২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাওয়ার অভ্যাস ও দেহের ওজন

খাওয়ার অভ্যাস ও দেহের ওজন - ছবি : সংগৃহীত

কেবল ক্ষুধা লাগলেই যদি আহার করেন তাহলে শরীরের স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা মোটেই কঠিন কাজ নয়। এমন দেখা যায় যে অনেকেই ক্ষুধার সঙ্কেতকে গ্রাহ্য করেন না বরং চাপগ্রস্ত হলে, উদ্বেগ হলে বা একঘেঁয়ে জীবনে পড়লে বেশি বেশি খেয়ে ফেলেন, ফলে দেহের ওজন বেড়ে যায়।

শরীরের বাড়তি ওজন হ্রাস করতে হলে খাওয়ার অভ্যাসকে যে সব শক্তিশালী জিনিস প্রভাবিত করে এর সাথে পরিচিত হওয়া চাই- খাদ্য সম্বন্ধে কিভাবে, খাদ্য সম্বন্ধে নিজের অনুভব, ক্ষুধা না লাগলেও কেন খাচ্ছেন- এগুলোর দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।

১। নিজের খাদ্যগ্রহণের অভ্যাসের সাথে পরিচিত হওয়া দরকার।
খাওয়ার অভ্যাস সম্বন্ধে অবহিত হতে হলে, এমন সব পরিস্থিতির দিকে নজর রাখুন যাতে পড়লে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা জন্মায়।

লিখে ফেলুন নোটবুকে। কয়েকদিন কি খাচ্ছেন, কোথায় খাচ্ছেন, কেন খাচ্ছেন এর তালিকা করে ফেলুন। এরমধ্যে পরস্পর সম্পর্ক, নমুনা জেনে নিন। জীবনের একঘেঁয়ে মুহূর্তগুলোতে, ক্রোধ হলে, ক্লান্ত হলে, উদ্বিগ্ন হলে, চাপে পড়লে, বিষণ্ন হলে, সামাজিক চাপের মধ্যে পড়লে কি বেশি খাওয়া হচ্ছে?
এমন যদি হয় তাহলে আছে পরামর্শ :

ষ কোনো কিছু খাওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, সত্যি ক্ষুধা লেগেছে কি? তা যদি না হয়, তাহলে এক গ্লাস পানি পান করুন। হয়ত দেখা যাবে আপনার পিপাসা লেগেছে, ক্ষুধা লাগেনি।
ষ চা বিরতির সময় হয়ত এমন সব খাবার আপনাকে দেয়া হলো যা আপনার মেন্যু প্ল্যানের সাথে মিললো না, তখন সবিনয়ে না বলে দিন।
ষ খাওয়ার আকাক্সক্ষা তীব্র হয়েছে, তখন মনকে অন্যত্র সরিয়ে দিন। কোনো বন্ধুকে ডাকুন অথবা হেঁটে আসুন কিছুক্ষণ।

ষ চাপ বা ক্রোধ থেকে মনের আবেগকে বের করে আনুন। বেরিয়ে পড়–ন হাঁটতে, নতুবা ফাইল নাড়াচাড়া করুন, ড্রয়ার বা নিজের ছোটঘরকে গোছান। খাওয়ার আগ্রহ চলে যাবে।
ষ যদি দেখেন, বিকল্প কোনো কৌশল খুঁজে পাচ্ছেন না, তাহলে নিজেকে খুব বেশি সংযত করতে চেষ্টা করবেন না, হয়ত এতে প্রচণ্ড আগ্রহ বাড়বে খাওয়ার প্রতি। সেক্ষেত্রে খেয়ে ফেলুন সবজির তরকারি বা ফলের টুকরো। মনে অপরাধবোধ হবে না, আর খাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও মিটবে।

২। পরিবর্তন হোক ক্রমে ক্রমে
যখন দেখলেন যে খাওয়ার অভ্যাস যা রয়েছে তা পরিবর্তনের প্রয়োজন, তখন মনে রাখতে হয় যে পরিবর্তনটি ক্রমে ক্রমে হলেই ভালো। লিন্ডার কথা যদি বলি। লিন্ডা একটি প্রাইভেট মোবাইল কোম্পানিতে কাস্টমার রিলেশনস ম্যানেজার। তার চাকরিতে কিছুটা কেন, বেশ চাপ রয়েছে। সে গর্ব বোধ করে যে একদিকে যেমন গ্রাহকের চাহিদা মেটায় তেমনি ব্যবস্থাপনার একটি দিকও দেখাশুনা করে। যখন সে চাপে নুয়ে পড়ে তখন সে চর্বিবহুল হাইক্যালোরি স্ন্যাকস খেতে যায়।
লিন্ডা ক্রমে আবিষ্কার করে যে তার খাওয়ার এ অভ্যাসের জন্য যে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে পারছে না। সে বেশ স্থূল হয়ে যাচ্ছে। সে স্থির করুন, চাকরির এ চাপকে মোকাবেলার জন্য বিরতির সময় ১০ মিনিট দ্রুত হাঁটবে এবং স্ন্যাকস হিসেবে শুধু ফল খাবে। এভাবে এক সময়, লিন্ডা কাক্সিক্ষত ওজন অর্জন করল।

৩। আগেভাগে পরিকল্পনা করে নিন
খাওয়ার পুরনো অভ্যাস এত আত্মস্থ হয়ে যায় যে এ সম্বন্ধে সচেতন থাকাই যায় না। স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের তাই মনে মনে একটা রিহার্সেল দিয়ে দিলে ভালো হয়। মনে করুন গ্রাজুয়েশন পার্টিতে গেছেন। টেবিল থরে থরে সাজানো নানারকম খাবার। সবগুলো খাবার থেকে অল্প অল্প করে প্লেটে রাখবেন কেবল ফল ও সবজি খাবেন এ ব্যাপারটি আগে ভেবে নেয়া ভালো। এই প্ল্যানটি মনে মনে ঠিক করে কাজে লাগান। হোটেলে খেতে হলে বুফে খাওয়া ভালো। পয়সা লাগুক কিন্তু খাবার অপচয় হয় না। এমনি খেলে এত খাবার দেয় যে সব খাওয়া সম্ভব হয় না আর সব সময় প্যাকেট করে বাসায় নেয়াও সম্ভব না। হোটেল মালিকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এত খাবার দেন কেন? তাদের উত্তর- স্যার কাস্টমার কম দিলে রেগে ওঠেন। ওরা বেশির ভাগই পরিমাণে বেশি খান এবং চানও যে বেশি যেন দেয়া হয়। আসলে আমরা খাই বেশি, কিন্তু পুষ্টিকর খাবার বা পুষ্টিঘন খাবার কম খাই।

৪। ইতিবাচক চিন্তা করুন
স্বাস্থ্যকর ওজন অর্জনের জন্য কী কী ত্যাগ করতে হচ্ছে এ জন্য ভেবে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। বরং ভাবুন কী কী অর্জন হচ্ছে নিজের। প্রাতঃরাশে নারকেলের মিষ্টি বা চমচম খেলাম না। এ নিয়ে দুঃখ না করে বরং ভাবুন, ‘এই সকালে খই দধি ও কলা চটকিয়ে খেয়ে খুব আরাম পেলাম।’
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন ঘটানোর এই প্রক্রিয়া হতে পারে উপভোগ্য আর স্বাস্থ্যের উন্নতি এতে অবধারিত।

লেখক : অধ্যাপক ও ডিরেক্টর, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা।


আরো সংবাদ



premium cement