২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুস্থ থাকতে কিছু পরামর্শ মেনে চলুন

শাকসবজি স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ, যদি সেগুলো রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত হয় - সংগৃহীত

ব্যস্ত জীবন যাপনের ফলে অনিয়মের জালে বন্দি হয়ে যাচ্ছি আমরা। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম - সব কিছুই যেন অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত অসুস্থ না হচ্ছি, নিয়মের ভেতর আর যাওয়া হয় না। তাই সুস্থ থাকতে কিছু পরামর্শ মেনে চলা জরুরি-

১) সুস্থ থাকতে ওষুধ নয় : আজকাল সুস্থতার জন্য ওষুধনির্ভর হয়ে পড়েছি। সুস্বাস্থ্যের জন্যও তাই। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না, সুস্থতার জন্য বা সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে চারটি বিষয়ের ওপর। যথা- পুষ্টি, ব্যায়াম, উদ্বেগমুক্ত থাকা ও সুনিদ্রা। এ চারটি বিষয় আপনার মাত্রাতিরিক্ত ওজন থেকে ডায়াবেটিস পর্যন্ত মোকাবেলা করতে পারে। এমনকি হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে এ চারটি বিষয়। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে আমাদের খাদ্য, নিদ্রা, চিন্তা ইত্যাদি সবই স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত।

২) ওষুধের অতিরিক্ত বিকল্প থেরাপি : ২০১৭ সালে দেখা গেল OTCS প্রয়োগে যেকোনো শারীরিক সমস্যা থেকে দ্রুত স্বস্তি পাওয়া গেলেও এর ব্যবহারে অবনতি ঘটল। অথচ ২০১৮ সালেও এর প্রয়োগ চলতে থাকল। যেসব ওষুধ প্রয়োগ করা হতো সেগুলো হলো Antacids Antipyretics Antihistamin and Antibiotics। এগুলো রোগের মূলে কাজ করে না। তাই জনগণ এখন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আর সে বিকল্প হলো হরেক রকম থেরাপি। এগুলো হচ্ছে- Naturopathy Homeopathy Yoga, Meditation Message and Acupuncture। কারণ, এগুলোর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়।

৩) শর্করা বা চিনির ব্যবহার হ্রাস : সবাই চিনি ব্যবহার করে। জনগণ এর অধিক ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করতে শিখেছে। তারা এখন চিনির বিকল্প মধু ও স্বাভাবিক মিষ্ট খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হচ্ছে। যেমন- তারা এখন খেজুর ও অন্য মিষ্ট ফলমূল খায়। আমাদের রেস্তোরাঁগুলোতেও এখন এসব সরবরাহ করা হচ্ছে। আমাদের ক্যাফে ও বেকারিগুলো এখন বিকল্প খাবার Millet Cookies, কেক ইত্যাদি সরবরাহ করছে।

৪) বিভিন্ন প্রকার মসলা : আমরা চিরকাল শুনে আসছি, স্বাস্থ্য নির্ভর করে রান্নাঘরের ওপর। ২০১৮ সালে এটা অধিক গুরুত্ব আরোপ করছে। কারণ, মসলার রয়েছে সর্বব্যাপী বহুমুখিতা, যা নানা প্রকার স্বাদ বৃদ্ধি করে, সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং সব রকম মসলা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্যান্সার পর্যন্ত প্রতিরোধ করতে সক্ষম। হলুদ, গোলমরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, ছোট ও বড় এলাচ ইত্যাদি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৫) দুগ্ধজাত দ্রব্যের ওপরে হলো বাদাম দুধ : ভারত হলো পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক দুগ্ধ পানকারী দেশ এবং বাত রোগীর দেশ। এ দেশের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম ঘাটতি দেখা যায়। তাহলে দুধ ও বাতের মধ্যে কি কোনো সম্পর্ক আছে? হ্যাঁ, দুধ একটি সাদা বিষ বলা চলে। কারণ, গরু ও মহিষকে তারা হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ায়। আর এর প্রতিক্রিয়া পড়ে যুবতী ও যুবকদের ওপরে। তাই বলা চলে দুধ আসলে ভালো অপেক্ষা ক্ষতিই করছে- এটি একদল গবেষকের কথা।

