১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

থাইরয়েড হরমোন ও মুখের সমস্যা

থাইরয়েড হরমোন ও মুখের সমস্যা - ছবি : সংগৃহীত

থাইরয়েড গ্রন্থি যে হরমোন উৎপাদন করে থাকে তা হলো থাইরক্সিন যা স্বাভাবিক গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। থাইরয়েড গ্রন্থি পরিচালিত হয়ে থাকে ব্রেনের পিটুইটারি গ্রন্থি দ্বারা। পিটুইটারি গ্রন্থি পরিচালিত হয় ব্রেনের আরেকটি গ্রন্থি দ্বারা যার নাম হাইপোথ্যালামাস। হাইপোথ্যালামাস একটি হরমোন নিঃসরণ করে যার নাম থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন। লিখেছেন : ডা: মো: ফারুক হোসেন

হরমোনটি পিটুইটারি গ্রন্থিতে একটি সঙ্কেত পাঠায় থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (ঞঝঐ) নিঃসরণ করার জন্য। এ প্রক্রিয়ায় থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন থাইরয়েড গ্রন্থিতে একটি সঙ্কেত পাঠায় থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করার জন্য। এ তিনটি গ্রন্থির যেকোনো একটির অতিমাত্রায় কার্যকারিতায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন হতে পারে যা হাইপারথাইরয়ডিজমের সৃষ্টি করতে পারে। আবার যদি প্রয়োজন মতো থাইরক্সিন হরমোন উৎপাদন না হয়, তাহলে হাইপোথাইরয়ডিজম দেখা দিতে পারে। হাইপারথাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোনের (ঞঝঐ) পরিমাণ কমে যাবে। থাইরয়েড হরমোন ঞ৩ এবং ঞ৪ এর লেভেল বা পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

হাইপারথাইরয়ডিজমে থাইরয়েড হরমোন বেশি নিঃসরণ হয়ে থাকে। হাইপারথাইরয়ডিজমে ঘুমের সমস্যা, দ্রুত হৃৎস্পন্দন হয়ে থাকে। যার কারণে রোগীর মনে দুঃশ্চিন্তা, বিরক্তিভাব ও অস্থিরতা বিরাজ করে থাকে। এর ফলে মুখের অভ্যন্তরে ঘা বা ক্ষত দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে অর্থাৎ হাইপারথাইরয়ডিজমে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পালপিটিশন হতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে বার্নিং মাউথ সিনড্রোম বা মুখে জ্বালাপোড়া হতে পারে। কখনো কখনো হাইপারথাইরয়ডিজমে জগ্রেনস সিনড্রোম দেখা দিয়ে থাকে, যার কারণে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়। শুষ্ক মুখের প্রভাবে দন্তক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যেহেতু লালার প্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। হাইপারথাইরয়ডিজমে পেরিওডন্টাল রোগ, ম্যাক্সিলারি বা ম্যান্ডিবুলার অস্টিওপরোসিস এবং দাঁত তাড়াতাড়ি ওঠে। এক্স-রে করার সময় থাইরয়েড গ্রন্থিকে রক্ষা করার জন্য থাইরয়েড কলার ব্যবহার করা উচিত। থাইরয়েড গ্রন্থি রেডিয়েশনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। অতিরিক্ত এক্স-রে বা রেডিয়েশন থাইরয়েড গ্রন্থির জন্য একটি রিস্ক ফ্যাক্টর। হাইপারথাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে এবং গরম সহ্য করতে সমস্যা হয়।

হাইপোথাইরয়ডিজম বলতে বুঝায় থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন হ্রাস বা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে যাওয়া। কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজম ক্রেটিনিজম নামে পরিচিত। এ কারণে ঠোঁট পুরু, ম্যাক্রোগ্লসিয়া বা জিহ্বা বড় হওয়া, ম্যালঅকলুশন অর্থাৎ উপর ও নিচের চোয়ালের কামড় দিলে স্বাভাবিক রিলেশন ব্যাহত হওয়া এবং দেরিতে দাঁত উঠে থাকে। পেরিওডন্টাল অবস্থা ভালো থাকে না। কোনো ক্ষতস্থান ভালো হতে দেরি হয়। লম্বা সময় ধরে হাইপোথাইরয়ডিজমের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ক্রেনিওফেসিলয়াল গ্রোথ এবং ডেন্টাল ডেভেলপমেন্টের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ডেন্টাল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে ম্যান্ডিবুলার বা নিচের চোয়ালের দ্বিতীয় মোলার বা সাত নম্বর দাঁতের ইমপ্যাকশন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। হাইপোথাইরয়ডিজমের রোগীদের ক্ষত বা ঘা দেরিতে শুকায়, কারণ মেটাবলিজমের কার্যকারিতা কমে যায়। দেরিতে ঘা বা ক্ষত সারার জন্য সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

তাই দাঁত তোলা বা সার্জারির সময় সতর্কতার সাথে সবকিছু করতে হবে। হাইপোথাইরয়ডিজমের রোগীদের এলডিএল (খউখ) কোলস্টেরল বৃদ্ধি পায় এবং আর্টেরিওস্কেলেরোসিসের কারণে হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। হাইপোথাইরয়ডিজমের কারণে হার্ট-বিট ধীরে ধীরে হতে পারে। এ ছাড়া রোগীর কনস্টিপেসন দেখা দিতে পারে। কনস্টিপেসন হলে মুখে আলসার হতে পারে। হাইপোথাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে রোগী প্রায়ই ঠাণ্ডা অনুভব করার কথা বলে থাকেন। রোগীর ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। হাইপোথাইরয়ডিজম এবং হাইপারথাইরয়ডিজম উভয় ক্ষেত্রেই রোগীর চুল পড়ে যেতে পারে। হাইপোথাইরয়ডিজমের কারণে বিষন্নতা, ক্লান্তিভাব এবং অলসতার অনুভূতির মতো লক্ষণ সৃষ্টি হতে পারে। বিষন্নতার কারণে মুখের আলসারসহ নানাবিধ রোগ সৃষ্টি হতে পারে। মুখের জ্বালাপোড়ার ক্ষেত্রে কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলে তখন অবশ্যই একজন রোগীর সার্বিক শারীরিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। থাইরয়েড গ্রন্থির কোনো কিছু সন্দেহজনক হলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা জানার জন্য। অতএব মুখের যেকোনো রোগের চিকিৎসায় রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হবে। অন্যথায় অনেক সময় মুখের রোগ সহজে ভালো হয় না। তাই এ বিষয়ে সবার আরো বেশি সচেতন হতে হবে।

লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ফোন : ০১৮১৭৫২১৮৯৭

 


আরো সংবাদ



premium cement