২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

২০৩০ সালের মধ্যে ফিস্টুলামুক্ত পৃথিবী

-

আমি কবে শুকনো বিছানায় শুতে পারব? ফিস্টুলা রোগীদের কাছ থেকে এমন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিয়তই। এমনও রোগী আছেন ৩০ বা ৪০ বছরের বেশি সময় ভেজা বিছানায় ঘুমাচ্ছেন। কারণ একজন ফিস্টুলা রোগীর অনবরত প্রস্রাব ঝরতে থাকে। সে এক দুর্বিষহ জীবন। তারা পরিণত হন জীবন্ত লাশে। এমনটাই বলছিলেন আইসফসের সম্মেলনে আসা অংশগ্রহণকারীরা।
হিমালয় কন্যা নেপালে হয়ে গেল দুই দিনের আইসফস (ISOFS international Society of Obstretic Fistula Surgeon) সম্মেলন। রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিশে^র নানা প্রান্ত থেকে এখানে এসেছিলেন সেই সব সার্জন যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন ফিস্টুলা রোগীদের সেবায়। নিজের নানা গবেষণাপত্র নিয়ে পৃথিবীর প্রায় ২০ দেশের ৫০০ অংশগ্রহণ করেন এই সম্মেলনে। ২০৩০ সালের পর পৃথিবীতে আর কোনো মহিলাজনিত ফিস্টুলা রোগী থাকবে না এই লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে শেষ হয় ৫ থেকে ৮ ডিসেম্বরের এই সম্মেলন। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৯ হাজার ৫০০ মহিলাজনিত ফিস্টুলা রোগী আছেন।
মহিলাজনিত ফিস্টুলা কী : মহিলা জনিত ফিস্টুলা হলো মাসিকের রাস্তার সাথে মূত্রথলি অথবা মলাশয়ের এক বা একাধিক অস্বাভাবিক ছিদ্র হয়ে যুক্ত হওয়া- যার ফলে মাসিকের রাস্তা দিয়ে সবসময় পায়খানা অথবা প্রস্রাব অথবা উভয়ই ঝরে। ফলে ওই মহিলার প্রস্রাবের বেগ হয় না। তার শরীর দিয়ে সব সময় প্রস্রাব ঝরতে থাকে। ফলে গায়ে বাজে গন্ধ হয় আর বিছানায় শুলে বিছানা ভিজে যায়। এ জন্য তাকে ভেজা বিছানায় রাত কাটাতে হয়।
মহিলাজনিত ফিস্টুলার কারণ :
প্রসবজনিত ফিস্টুলা: দীর্ঘস্থায়ী বা বাধাগ্রস্ত প্রসবের ফলে হতে পারে। যখন প্রসব দীর্ঘস্থায়ী অর্থাৎ ১২ ঘণ্টার বেশি হলে মহিলাদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা হওয়ার ঝুঁকি বা সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রসবের সময় নবজাতকের মাথা মায়ের প্রসব রাস্তার নরম অঙ্গগুলোকে চাপ দিয়ে রাখে, নবজাতকের মাথার এই চাপের ফলে মায়ের নরম অঙ্গগুলোর রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত বা বন্ধ হয়ে যায়। যদি প্রসব দীর্ঘস্থায়ী হয় (১২ ঘণ্টার বেশি), তাহলে মায়ের সেই চাপে পড়া অঙ্গে পচন ধরে এবং খসে পড়ে, এর ফলে মাসিকের রাস্তার সাথে মূত্রথলি অথবা পায়খানার রাস্তা অথবা উভয়ের মধ্যে এক বা একাধিক ছিদ্র তৈরি হয় এবং অনবরত অথবা মাঝে মধ্যে প্রস্রাব অথবা পায়খানা অথবা উভয়ই ঝরতে থাকে। এই অবস্থাটিকেই প্রসবজনিত ফিস্টুলা বলে।
অপারেশনজনিত ফিস্টুলা: সিজার বা অপারেশনের মাধ্যমে শিশুর জন্ম, অন্য যেকোন কারণে তলপেট, যোনিপথ বা জরায়ুতে অপারেশনের সময় অসাবধানতাবশত ফিস্টুলা হতে পারে।
আঘাতজনিত বা অন্যান্য কারণেও ফিস্টুলা বা এই অনাকাক্সিক্ষত ছিদ্র হতে পারে।
কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যায় : ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস সাপোর্টেড সাইটের মাধ্যমে এ ধরনের রোগীদের বাড়ি থেকে হাসপাতালে আনা থেকে শুরু করে সব ধরনের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হয়Ñ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুমুদিনী হাসপাতাল, ল্যাম্ব হাসপাতাল, আদ্-দ্বীন হাসপাতাল ও সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোয়। আনন্দের খবর হচ্ছে বেশির ভাগ ফিস্টুলা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।
চ্যালেঞ্জেগুলো : ২০৩০ সালের মধ্যে এই বিশ^কে মহিলাজনিত ফিস্টুলামুক্ত করার জন্য শুধু রোগী খুঁজে তাদের চিকিৎসা করলে হবে না। এর পাশাপাশি মহিলাদের ফিস্টুলা হওয়ার পথও রোধ করতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এখন বাধাগ্রস্ত প্রসব এখন অনেক কমে গেছে। ফলে প্রসবজনিত ফিস্টুলার রোগীদের সংখ্যা কমে আসছে। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সিজারের রেট বেশ বেড়ে গেছে। এই বেড়ে যাওয়ার কারণে অপারেশনজনিত ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এখানে লক্ষ্য রাখার বিষয় হচ্ছে যারা এই সিজার করছেন তারাই কাঠমান্ডুতে ২০৩০ সালের মধ্যে ফিস্টুলামুক্ত পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। সুতরাং তারাই বসে আছেন ড্রাইভিং সিটে। এই লক্ষ্য অর্জনে অপ্রয়োজনীয় সিজারের রেট কিভাবে তারা কমিয়ে আনবেন তাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
২০২৪-এর নির্বাচন : স্বৈরশাসনের হাতছানি গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা

সকল