২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ 'ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি'

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি - সংগৃহীত

বর্তমানে ডায়াবেটিস অন্যতম একটি রোগ এবং এর কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ এর মধ্যে অন্যতম। এ রোগের মধ্যে প্রধানত ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি (Diabetic Nephropathy) এবং কিডনি বা প্রস্রাবনালীতে সংক্রমণ UTI অন্যতম।

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি কী?
কিডনি সম্পূর্ণভাবে বিকল বা অকেজো হওয়ার কারণের মধ্যে উন্নত দেশে ডায়াবেটিসকে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে একে দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে এই রোগের হার ৪০-৫০ শতাংশ এবং যারা ইনসুলিন-নির্ভর নন তাদের বেলায় ১৫-২০ শতাংশ। কাদের বেলায় ডায়াবেটিসজনিত নেফ্রোপ্যাথি হবে এবং কার ক্ষেত্রে হবে না তা এখনো পরীক্ষাধীন।

পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ছাড়াও জেনেটিক্সের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে কোন ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে নেফ্রোপ্যাথি হবে। সাধারণত
ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে এই রোগের কারণে কিডনিতে প্রাথমিক বিপর্যয় শুরু হয় ৭-১০ বছরের মধ্যে। যখন কোনো উপসর্গই থাকে না শুধু প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় এবং ১০-১৫ বছরের মধ্যে প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় তখন তাকে নেফ্রোটিক সিনড্রম বলে এবং এ সময় শরীরে পানি আসা শুরু হয়। আর ১৫-২০ বছরের মধ্যে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। তখন একে ধীরগতিতে কিডনি ফেইলিউর (CKD) বা বলা হয়।

উপায় : প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির কোনো উপসর্গ থাকে না। উপসর্গ যখন দেখা দেয়, তত দিনে কিডনির অনেকটা ক্ষতি হয়ে যায়। প্রধান উপসর্গগুলো হচ্ছে, পায়ে পানি আসা ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া। এদেরকে পরীক্ষা করে চোখের ও স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতার উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়। সাধারণত ডায়াবেটিস হওয়ার ৫-১৫ বছর পরে এ ধরনের জটিলতা দেখা যায়। এই পর্যায়ে চিকিৎসায় খুব ভালো ফল পাওয়া যায় না। এজন্য নিয়মিত এসব রোগীকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পরপরই প্রস্রাবে অ্যালবুমিন আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। আমরা যে পদ্ধতিতে প্রস্রাবে অ্যালবুমিন পরীক্ষা করে থাকি, তাতে ২৪ ঘণ্টায় অ্যালবুমিন ৩০০ মিলিগ্রামের ওপরে গেলেই ধরতে পারি। কিন্তু ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির প্রাথমিকপর্যায়ে ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাবে অ্যালবুমিনের পরিমাণ ৩০ মিলিগ্রাম গেলেই তাকে Microalbuminuria বা Incipient Nephropathy বলা হয়ে থাকে।

পরীক্ষা পদ্ধতি : প্রাথমিকপর্যায়ে শারীরিক পরীক্ষা করে তেমন কিছুই ধরা পড়ে না। তবে সময়ের তারতম্যে ডায়াবেটিস রোগের জটিলতা, চোখের রেটিনোপ্যাথি, বিভিন্ন প্রকার চর্ম ও স্নায়ুরোগের অবস্থান পরীক্ষা করে ধরা পড়ে। প্রত্যেক ডায়াবেটিক রোগীর সকালে প্রস্রাব পরীক্ষা করে প্রস্রাবে অ্যালবুমিন বা আমিষ, সুগার বা শর্করা আছে কি না তা দেখা উচিত। অণুবীক্ষণের সাহায্যে প্রস্রাবে লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা ও কাস্ট দেখা হয়।

যদি প্রস্রাবে শ্বেতকণিকা পাওয়া যায়, প্রস্রাব কালচারের মাধ্যমে জীবাণুজনিত ইনফেকশন আছে কি না তা নির্ণয় করা হয়ে থাকে। ২৪ ঘণ্টা প্রস্রাব পরীক্ষা করে কত পরিমাণ অ্যালবুমিন যাচ্ছে তা নির্ণয় করা হয়। ২৪ ঘণ্টায় অ্যালবুমিন ৩০০ মিলিগ্রামের ওপরে গেলেই ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি ভাবা হয়। সাধারণত ৩০০ মিলিগ্রামের নিচে এবং ৩০ মিলিগ্রামের ওপরে অ্যালবুমিন গেলে তাকে Microalbuminuria বলে। প্রত্যেক রোগীর রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, বাইকার্বনেট পরীক্ষা করে দেখা হয়। প্রস্রাবে যদি ৩০০ মিলিগ্রামের ওপরে অ্যালবুমিন যায় এবং সাথে সাথে রক্তে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে তখন কিডনি অকেজো হওয়ার প্রাথমিকপর্যায় বলে ধরা হয়।

