২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নিউমোনিয়া থেকে শিশুকে রক্ষায় করণীয়

-

শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। শিশুরা শীতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে নিউমোনিয়ায়। তবে বছরের যেকোনো সময়ও হতে পারে।

নিউমোনিয়া ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ। সব সর্দি-কাশিই নিউমোনিয়া নয়। যখন জ্বর এবং সাথে কফ ও শ্বাসকষ্ট থাকে তখনই কেবল শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হয়েছে বলে ধরা হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হালকা থেকে জীবনহানিকরও হতে পারে।

আমাদের দেশে সরকারিভাবে নিউমোনিয়ার টিকা দেয়া হয়। শিশুর শ্বাসকষ্ট বুঝতে হলে জানা থাকা দরকার- দুই মাসের নিচের শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের হার মিনিটে ৬০ বারের বেশি, এক বছরের নিচে ৫০ বার বা তার বেশি এবং এক থেকে পাঁচ বছরের শিশু মিনিটে ৪০ বার শ্বাস নেয়- এর বেশি হলে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। তাই জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত শিশু এ রকম ঘন ঘন শ্বাস নিলে বা শ্বাসের সাথে বুক বা পাঁজর নিচে দেবে যেতে থাকলে সতর্ক হতে হবে। হয়তো ওই শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

সাধারণত নিউমোনিয়ার চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। সঠিক ওষুধের পাশাপাশি এ সময় প্রচুর তরল খাবার খেতে দিতে হবে। নিউমোনিয়া ভালো হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগতে পারে। এ সময় কুসুম গরম পানি, লবণ-পানি দেয়া যেতে পারে। নাকে নরমাল স্যালাইন ও নরসল ড্রপ দেয়া যেতে পারে। দুই বছরের নিচের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। বুকে তেল, কোনো বাম ব্যবহার উচিত নয়। শিশুদের সামান্য কাশিতে সাকশন যন্ত্র দিয়ে কফ পরিষ্কার করা বা নেবুলাইজারও ব্যবহার ঠিক না। খুব শ্বাসকষ্ট, সবকিছুই বমি করে দিলে, অজ্ঞান হয়ে গেলে বা খিঁচুনি হলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

ফুসফুসের চারপাশে তরল জমা ও সংক্রমণ হতে পারে। ফুসফুসে ঘা হয়ে ক্ষত হতে পারে। তীব্র শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। সাধারণত ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি হতে পারে। নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য রোগ। নিতে হবে নিউমোনিয়াসহ অন্য রোগেরও ভ্যাকসিন। বিশেষ করে পাঁচ বছরের নিচে বা ৬৫ বছরের ওপরে বয়সীদের অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ভ্যাকসিন নিতে হবে। নিয়মিত হাত ধুতে হবে। নাক পরিষ্কারের পর, সাধারণ ঠাণ্ডা লাগলেও খেয়াল রাখতে হবে, যেন এটি খারাপ দিকে না যায়। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, পরিমিত বিশ্রাম নিতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, যা শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শিশুর জন্মের পর ইপিআই শিডিউলের ভ্যাকসিনগুলো নিশ্চিত করতে হবে। শিশুকে চুলার ধোঁয়া, কয়েল ও সিগারেটের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখাও জরুরি। পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর কেমিক্যালের যে প্রভাব তা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। প্রাথমিকভাবে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকের দুধ নিয়মিত খেতে না চাওয়া, স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণে অনীহা শিশুর নিউমোনিয়ার লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনে এখন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সময় পাল্টে গেছে। নিউমোনিয়া থেকে শিশুকে মুক্ত রাখার ভালো উপায়, জন্মের পর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো এবং মা ও পরিবারের সচেতনতা বাড়ানো।
শিক্ষার্থী : নাজিমুদ্দিন কলেজ, মাদারীপুর।


আরো সংবাদ



premium cement