২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

যেসব কারণে শিশুরা কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে

যেসব কারণে শিশুরা কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে - ছবি : সংগ্রহ

দেশে ৫০ হাজার শিশু কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর বাইরে আরো দেড় কোটি বিভিন্ন বয়সী মানুষ কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজন কিডনিজনিত রোগে মারা যাচ্ছেন। এত অধিকসংখ্যক মানুষ কিডনি জটিলতায় ভুগলেও কম লোকই এ বিষয়ে সচেতন। তাছাড়া কিডনি এমন একটি অঙ্গ যেটির ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বিকল না হলে এই অঙ্গটি লক্ষ্মণ প্রকাশ করে না। কিন্তু নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে তা শনাক্ত করা যায়। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছেন, ‘বছরে অন্তত দুইবার কিডনি সংক্রান্ত পরীক্ষা করে জেনে নেয়া উচিত আপনার কিডনি কেমন আছে?’ 

অন্য দিকে বিশ্বে প্রতি বছর নতুন করে কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ। প্রতি বছর ১৭ লাখ মানুষ মারা যান। কিডনি রোগে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার (আজ) বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সবার জন্য সুস্থ কিডনি, সবার জন্য সর্বত্র’। 

কিডনি দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। কিডনি বিষয়ে সচেতনতায় কিছু সংগঠন স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছে বলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। 
কেন কিডনি রোগ হয়ে থাকে এ প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: এম এ সামাদ বলেন, যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করেন না, বংশগত কিডনি রোগ রয়েছে, ধূমপান ও মাদক সেবন করেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথার ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন তাদের কিডনি জটিলতা হতে পারে। 

বিশিষ্ট শিশু নেফ্রলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নেফ্রলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: গোলাম মাঈনউদ্দিন জানিয়েছেন, শিশুদের গলা ব্যথা, জ্বর ও ত্বকে খোস-পাঁচড়ার দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত। এসব রোগ থেকে কিডনি প্রদাহ ও নেফ্রাইটিস হতে পারে। তিনি জানান, অনেকেই মনে করেন শিশুদের কিডনি রোগ হয় না। এ ধারণা ঠিক নয়। তবে তিনি বলেন, শিশুদের কিডনি রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা যায়।

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা: ফখরুল ইসলাম জানান, কিডনি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। শুরুতে শনাক্ত হলে সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিডনি নষ্ট হওয়ার পেছনে ৯০ শতাংশ দায়ী জীবনধারা সম্পর্কিত কারণ। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারলে, অলস জীবনযাপন ত্যাগ করলে, কায়িক পরিশ্রম করলে, অস্বাস্থ্যকর খাবার ত্যাগ করলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম আরো জানান, একটু সচেতন হলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা যায়। ভেজাল খাদ্য, প্রিজারভেটিভ (খাবার নষ্ট না হওয়ার জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান) যোগ করা খাবার খাওয়ার কারণেও কিডনি বিকল হচ্ছে। 

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সুস্থ-অসুস্থ সবারই উচিত নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করা। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, ধূমপায়ী, যাদের ওজন বেশি তাদের বছরে দুইবার কিডনি স্ক্রিনিং করা উচিত।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কিডনি সুস্থ রাখতে বেশি করে শাক-সবজি খাওয়া (বেশি করে ধুয়ে নেয়া রান্নার আগে), বেশি করে ফল খাওয়া, খাবারে কাঁচা লবণ না খাওয়া ও লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করলে কিডনি জটিলতা ও রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

কিডনি দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন, কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ক্যাম্পাস, ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল নানা কর্মসূচি পালন করবে।


আরো সংবাদ



premium cement