২৪ ঘণ্টার প্রস্রাবে যদি অ্যালবুমিন ৩ গ্রামের ওপরে যায় তাহলে রোগীর শরীরে পানি জমতে শুরু করে তখন তাকে Nephrotic Syndrome বলা হয়। প্রত্যেক রোগীর রক্তে কোলেস্টেরল এবং ও একই সাথে দেখে নেয়া উচিত। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস শরীরে আছে কি না তাও জেনে নেয়া প্রয়োজন। কিডনির সনোগ্রাম করে তার অবস্থান প্রস্রাবের রাস্তা ও থলির অবস্থা জেনে নেয়া উচিত। প্রয়োজনবোধে কিডনির বায়োপসি পর্যন্ত করা যেতে পারে। ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি ছাড়াও ডায়াবেটিক রোগীর প্রস্রাবে জীবাণুজনিত ইনফেকশন ও স্নায়ুতন্ত্রের বৈকল্য রোগে ভুগতে থাকে। অনেকের নেফ্রাইটস জাতীয় রোগও একই সাথে থাকতে পারে। তাই এসব রোগীর রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত।

চিকিৎসা ব্যবস্থা : ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির চিকিৎসা নির্ভর করে ডায়াবেটিস দ্বারা কিডনি কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর।
প্রাথমিকপর্যায়ে ডায়াবেটিক রোগীর নেফ্রোপ্যাথি ধরা পড়ার সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার লক্ষণও দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সাথে সাথে খাবার তালিকা সঠিক আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হয়। প্রস্রাবে যদি অ্যালবুমিন নির্গত হয় তাহলে ACE inhibitor- জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। ACE inhibitor--জাতীয় ওষুধ কিডনির ছাঁকনির ওপরে কাজ করে। অ্যালবুমিন নির্গত হওয়ার পরিমাণকে কমিয়ে দেয়। রোগীর যদি এপর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করা হয় এবং ACE inhibitor দ্বারাই করা শ্রেয়। এই ওষুধের দ্বারা যদি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে এবং প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নির্গত হওয়ার পরিমাণ কমানোর ব্যবস্থা করে নেফ্রোপ্যাথি হওয়ার পরও কিডনি অকেজো হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমে যায়।

রোগী যখন Diabetic Nephropathy-এর সাথে উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে ইউরিয়া/ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে কিডনি ফেউলিউর (CKD) লক্ষণগুলো নিয়ে আসে তখন এদের চিকিৎসা জটিল হয়। এসব ক্ষেত্রে প্রস্রাবে আমিষ নির্গত হওয়া কমানোর জন্য ACE inhibitor-জাতীয় ওষুধ দেয়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কেননা কিডনির বেশি লোপ পেয়ে গেলে ACE inhibitor- জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এতে রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এপর্যায়ে রোগীর খাবারে আমিষের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। অর্থাৎ রক্তের ক্রিয়েটিনিনের ওপর নির্ভর করে আমিষের পরিমাণ ০.৫-০.৭৫ গ্রাম প্রতি কেজির শরীরের ওজনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।

অনেক রোগীর ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি হওয়ার পর পা ও পেটে পানি আসে। এসব ক্ষেত্রে খাওয়ার পানি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যা ২৪ ঘণ্টায় ১ লিটারের মধ্যে রাখা প্রয়োজন। পানি শরীর থেকে বের করার জন্য Frusemide বা লুপ ডাইয়ুবেটিক্স-জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে এবং কিডনির কার্যকারিতা ও শরীরে পানির পরিমাণ অনুযায়ী ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রোগীর যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য Nifedipin বা ক্যালশিয়াম চ্যানেল বল্কার Fidopa বা মিথাইল ডোপ অথবা Prazosin of Alphapress-জাতীয় ওষুধ নিরাপদ। প্রস্রাবে জীবাণুজনিত ইনফেকশন বা শরীরে কোথাও ইনফেকশন হলেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সময়ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়মিত পরীক্ষা ও চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখা যেমন অত্যাবশ্যক তেমনি, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নির্গত হওয়া শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। এতে ডায়াবেটিসের প্রভাবে দুরারোগ্য কিডনি ফেইলিউরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম আজও স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৮ এপ্রিল খুলে দেয়ার প্রস্তুতি, ক্লাস চলবে শনিবারও মিরসরাইয়ে জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে লুট, মূল হোতা গ্রেফতার

সকল