-ফাটা ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত থাকলে ক্যাপ বা ক্রাউন করে নিলে হারানো সৌন্দর্য পুরোপুরি ফিরে পাওয়া সম্ভব।
* চোয়ালে কোথাও দাঁত না থাকলে ব্রিজের মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপন করে নিতে হবে।
* দাঁতে ক্যারিজ থাকলে তার অবস্থান, বিস্তৃতি ও রোগের ইতিহাস জেনে দরকার হলে এক্স-রে করে ফিলিং বা রুট ক্যানেল ক্যাপ করে দাঁতের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
* সুন্দর চেহারা, গায়ের রঙ ভালো ত্বক সবই উপস্থিত, কিন্তু হাসলেই দেখা যায় লাল টকটকে ফোলা মাড়ি তখন সবই মাঠে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে মাড়ির চিকিৎসা করাতে হবে।
* আঁকা-বাঁকা ফাঁকা দাঁতের চিকিৎসা করাতে হবে। যেহেতু এ চিকিৎসা একটু ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষÑ তাই বিয়ের কমপক্ষে এক দেড় বছর আগে থেকে এ চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
* অনেক রোগীই বলেন, ‘দিনে চারবার দাঁত ব্রাশ করি তবুও দাঁত হলুদ, নিষ্প্রাণ’, আর কি করলে দাঁত সাদা চকচকে সুন্দর হবে।’ আসলে বিবর্ণ দাঁতের অনেক কারণ আছে। যেমন-
১. আঘাতের ফলে সৃষ্ট বিবর্ণ দাঁত।
২. টেট্রাসাইক্লিন পিগমেন্টেশন।
৩. জনগত কারণ প্রভৃতি।
সমস্যা ও রোগের ইতিহাস জেনে দাঁত পরীক্ষা করে বিবর্ণ দাঁতে বিভিন্ন রকম চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। যেমনÑ লেমিনেটিং ফিলিং, ক্রাউন প্রভৃতি হতে পারে। এ ছাড়াও দাঁতে ব্লিচ করা যেতে পারে। এতে দাঁত হবে ঝকঝকে সুন্দর-সাদা, বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রায়ের দাঁতও ছিল হলদেটে বিবর্ণ। যথাযথ চিকিৎসার পর এখন তার দাঁত সুন্দর।
* দাঁতে ব্যথা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যথার কারণ খুঁজে যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে।
* এছাড়াও হেপাটাইটিস, এইডস প্রভৃতি পরীক্ষা করে নেয়া যেতে পারে। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। একে পরিপূর্ণ রাখতে সুস্থ দাঁত ও মাড়িও বাদ পড়ে না। বিয়ের আগে হবু দম্পতির শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মুখের সুস্থতাও অত্যন্ত জরুরি। মুখের যেকোনো সমস্যায় যথাযথ চিকিৎসার জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। বছরে অন্তর দু’বার আপনার ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিন।
লেখিকা : ডাইরেক্টর ও ডেন্টাল সার্জন, নাহিদ ডেন্টাল কেয়ার, ১১৭/১, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
ফোন : ০১৭১২-২৮৫৩৭২


আরো সংবাদ



premium cement