২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আপনি কি অধিক বয়সে সন্তান নেয়ার কথা ভাবছেন?

আপনি কি অধিক বয়সে সন্তান নেয়ার কথা ভাবছেন? - ছবি : সংগৃহীত

বর্তমান যুগের ব্যস্ততা, ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা আর অর্থনৈতিক চাপের মুখে পরে অনেকেই মা হবার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দেরি করে ফেলেন। ফলে ৩৫ বছর বয়সের পর মা হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অধিক বয়সে মা হলে কিছু বাড়তি জটিলতার ঝুঁকি থাকে।

তাই এ বয়সে মা হতে চাইলে আপনাকে এ ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।একইসাথে পরিবার ও সেবা দানকারীদেরও এ মায়েদেরকে দিতে হবে বাড়তি পরিচর্যা ও মনযোগ।

বেশি বয়সে মা হতে চাইলে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে পারেন তা হলো------

# গর্ভধারণে দীর্ঘসূত্রিতা : একজন মেয়ে জন্মের সময় কিছুসংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায় যা সময়ের সাথে সাথে নিঃশেষ হতে থাকে। ৩০ বছরের পর থেকেই ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমতে থাকে। এতে করে এ সময়ে গর্ভধারণ করার চেষ্টার পরও দিনের পর দিন ব্যর্থ হতে পারে। তাই ৩০ বছরের পর কেউ যদি মা হবার জন্য ছয় মাস চেষ্টা করার পরও ব্যর্থ হন, তবে দেরি না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ডিম্বাণু উৎপাদক ওষুধ খেতে পারেন।

# জেষ্টেশনালডায়াবেটিস : গর্ভকালে কোনো কোনো মা ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন।
অধিক বয়সে গর্ভধারণ করলে এর আশঙ্কা আরো বেড়ে যায়। কনসিভ করার আগে থেকেই কিছু মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে কনসিভ করার আগ থেকেই তাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বাচ্চার বিকলঙ্গতা, ওজন বৃদ্ধি ও অধিক মৃত্যু-ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

# উচ্চ রক্তচাপ : গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক মায়েদের গর্ভকালে উচ্চ রক্তচাপে ভোগার আশঙ্কা বেড়ে যায়। গর্ভকালে সময় নিয়মিত ড প্রেসার চেকআপের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা এড়ানো যায়। যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্ত চাপের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তাদের উচিত গর্ভধারনের আগেই ডাক্তারের পরামর্শে বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর ওষুধ পরিবর্তন করা।

# অধিক গর্ভপাতের আশঙ্কা : এ সময়ে অধিক গর্ভপাতের কারণের মধ্যে রয়েছে মায়ের বিভিন্ন অসুখ যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ ইত্যাদি। এছাড়া বাচ্চার জিনগত ত্রুটি বয়স বৃদ্ধির সাথে বাড়ে যা গর্ভপাতের কারণ ঘটায়।

# সিজারের আশঙ্কা বৃদ্ধি : গর্ভকালে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেবার কারণে বয়স্ক মায়েদের সিজারের আশঙ্কা বেশি থাকে।

# ভ্রূণের জিনগত ত্রুটি : বয়স বৃদ্ধির সাথে ভ্রুনের জিনগত ত্রুটি হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়। মায়ের বয়স বৃদ্ধির সাথে ডাউন সিনড্রোম (ক্রোমোজোমাল ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চা) নিয়ে বাচ্চা জন্মানোর হারও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে ২৫ বছর বয়সী মায়েদের ডাউন সিনড্রোম বাচ্চা হবার ঝুঁকি থাকে প্রতি ২৫০০ জনের মধ্যে একজনের, যা ৪০ বছর বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রে গিয়ে দাঁড়ায় প্রতি ১০০ জনে একজন। এমনিয়টিক ফ্লুইড (গর্ভস্থ বাচ্চার চারদিকের পানি) নিয়ে পরীক্ষা করে কনসিভের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ভ্রুণের জীনগত ত্রুটি সনাক্ত করা সম্ভব।

# অন্যান্য জটিলতা : এছাড়াও মাল্টিপল প্রেগনেন্সি (একাধিক বাচ্চা গর্ভধারণ), সময়ের আগেই বাচ্চা হওয়া, গর্ভস্থ বাচ্চার মৃত্যু, কম ওজনের বাচ্চা জন্মদান ইত্যাদি জটিলতা বয়েসের সাথে সাথে বাড়ে।
তবে এ সম্পর্কে সচেতনতা এবং পূর্বসতর্কতা অনেক জটিলতা এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

যেমন :
# প্রথমত শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ( BMI) নরমাল রাখতে হবে।
# মাসিকের যেকোনো অনিয়ম যেমন, অনিয়মিত মসিক, অধিক রক্তপাত কিংবা মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা কিছু প্যাথোলজির কারণে হতে পারে, যা পরে কনসিভের ক্ষেত্রে ঝামেলা করে। তাই এ লক্ষণগুলো থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
# ডায়াবেটিস, প্রেশার বাথাইরয়েডের সমস্যা থাকলে প্রেগন্যান্সির আগেই ওষুধের মাধ্যমে কন্ট্রোলে রাখতে হবে।
# সবশেষে, কনসিভ করার পর পরই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের তত্ত্বাবধানে থাকুন, যাতে একটি সুস্থ বাচ্চার জন্মদান সহজ হয়।

সহযোগী অধ্যাপক (অবস-গাইনি)
ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মিরপুর ১, ঢাকা।
চেম্বার : DPRC হসপিটাল, শ্যামলী।
Mob : 01924087831


আরো সংবাদ



premium cement