তারা বলেছেন, গরু ও মহিষের দুধ অপেক্ষা বাদাম দুধ (Nut Milk) শ্রেয়। কারণ, এগুলো তরুলতা থেকে আসে। এ ছাড়া এতে অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এমিনো এসিড ও ফ্যাটি এসিড আছে।

৬) আমাদের সবাইকে আবার আদিকালের দিকে ফিরে যেতে হবে : ২০১৮ সালে আমাদের আবার স্থানীয় ও মওসুমি খাবারের দিকে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে। কারণ, স্থানীয় ও মওসুমি খাবার স্বাস্থ্যপ্রদ। চাল ও ডালের গ্রহণযোগ্য অনেক আগেই হারিয়েছে। আজ সবাই চাল-ডালের বিকল্প খুঁজছে। প্রতিটি দেশের মানুষ তার দেশের জলবায়ু, তাপমাত্রা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন ও গ্রহণ করে। নিজ নিজ দেশের আবহাওয়া, মাটি ও জলবায়ুর সাথে তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত। তাই তাদের খাদ্যাভ্যাসও সেই অনুযায়ী হতে হয়।

৭) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ : প্রত্যেক রোগের মূল কারণ হলো, এসিডিটি অথবা নিম্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যার ফলে অন্ত্রের সমস্যা হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত শর্করা বা চিনি গ্রহণ, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, এন্টাসিড, জন্ম বিরতিকরণ বড়ি গ্রহণ, তাড়াতাড়ি খাদ্য খাওয়া, উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, দুগ্ধজাত দ্রব্য ও গমজাত খাবার অন্ত্রে নানা প্রকার সমস্যা তৈরি করে। তা থেকে রক্তে সমস্যা হয়। কাজেই স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পেটের নাড়িভুঁড়ির যত্ন নেয়া উচিত। গরু বা মহিষের দুধের দধি, পোলাও, বিরিয়ানি ইত্যাদি থেকে সতর্ক থাকা উচিত। সর্বদা বাড়িতে তৈরি খাবার খাওয়া উচিত। অধিক ভোজন ক্ষতিকর।

৮) বেশি বেশি শাকসবজি খান : আজকাল খাবার আর নিরাপদ নেই। আমরা মুরগি ও প্রাণীর গোশত খাই। কিন্তু ভেবে দেখি না ওইসব মুরগি ও প্রাণী কী খাবার খায়। সে খাবার নিরাপদ কি না। যেসব মাছ, মুরগি ও ডিম খাই; ওই মাছের খাবার কী? আমাদের বিবেচনা করতে হবে। সেসব খাবার মানুষের জন্য কতটা নিরাপদ? অপরপক্ষে শাকসবজি স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ, যদি সেগুলো রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত হয়। তাই আমরা মাছ, মুরগি ও ডিমের বদলে শাকসবজি উৎপাদন করে খেতে পারি। এটা নিরাপদ। অপর পক্ষে মাছ, মুরগি, হাঁস, গরু ও মহিষের খাবার সব রাসায়নিকভাবে তৈরী, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।

৯) আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী থেরাপি খুবই উপকারী : উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও মানসিক চাপ এখন আমাদের জাতীয় সমস্যা। ভুলে গেলে চলবে না যে, শারীরিক সমস্যার মতো মানসিক সমস্যা সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও আবেগিক সমস্যা আমাদের ভুঁড়ি মোটা করে ফেলে। ওজন কমাতে অক্ষমতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও উচ্চ রক্তচাপ- এ সবই আসে মানসিক সমস্যা থেকে। আধুনা এ বিষয়টি বুঝে মানুষ মানসিক থেরাপির দিকে ঝুঁকছে। তারা ইয়োগা, ধ্যান, বিজ্ঞানসম্মত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ, অ্যারোমাথেরাপি, ভিসুয়ালাইজেশন, সাউন্ড হিলিং প্রভৃতি দিকে ঝুঁকছে।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement