১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিউমোনিয়ার লক্ষ্ণণ, কী করবেন

ফুসফুসের প্রদাহ বা নিউমোনিয়া - ছবি : সংগৃহীত

ফুসফুসের প্রদাহকে চিকিৎসাশাস্ত্রীয় ভাষায় নিউমোনিয়া বলা হয়। শত শত বছর আগ থেকেই নিউমোনিয়া নামক রোগটি আমাদের কাছে পরিচিতি পেয়ে আসছে। সব বয়সের বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সেই এ রোগটি বেশি আক্রান্ত হয় এবং শীতের দিনে এর প্রকোপ বেশি থাকে। অবস্থানের দিক থেকে নিউমোনিয়া প্রধানত দুই ধরনের- ব্রঙ্কো নিউমোনিয়া ও লোবার নিউমোনিয়া। ব্রঙ্কো নিউমোনিয়ায় শ্বাসনালী ও ফুসফুসের প্রধান নালীগুলো আক্রান্ত হয়ে থাকে। সাধারণত দু’টি ফুসফুসই আক্রান্ত হয় এবং ছোট ছোট প্রদাহ ফুসফুসের নিচের অংশে বেশি দেখা যায়। অন্য দিকে লোবার নিউমোনিয়ায় ফুসফুসের বায়ুকোষগুলো আক্রান্ত হয় এবং সাধারণত তা ফুসফুসের কোনো এক অংশে সীমাবদ্ধ থাকে। এটিকেই প্রকৃত নিউমোনিয়া বলে। ব্রঙ্কো নিউমোনিয়া সাধারণত শিশু ও বৃদ্ধদের বেশি হয়।

লোবার নিউমোনিয়া সবারই হতে পারে। সাধারণত শিশুদের হাম, হুপিংকাশি ইত্যাদির পর এবং বৃদ্ধদের অ্যাকিউট বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদির পর ব্রঙ্কো নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। বার্ধক্য বা অন্য কোনো কারণে শয্যাশায়ী রোগীদের ব্রঙ্কো নিউমোনিয়া হওয়ার ভয় থাকে। কারণের দিক থেকে নিউমোনিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রাথমিক নিউমোনিয়া, যেখানে শ্বাসতন্ত্রের আগের কোনো রোগ ছাড়াই নির্দিষ্ট একটি জীবাণু দ্বারা নিউমোনিয়া হয়, যেমন- নিমোকক্কাস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস, হিমোফিলাস, ক্লেবশেলা ইত্যাদি। মাধ্যমিক নিউমোনিয়া- এটিকে অ্যাসপিরিশন নিউমোনিয়াও বলা হয়। এখানে শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশের কোনো রোগের কারণে যেমন- সাইনোসাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস, অজ্ঞান অবস্থায় বমি বা অন্য কোনো রস নিচের দিকে নেমে গিয়ে ইত্যাদি কারণে নিউমোনিয়া হয়।

হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে এ রোগটি শুরু হয়। কাশি অন্যতম প্রধান লক্ষণ- প্রথম দিকে তা শুকনো কাশি হতে পারে তারপর কাশির সাথে কফ উঠতে থাকে। কফ সাদা, হলুদ হতে পারে। বুকের একটি বিশেষ অংশে নিউমোনিয়ায় ব্যথা শুরু হয় এবং কাশি দিলে বুকের ব্যথা বেশি বোধ হয়। রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি দ্রুত হয় এবং অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। নাড়ি দ্রুত হয়, ত্বক উত্তপ্ত ও শুষ্ক হয়, মুখমণ্ডল রক্তিম এবং মারাত্মক অবস্থায় নীলাভ হতে পারে।

মুখে ঘা, ঠোঁটের চার পাশে ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দেয়। নিউমোনিয়া হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর ডাক্তারেরা স্টেথেস্কোপ দিয়েই নিউমোনিয়া রোগ শনাক্ত করতে পারেন। তবে বুকের এক্স-রে করলে ফুসফুসের কোন জায়গায় প্রদাহ হয়েছে তা নির্ণয় করা যায়। এক্স-রেতে ওই অংশ সাদা দেখা যায়। রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। মাইক্রোস্কোপের নিচে কফ পরীক্ষা করলে অনেক সময় সরাসরি জীবাণু নির্ণয় করা যায়। এ ছাড়া, রক্ত কালচার বা কফ কালচার করে জীবাণু নির্ণয় করা যায়।

ঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা হলে নিউমোনিয়া সহজেই ভালো হয়ে যায়। তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায় না। তবে দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা না হলে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। আবার বিলম্ব হলে শ্বাসকষ্ট হয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। যেমন- ফুসফুসে ফোড়া, ফুসফুসের পর্দায় পানি জমা, পুঁজ জমা, ব্রঙ্কোপ্লুরায় যোগাযোগ ইত্যাদি হতে পারে।

যখনই ক্লিনিক্যাল ডায়াগনসিস করা হয় নিউমোনিয়া রোগ- যদি রোগী খুব সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় না থাকে তাহলে সাধারণত মুখে সেব্য অ্যান্টিবায়োটিক যেমন- এমক্সিসিলিন, ইরাইথোমাইসিন অথবা কো-ট্রাইঅক্সাজল দিয়ে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করা হয়। যেসব রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন তাদের বেলায় মুখে সেব্য অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করালে চলবে না। তাদের অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে।

লেখক :অধ্যাপক ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, রাফা মেডিক্যাল সার্ভিস, ৫৩, মহাখালী টিবি গেট, ঢাকা। ফোন : ০১৯১১৩৫৫৭৫৬

 


আরো সংবাদ



premium cement
চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’

সকল