২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পাইলসের অপচিকিৎসা : ভয়ঙ্কর ক্ষতির শঙ্কা

পাইলসের অপচিকিৎসা : ভয়ঙ্কর ক্ষতির শঙ্কা - ছবি : সংগৃহীত

মলদ্বারে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয় পাইলস, এনাল ফিশার, ফিস্টুলা, ক্যান্সার ইত্যাদি। এসব রোগে মলদ্বারে ব্যথা হয়, রক্ত যায়, চুলকানি হয় ফুলে যায় এবং কখনো কখনো পুঁজ পড়ে। এ জাতীয় প্রতিটি রোগের বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা আছে। বেশির ভাগ রোগ শুরুতে চিকিৎসকের কাছে এলে ওষুধপত্রের মাধ্যমে ভালো হওয়া সম্ভব। ১০০ জন রোগীর মধ্যে ৩৫ জনের অপারেশন প্রয়োজন।

দেখতে পাই, তথাকথিত চিকিৎসক নামধারী কিছু ব্যক্তি নিজেকে পাইলস বিশেষজ্ঞ হিসেবে দাবি করে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা ছাড়াই চিকিৎসা করে আসছেন। তারা শহরের নামকরা বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনের কাছে চেম্বার সাজিয়ে যে জাতীয় অপচিকিৎসা করছেন, তার হাজার হাজার ভুক্তভোগী প্রতিদিন প্রতারণার শিকার হয়ে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে প্রতিকারের জন্য হাজির হন। তারা এ চিকিৎসার জন্য নাইট্রিক এসিড জাতীয় বিষাক্ত কেমিক্যাল ইনজেকশন ও পাউডার মলদ্বারে ব্যবহার করেন। ফলে মলদ্বারের মাংসপেশিতে পচন ধরে এবং তীব্র ব্যথা-যন্ত্রণা ও দুর্গন্ধ হয়।

রোগীদের প্রথম প্রলুব্ধ করা হয় বিনা অপারেশনে চিকিৎসা হবে বলে। এরপর যখন বিষাক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ করার পর তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণা শুরু হয়, তখন উপশমের জন্য অতিরিক্ত মাত্রার বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ইনজেকশন দিতে থাকেন। অনেক রোগী বলেন, আমি কয়েকদিন ব্যথায় অনবরত চিৎকার করেছি এবং জোরে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে মলদ্বারে বাতাস দিয়েছি ব্যথা লাঘবের জন্য।

২০ বছর ধরে আমি এরূপ অপচিকিৎসার অসংখ্য রোগী দেখেছি এবং এখনো প্রতিদিন দেখছি। সম্প্রতি এরূপ অপচিকিৎসার শিকার একজন মহিলা রোগী এসেছেন যার স্বামী মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। তিনি এসেছেন পায়খানার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নোয়াখালীতে একটি হাসপাতালে তাকে পেটে অপারেশন করে মলত্যাগের ব্যাগ (ঈড়ষড়ংঃড়সু) লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি পরীক্ষা করে দেখলাম, তার পায়খানার রাস্তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে এবং পেটে ব্যাগ লাগানো আছে। পরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নিলাম তার পায়খানার রাস্তা নতুন করে বানাব। পরে বিশেষ পদ্ধতিতে অপারেশন করে তার মলদ্বার আবার (জবপড়হংঃৎঁপঃরড়হ) পুনর্গঠন করি। মলদ্বার যখন সঠিকভাবে কাজ করবে তখন আমরা পেটের ব্যাগ (ঈড়ষড়ংঃড়সু) বন্ধ করে দেবো। তখন সে আসল মলদ্বার দিয়ে পায়খানা করতে পারবে।

প্রায় ২০ বছর আগের কথা। একজন বয়স্ক রোগী আমার কাছে এলেন। বললেন, তিনি পায়খানা করতে পারেন না। টয়লেটে বসলে শুধু চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসে, কোনো পায়খানা বের হয় না। তিনি উচ্চশিক্ষিত এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত। মলদ্বারে পরীক্ষা করে দেখলাম এটি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য কলমের মাথা প্রবেশ করে। তিনি সবসময় প্যাম্পারস পরে থাকেন। প্রতিদিন অনেক ওষুধ খেয়ে পায়খানা নরম করেন, সেই পায়খানা অনবরত চুইয়ে বের হয়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি, আপনার চিকিৎসা কোথায় হয়েছে? তিনি বললেন, ঢাকার কলাবাগানে।

পর সেই রোগীকে পেটে অস্থায়ী ব্যাগ লাগিয়ে মলদ্বারে জড়ঃধঃরড়হ ধফাধহপবসবহঃ ভষধঢ় নামক প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে মলদ্বার আবার তৈরি করেছি। এ অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় পরবর্তীতে তার পেটের ব্যাগ বন্ধ করে দিয়েছি। এটি ব্যয়বহুল এবং জটিল একটি প্রক্রিয়া।

আমরা প্রায় প্রতিদিনই অপচিকিৎসার ভুক্তভোগী রোগীদের দেখি। রোগীদের যখন জিজ্ঞাসা করি আপনারা হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে কেন গেলেন। তখন তারা বলেন, ঢাকা শহরে এত সুন্দর সাইনবোর্ড দিয়ে ওরা চিকিৎসা করছে, আমরা বুঝতে পারিনি তারা হাতুড়ে ডাক্তার।

এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন রোগী পেয়েছি যারা এ অপচিকিৎসার কারণে প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশ অবশ হয়েছে বলে জানান। এ চিকিৎসায় যে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তাতে স্নায়ু দৌর্বল্য দেখা দেয়ার ঘবঁৎড়ঃড়ীরহ কারণে।

আমাদের মাত্র একটি মলদ্বার আছে। এটিও আবার ছোট সরু একটি পথ। এ পথের আশপাশের মাংস বিনষ্ট হলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় এবং মাংসপেশিতে পচন ধরে (এধহমৎবহব) এবং পরে শুকিয়ে যাওয়ার পর মলদ্বার ভীষণ সরু হয়ে যায়।
আজকাল দেশে শিক্ষিত ডিগ্রিধারী চিকিৎসক আছেন। জেলা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আছে।
রোগীদের অনুরোধ করব, যেন তারা এসব হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অকালে নিজের জন্য বিপদ বয়ে আনবেন না।

লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, (অব) কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা। চেম্বার : ইডেন মাল্টি-কেয়ার হসপিটাল, ৭৫৩ সাতমসজিদ রোড, (স্টার কাবাব সংলগ্ন) ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন : ০১৭৫৫৬৯৭১৭৩-৬


আরো সংবাদ



premium cement