২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রিমেনোসট্রোয়াল সিনড্রোম

প্রিমেনোসট্রোয়াল সিনড্রোম - ছবি : সংগৃহীত

মাসিক শুরু হওয়ার দুই-এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রজননক্ষম নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য কতগুলো শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা যায়। মাসিক আগে এ সমস্যাগুলোকে একত্রে বলা হয় প্রিমেনোসট্রোয়াল সিনড্রোম। শতকরা ৪০ জন মহিলা এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। পাঁচ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করে। মাসিক শুরু হলে এ সমস্যাগুলো আপনা থেকেই চলে যায়। এ উপসর্গগুলো দেখা দেয়া স্বাভাবিক এবং এতে বোঝা যায় ওভারি বা গর্ভাশয়ের ক্রিয়াকলাপ ঠিকভাবে হচ্ছে। মহিলারা অনেকেই এই শারীরিক ও মানসিক তারতম্য স্বাভাবিক বলেই মেনে নেন। সাধারণত ক্রিশোর্র্ধ্ব বয়সের মহিলারা এ অসুবিধায় ভোগেন। মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির পর মাসিক ঋতুস্রাব একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়, তখন আর প্রিমেনোসট্রোয়াল সিনড্রোম থাকে না।
কারণ : এই সিনড্রোমের সঠিক কারণ আজো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে এটা যেহেতু মাসিক ঋতুচক্রের দ্বিতীয় ধাপে হয়ে থাকে, সে জন্য ওভিউশিন বা ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণে প্রজেস্টেরন হরমোনের প্রভাব এর কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়। কারণ প্রজেস্টেরন হরমোনটি ঋতুচক্রের দ্বিতীয় ধাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে প্রজেস্টেরন হরমোন কতটুকু দায়ী তা এখনো জানা যায়নি। কেউ কেউ আবার প্রোলাকটিন হরমোনের প্রভাব আছে বলেও মনে করেন। কারো কারো মতে, পুষ্টিহীনতাও প্রিমেনোসট্রোয়াল সিনড্রোমের কারণ। ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন-ই, লিনলিক এসিড, মিনারেলসের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াস, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদির অভাবজনিত কারণে প্রিমেনোসট্রোয়াল সিনড্রোম হয়ে থাকে।

উপসর্গ : প্রিমেনোসট্রোয়াল সিনড্রমে ১৫০টির মতো উপসর্গ দেখা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কতগুলো উপসর্গ হলো-
ষ মাথাব্যথা ও মাথা ঘুরানো
ষ তলপেটে ব্যথা অনুভব করা
ষ স্তনে স্পর্শকাতরতা বা ব্যথা করা ষ অস্থিরতা ষ স্তনে ভারী অনুভব করা ষ কোমরে ব্যথা ষ অনিদ্রা ষ অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা
ষ খিটখিটে মেজাজ বা সব কিছুতেই বিরক্তি বোধ ষ মানসিক অবসাদ ষ মনোসংযোগে ব্যাঘাত
ষ অসামাজিকতা বা কারো সাথে কথা বলতে ভালো না লাগা
ষ বমি ভাব
ষ হট ফ্লাস বা মুখের ত্বক লালচে ভাব ষ অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তা ষ বিষণ্নতা বা ডিপ্রেসড মুড
ষ শারীরিক ওজন বেড়ে যাওয়া, টেনশন
ষ ভয় ষ ত্বকের রুক্ষতা কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
ষ শারীরিক পরিশ্রমে অনীহা প্রকাশ
ষ অপরাধ বোধ এবং সন্দেহপ্রবণতা বেড়ে যাওয়া
ষ শব্দ বা আলোর প্রতি অতি সংবেদনশীল হওয়া
ষ হাত-পা ভারী লাগা বা পুলে যাওয়া
ষ যৌন ইচ্ছায় আগ্রহ কমে যাওয়া ষ খাবারে অরুচিভাব ইত্যাদি।

রোগ নির্ণয় : এ সমস্যাগুলো যদি কোনো মহিলার পরপর তিন মাস তিনটি ঋতুচক্রের পূর্ববর্তী সময়ে লক্ষ্য করা যায়, তা হলে তাকে প্রিমেনোসট্রোয়াল সিনড্রোমের রোগী হিসেবে ধরে নেয়া হবে। তাকে শারীরিক বা মানসিক অথবা উভয় সমস্যার চিকিৎসা দিতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে রোগ জটিল এবং তীব্র আকার ধারণ করলে রোগীর মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা চলে আসতে পারে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার : এর কারণ খুব স্পষ্টভাবে জানা যায়নি বলে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে-
ষ প্রজেস্টেরন, হরমোন পিল-মাসিকের ১৪ দিন আগে থেকে খেতে হয়।
ষ ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিন ট্যাবলেট দিনে দুইবার খেতে হয়।
ষ ডাইইউরেটিক ট্যাবলেট, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, ম্যাগনেসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া দরকার। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি বা খাবারের অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়। যেমন- দিনে তিনবার বেশি করে না খেয়ে অল্প করে দিনে পাঁচ-ছয়বার খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো এই সময়ে।

ষ মাসিক শুরুর দুই সপ্তাহ আগে থেকে চা, কফি, অ্যালকোহল অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
ষ খাবারের সাথে বাড়তি লবণ, চর্বি, টক ও মিষ্টিজাতীয় খাবার, কম খাওয়া উচিত।
ষ অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিলে ঘুমানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বা ঘুমের ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

ষ অত্যধিক মানসিক চাপ থাকলে তা কমিয়ে রিলাক্স জীবন যাপন করতে হবে।
ষ প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় আধ ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস করা উচিত।
ষ মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, সিটমবাথের অভ্যাস করে শরীরকে রিলাক্স রাখতে হবে।
ষ যদি অতিরিক্ত মানসিক অবসাদ বা আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়, তা হলে জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement