২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইফতারিতে খেজুর অনন্য

-

মহান আল্লাহ আমাদের কল্যাণের জন্য তার সমগ্র সৃষ্টিজগতকে নিয়োজিত করেছেন। মানুষের উপকারের জন্য তিনি দিয়েছেন সবুজ বৃক্ষ, নানা বর্ণের ফুল ও ফল। আল্লাহর দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে খেজুর অতি পরিচিত এবং সাধারণ একটি ফল। কিন্তু সাধারণ এই ফলের বর্ণনা কুরআনে এসেছে বিশেষভাবে। এমনকি একে বেহেশতবাসীদের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমনÑ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘সেখানে আছে ফলমূল, খেজুর ও আনার। অতএব তোমরা উভয়ে তোমার পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?’ (সূরা আর-রহমান) আমাদের দেশে পবিত্র রমজান মাসে ইফতার ও সাহরিতে মুখরোচক অনেক খাবার বাসায় যেমন তৈরি হয়, তেমনি বাজারে নানা ধরনের রকমারি খাবার সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আর এসব খেয়ে আমাদের শুরু হয় পেটজ্বালা, বমি, পাতলা পায়খানা। পরে দেখা যায়, পরদিন অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। সাধারণত আমরা সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময় অনেক কিছুই খেতে ইচ্ছা করে। আমরা মুখরোচক বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপসহ ভাজাপোড়াজাতীয় খাবার দিয়ে ইফতার করি। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের মতে, এসব ভাজাপোড়াজাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রাসূলে করিম সা: বলেন, ‘তোমরা খেজুর দিয়ে ইফতার করো। কেননা, তাতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না থাকে, তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করো। পানি পাক ও পবিত্র।’ রাসূল সা: ইফতারিতে শুধু খেজুর ও পানির কথা বললেন কেন? এ বিষয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখেছেন। প্রমাণিত হয়েছে, খেজুর শক্তিতে ভরপুর ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। খেজুর একটি নন্দিত ফল। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই এ ফলটি পুষ্টিকর হিসেবে বেশ সমাদৃত। মহান আল্লাহ সূরা আন নাহলের ৬৭ নম্বর আয়াতে খেজুর ও আঙ্গুরের কথা উল্লেখ করেছেন। ‘খেজুর বৃক্ষ ও আঙুর ফল থেকে তোমরা উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাকো, নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে। মক্কা ভূখণ্ডে আজওয়া নামক এক বিশেষ খেজুর সম্পর্কে মহানবী সা: বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের ফল। এর মধ্যে বিষের নিরাময় রয়েছে’ (তিরমিজি)। রাসূল সা:-এর প্রিয় সাহাবি সাআদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা: বর্ণনা করেনÑ রাসূলে পাক সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। চলুন তাহলে জেনে নেই খেজুরের কিছু বিস্ময়কর স্বাস্থ্য-উপকারিতা সম্পর্কেÑ
পুষ্টি উপাদান : প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে থাকে ৬.৭ গ্রাম আঁশ, যা প্রতিদিনের চাহিদার প্রায় ২৭ শতাংশ। ৬৯৬ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, যা প্রতিদিনের চাহিদার ২০ শতাংশ। ০.৪ মিলিগ্রাম কপার, যা প্রতিদিনের চাহিদার ২৮ শতাংশ। ০.৩ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যা প্রতিদিনের চাহিদার ১৫ শতাংশ। ০.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬, যা প্রতিদিনের চাহিদার ১২ শতাংশ। ৬৬.৫ গ্রাম চিনি, যা প্রতিদিনের চাহিদার শতভাগ পূরণ করে। পর্যাপ্ত আঁশ থাকায় হজমে সহায়ক, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। নিয়মিত খেজুর খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। যাদের পাইলসের সমস্যা আছে, তারা খেজুর খেলে উপকার পাবেন। খেজুরে অনেক ধরনের খনিজ উপাদান রয়েছে। তাই এটি শরীরের খনিজ ঘাটতি বা ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স কমায়। খেজুর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এর ম্যাগনেসিয়াম এ কাজটি করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এতে থাকা পটাসিয়ামের কারণে হার্ট ভালো তাকে। খেজুর স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুরে থাকা ম্যাগনেসিয়ামের কারণে স্ট্রোক আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৯ শতাংশ কমে। খেজুর খেলে গ্যাস্ট্রিক আলসার উপসর্গের উপশম হয়। লিভারের অসুখ-বিসুখও কম হয়। খেজুরে থাকা সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি উপাদানের কারণে শিশুদের দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে। আথ্রাইটিস ও আয়রন স্বল্পতাজনিত অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমায়। ডায়রিয়াতেও খেজুর শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া খনিজ লবণের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। খেজুর সোডিয়াম মুক্ত, চর্বি মুক্ত বিশেষ করে কোলেস্টেরল মুক্ত এবং আঁশের একটি ভালো উৎস। খেজুর হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন পাঁচ-ছয়টি খেজুর খেলে প্রাত্যহিক আঁশজাতীয় খাবারের চাহিদা পূরণ হয়। এটা শরীরে ১৪ শতাংশ আঁশজাতীয় খাবারের জোগান দেয়। খেজুর হার্ট ও ডায়াবেটিসের রোগীরাও ইফতারিতে খেতে পারেন। খেজুরে প্রাপ্ত শর্করা দেহে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে দেহের মধ্যে শোষিত হয়। খেজুরে প্রচুর ভিটাসিন-বি কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য ভিটামিন আছে। খেজুর মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে মাত্র একটি। বিশ্বনবী সা: খেজুর খুব বেশি পছন্দ করতেন। মোট কথা, খেজুরের উপকারিতার শেষ বা সীমা নেই। খেজুর আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ নেয়ামত। খেজুরে উপকারিতার কেবল কিছু দিন আগে আধুনিককালের বিজ্ঞানীরা জানতে সক্ষম হয়েছেন, যা কুরআনে নির্দেশিত হয়েছে অনেক বছর আগে। বিজ্ঞান যত বেশি বিকশিত হচ্ছে, কুরআনের সত্যতা ততই প্রমাণিত হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের পবিত্র কুরআন শুদ্ধরূপে পাঠ করার তৌফিক দিন।


আরো সংবাদ



premium cement
শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট ‘আমার শিশু মেয়েটির যে সর্বনাশ সে করেছে’ বান্দরবানের ৩ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি

সকল