২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাইলস রোগে ইউনানি চিকিৎসা

-

রিয়াজ, একজন ছাত্র। বয়স ২০ বছর। বিগত তিন থেকে চার বছর সে পেটের আমাশয় রোগের পাশপাশি, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া সমস্যায় ভুগছিলেন, তারপর বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসক তার রোগের উপসর্গ ইতিহাস শুনে এবং দৈহিক পরীক্ষা করে জানালেনÑ তার দ্বিতীয় পর্যায়ের পাইলস বা হেমোরয়েড হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসক তাকে মুখে খাওয়ার কিছু পাইলসের ওষুধ দিলেন এবং পায়ুপথে লাগানোর একটা মলম দিলেন। এতে তিনি রোগের কিছুটা উন্নতি পেলেও পুরোপুরি সেরে উঠলেন না। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ইউনানি চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। চিকিৎসকের পরার্মশক্রমে প্রায় দুই থেকে তিন মাস হামদর্দের এ সমস্যার চিকিৎসা গ্রহণ করলেন। তারপর থেকে তার রক্তবিহীন স্বাভাবিক পায়খানা হয় এবং পায়ুমুখে বাহ্যিক আর কোনো ফুলাও অনুভূত হয় না। রিয়াজের মতো বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৫০ বছরের নিচে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে পাইলসের উপসর্গ বিভিন্ন মাত্রায় দেখা যায়।
হেমোরয়েড় সাধারণত পায়ুপথে ত্বকের নিচের ও মলাশয়ের ভেতরে এক ধরনের রক্তজালিকা। যখন পায়ুপথের এসব শিরার সংক্রমণ এবং প্রদাহ হয়, চাপ পড়ে, তখন হেমোরয়েড বা পাইলস সৃষ্টি হয়। সাধারণ কথায় যাকে অর্শ রোগ বলা হয়। আর ইউনানি পরিভাষায় বাওয়াসির বলে।
বাওয়াসির বা হেমোরয়েড বা অর্শ রোগের অবস্থান সাধারণত দুই ধরনের যথাÑ
* পায়ুপথের বহিঃ অর্শ রোগ
* পায়ুপথের অন্তঃ বা ভেতরের অর্শ রোগ
* আবার কখনো দুটো প্রকার বা অবস্থা একসাথেও থাকতে পারে।
পায়ুপথের ভেতরের অর্শ রোগ বা হেমোরয়েড ফুলে পায়ুমুখের বাইরে বের হয়ে আসার ডিগ্রির ভিত্তিতে চারটি পর্যায় বিভক্ত যথা :
প্রথম পর্যায়, (হেমোরয়েড ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে না, প্রলেপস হয় না)। দ্বিতীয় পর্যায়, (পায়খানার পর হেমোরয়েড ফুলে বাইরে বের হয়ে এবং তারপর আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়)। তৃতীয় পর্যায়, (হেমোরয়েড ফুলে বাইরে বের হয়ে এবং নিজে ঠিক করতে হয়। চতুর্থ পর্যায়, (হেমোরয়েড ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে বা প্রলেপস হয়ে এবং তা আর নিজে ঠিক করা যায় না)
পাইলসের (বাওয়াসির) প্রধান কারণগুলো হচ্ছেÑ দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা, ক্রনিক ডায়রিয়া, মলত্যাগে দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। এ ছাড়া পারিবারিক ইতিহাস, আশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ভারী মালপত্র বহন করা, স্থূলতা, কায়িক শ্রম কম করা, গর্ভকালীন পায়ুপথে যৌনক্রিয়া, যকৃত রোগ বা লিভার সিরোসিস ইত্যাদি কারণে রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সর্বোপরি পোর্টলি ভেনাস সিস্টেমে কোনো ভাল্ব না থাকায় উপরিউক্ত যেকোনো কারণে পায়ু অঞ্চলে শিরাগুলোতে চাপ পড়ে, ফলে হেমোরয়েড সৃষ্টি হয়।
অর্শ রোগে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হচ্ছেÑ পায়ুপথের অন্তঃ বা ভেতরের অর্শ রোগে সাধারণত তেমন কোনো ব্যথা বেদনা, অস্বস্তি থাকে না। অন্যদিকে পায়ুপথের বহিঃ অর্শ রোগেÑ পায়ুপথ চুলকায়, বসলে ব্যথা করে, পায়খানার সাথে টকটকে লাল রক্ত দেখা যায় বা শৌচ করা টিস্যুতে তাজা রক্ত লেগে থাকে, মলত্যাগে ব্যথা লাগা, পায়ুর চারপাশে এক বা একের অধিক থোকা থোকা ফোলা থাকে।
চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করে ও রোগীর উপসর্গ শুনেই অর্শ রোগ শনাক্ত করতে পারবে। এ ছাড়া পায়ুনালীর সমস্যাগুলো খুব খারাপ কি না বা অন্য কোনো রোগ আছে কি না তা জানতে অ্যানোস্কপি বা সিগময়ডস্কপি বা কলোনস্কপি পরীক্ষা, মলের লুকায়িত রক্ত নির্ণয় পরীক্ষা (ওবিটি), মলের আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা করাতে পারেন।
একটা কথা আমরা সবাই জানি, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম, অর্শ রোগ যেহেতু জীবনধারা ও খাদ্যাভাসের সাথে অনেকাংশে জড়িত। তাই শৃঙ্খলিত জীবন যাপনই রোগ প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় তথা প্রথম মাধ্যম। তাই নিয়ম করে অতিরিক্ত কোথ না দিয়ে সাবলীলভাবে মলত্যাগ করা, যেগুলো ফল খোসাসহ খাওয়া যায়, তা খোসাসহ খাওয়া। আশযুক্ত খাবার শাকসবজি বেশি খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা, নিয়মিত ব্যয়াম করা, লাল গোশত পরিহার করুন, প্রাথমিক অবস্থায় উষ্ণ পানি এবং ক্রনিক বা রোগ পুরনো হলে শীতল পানিতে নিতম্ব স্নান করতে পারেন।
অর্শ রোগ প্রতিকারের আগে মূল লক্ষ্য হবে অর্শ রোগ হওয়ার মূল কারণগুলো শনাক্ত করে তা প্রতিরোধ করা। অর্শ রোগ প্রতিকারে যেসব ভেষজ উপাদান কার্যকর তা হচ্ছেÑ বাসক, থানকুনি, আমলকী, হরিতকি, মেহেদি পাতা, ইসবগুল, নিমপাতা ও নিমতেল, ভাংপাতা, মুকিল, জিংগবিলোবা।
অর্শ রোগকে রোগের ধরনভেদে চারটি ডিগ্রিতে ভাগ করে এর পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ডিগ্রির সাধারণত ওষুধ দিয়ে সারে। রক্তপাতযুক্ত অর্শ রোগে বাসক পাতার রস ১ চামচ করে দিনে তিনবার সেবন করুন।
অথবা হরিতকি ওই এক চামচ পরিমাণ দৈনিক একবার গরম পানিসহ সেবন করুন।
সাতটি নিমফুল বা নিম বীজের মজ্জা পানিসহ সকালে সেবন করুন। ইসবগুল এক চামচ পরিমাণ পানিসহ রাতে সেবন করুন। আর ইসবগুল, নিমপাতা ও নিমতেল, মুকিল এ-জাতীয় বিভিন্ন ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি ইউনানি ওষুধ ট্যাবলেট টোনালেক্স, হ্যানরয়েড, হ্যানরয়েড বি, কবি, মুকিল, মাজুন ওশবা, সফুফ ইন্দেমালি, ট্যাবলেট পিবলিউ (বন্দিশ খুন) হামদর্দের ক্লিনিকগুলো থেকে চিকিৎসকের পরার্মশ মতো খেতে পারেন। এ ছাড়া অর্শ রোগ যদি ভেষজ ওষুধ যা অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ও প্রতিরোধ চিকিৎসায় না সারে, তাহলে একজন কলোরেক্টাল সার্জনের পরামর্শ মতো চিকিৎসা নিতে পারেন। যদি এ রোগ ডায়াগনোসিস না করানো হয় বা চিকিৎসা না নেয়া হয়, তাহলে দেহ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে পারে, পায়ুপথে ক্যান্সার হতে পারে।
তাই আসুন, আমরা প্রাকৃতিকভাবে অর্শ রোগ প্রতিরোধ করে, চিকিৎসা নেই, অর্শ রোগজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দূর করি। এতে অর্শ রোগজনিত অস্ত্রোপচার/সার্জিক্যাল/শল্য চিকিৎসা বা খরচ যেমন অনেক কমবে, তেমনি আমাদের জীবন হবে সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দময়।
লেখক : লেকচারার, কমিউনিটি মেডিসিন, হাকিম সাঈদ ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, নিমতলী, ঢাকা।
ফোন : ০১৬৭৮৭৬৪৬৬০


আরো সংবাদ



premium cement
বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের

সকল