১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

হৃদরোগীদের খাবার-দাবার  

-

সুপার-পোষকগুলো বর্তমানে মেডিক্যাল আর বৈজ্ঞানিক রিসার্চের মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে। এগুলো হচ্ছে : ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-ই এর অগ্রদূত। এসব পোষক একসাথে মিলে এমন শক্তিশালী জোট সৃষ্টি করে, যেটা শরীরকে বেশ কিছু রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে আর বয়স বাড়ার ক্রিয়াকেও কম করতে পারে। লিখেছেন ডা: গোবিন্দ চন্দ্র দাস
হৃদরোগীদের ভিটামিন বেশ কয়েক ধরনের খাদ্য পদার্থে পাওয়া যায় আর প্রাকৃতিকরূপে ফল আর সবজির মধ্যে পাওয়া যায়, যেগুলো আমরা বেশি পরিমাণে খেতে পারি, বিশেষ করে যখন যেগুলোতে মরশুম থাকে। অন্য দিকে, ওষুধ খেলে তার সাইড এফেক্টস হতে পারে আর প্রাকৃতিক পোষকগুলোর সাথে এর কোনো মিলই নেই। আসলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন আর অন্য খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়গুলোর সমর্থনে এদিকে যথেষ্ট অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।
বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-ই এর অদ্ভুত শক্তির ব্যাপারে প্রচুর অধ্যয়ন করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে ভিটামিন-এ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই সেবন করা ব্যক্তিদের মধ্যে ক্যান্সার, অ্যাঞ্জাইনা আর হৃদয় রোগ কম দেখতে পাওয়া যায়। তাদের আয়ুও লম্বা হয়।
শরীরকে চালানোর জন্য ভোজন থেকে প্রাপ্ত অক্সিজেনের সঞ্চার হিমোগ্লোবিনের লাল রঙের কণাগুলো দ্বারা হয়, যাতে লৌহ থাকে। রক্ত-প্রবাহে অক্সিজেন কোশিকাগুলোকে জীবিত রাখার জন্য গ্রহণ করা হয়। এই ক্রিয়াকে অক্সিডেশন বলা হয়। যদিও এই অক্সিজেন মুক্ত কণার নির্মাণও করে, যেটা অধিক পরিমাণে হয়ে পড়লে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
মুক্ত কণা অক্সিডেশনের ক্রিয়ার সময় সৃষ্টি হয়। যখন শরীর অক্সিজেনের ব্যবহার করে, তখন সেটা এনার্জি তৈরি করার জন্য ভোজনকে বিঘটিত করে। এটা কীটাণু, ওজন আর কর্বন মোনো-অক্সাইডের মতো বিষাক্ত তত্ত্বগুলোকেও নষ্ট করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় মুক্ত কণাও সৃষ্টি হয়। এসব কণা কোশিকাগুলোর ঝিল্লিকে নষ্ট করে দেয় আর ক্রোমোসোন্স এবং জৈবীয় সামগ্রীগুলোর ক্ষতিসাধন করে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস প্যাথোলোজিক্যাল পরিস্থিতিগুলোয় চিকিৎসায় নতুন পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। যেমন :
১) কার্ডিয়োভাস্কুলার রোগ-সিএইচডি, উচ্চ রক্তচাপ।
২) সেরিব্রোভাস্কুলার রোগ।
৩) মেটাবোলিজম রোগ-ডায়াবেটিস মেলিটাস।
৪) শিরার রোগ-এলেজমিট রোগ, মৃগী।
৫) বিপোষক রোগ-চোখের ছানি, আর্থ্রারাইটিস, বার্ধক্য।
৬) ক্যান্সার।
ভিটামিন-এ
ভিটামিন-এ দুই প্রকারের হয়। প্রথম, পশুদের থেকে প্রাপ্ত উৎপাদন, যেমন গোশত আর দুধে পাওয়া যায়। একে রেটিনল বলা হয় এবং দ্বিতীয় ফল আর সবজিতে পাওয়া যায়, যাকে ক্যারোটিন বলা হয়। বিটা-ক্যারোটিনই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টরূপে কাজ করে।
শরীরের বিকাশ আর তন্ত্রগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন-এ এর প্রয়োজন হয়। এর অভাব হয়ে পড়লে ত্বক আর চোখ অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। সুস্থ হাড় আর ভালো দাঁত তৈরি হতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি এর অভাবের চিকিৎসা সময় থাকতে না করানো হয়, তাহলে ব্যক্তি পুরোপুরি অন্ধও হয়ে পড়তে পারেন। ভারতে অন্ধত্বের কারণগুলোর মধ্যে সব থেকে সাধারণ কারণ হচ্ছে ভিটামিন-এ এর অভাব। বিটা- ক্যারোটিন বেশ কিছু ফল আর সবজিতে পাওয়া যায়, যেমন- পালংশাক, ধনেপাতা, বাঁধাকপি, গাজর, আম, টমাটো ইত্যাদি। শরীরে এই ক্যারোটিন, ভিটামিন-এতে পরিবর্তিত হয়ে পড়ে। বিটা-ক্যারোটিন রান্না করলে বা আলট্রা-ভায়োলেট কিরণের ফলে নষ্ট হয় না।
একজন বয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৬০০ মিলিগ্রাম রেটিনল বা ২৪ মিলিগ্রাম বিটা-ক্যারোটিনের প্রয়োজন হয়। বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী মহিলা আর অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই প্রয়োজনটা আরো বেশি হয়। এক মিলিগ্রাম বিটা-ক্যারোটিন= ০.২৫ মিলিগ্রাম রেটিনল।
বিটা-ক্যারোটিন দু’ভাবে কাজ করে। প্রথমে এর কিছু অংশ ভিটামিন-এ’তে পরিবর্তিত হয় আর অবশিষ্ট বিটা-ক্যারোটিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রূপে কাজ করে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, বিটা-ক্যারোটিন আর ভিটামিন-এ এর মধ্যে যেন ভ্রমের সৃষ্টি না হয়ে পড়ে, কারণ এই দুটো হচ্ছে আলাদা আলাদা তত্ত্ব। আমাদের শরীর বিটা-ক্যারোটিনকে ভিটামিন-এ’তে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়।
যদিও দীর্ঘ সময় ধরে বেশি পরিমাণে ভিটামিন-এ সেবন করাটা ক্ষতিকারক লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। যেমনÑ মাথা যন্ত্রণা, গা গোলানো, বমি, আলস্য, শুষ্ক ত্বক, ঠোঁট ফাটা ইত্যাদি।
ভিটামিন-এ এর প্রয়োজন শরীরের বিকাশ আর তার তত্ত্বগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য হয়। এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের কোশিকাগুলোকে স্বরক্ষাত্মক কবচ বা ঝিল্লি প্রদান করা। এটা মিউকাস ঝিল্লিকেও সুরক্ষিত রাখে। এটা ফ্যাটে গুলে যায়। মাছের লিভারের তেল হচ্ছে ভিটামিন-এ এর সব থেকে ভালো প্রাকৃতিক উৎস।
বিটা-ক্যারোটিন হচ্ছে সব থেকে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসগুলোর অন্যতম, যেটা গাছকে সূর্যের আলট্রা-ভায়োলেট কিরণে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এটা হচ্ছে প্রকৃতির সঠিক রক্ষক। তরমুজ, বেদানা, আম আর গাজর, আলু, পালংশাক, টমেটো, আজওয়াইন, জলকুম্ভী আর ফুলকপির মতো ফল আর সবজিতে বিটা-ক্যারোটিন থাকে।
ভিটামিন-সি (এস্কোর্বিক এসিড)
অ্যান্টি- অক্সিডেন্টরূপে কাজ করা ছাড়াও ভিটামিন-সি এর আরো বেশ কিছু গুণ রয়েছে। এটা শরীরের বিকাশ আর শরীরের তত্ত্বগুলো, মাড়ি, দাঁত, রক্তের নাড়ি আর হাড়ে হয়ে পড়া ক্ষতিকে পূরণ করতেও সহায়তা করে। এটা শারীরিক ব্যবস্থায় শামিল থেকে ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাল সংক্রমণের সাথে লড়তেও সহায়তা করে। ভিটামিন-সি এর অভাবের কারণে হেমারেজ ক্ষতস্থান শুকাতে সময় নেয়া, স্কার্বি রোগ, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, হাড়ের ধীরগতিতে নির্মাণ ইত্যাদি লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। ভিটামিন-সি আমলাতে পাওয়া যায়। ভিটামিন-সি এর ভালো উৎস হচ্ছে রসযুক্ত ফল, যেমনÑ পাতিলেবু, মুসম্বী লেবু, কমলা লেবু, পেয়ারা আর সবুজ পাতাওয়ালা সবজি, যেমনÑ পালংশাক ইত্যাদি।
কাটা আর রান্না একে নষ্ট করে দেয়। একজন বয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন এর প্রয়োজন হচ্ছে ৪০ মিলিগ্রাম। এটা শরীরে জমা হয়ে থাকে না অতিরিক্ত মাত্রা প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়।
ভিটামিন-ই
ভিটামিন-ইও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে আর ঝিল্লির ওপর জমা হয়। যার কারণে সেটাকে প্যারাক্সাইডসের ক্রিয়া থেকে রক্ষা করে। বাঁচায় আর অক্সিজেনের বিষাক্ত প্রভাবকেও আটকায়... এই প্রকার এটা অক্সিজেন মুক্ত কণাগুলোকে মজবুত করে তুলে শরীরের রোগগুলোর সাথে লড়ার শক্তি দেয় আর হৃদরোগ থেকেও সুরক্ষা করে।
ভিটামিন-ই গম, অঙ্কুরিত আনাজ, গোটা আনাজ, সালাদ ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া আরো কিছু তত্ত্বও আমাদের শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করে, যেমনÑ সেলেনিয়াম, মেলিডেনম ইত্যাদি।
লেখক : অধ্যাপক, ইমুনোলজি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা।
চেম্বার : হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার, ৫৭/১৫ পান্থপথ, ঢাকা। ফোন : ০১৭১১৫৯৪২২৮

 


আরো সংবাদ



premium cement