২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শ্রবণশক্তি লোপ পেলে

-


অন্তঃকর্ণের একটি বিশেষ ধরনের রোগ হলো অটোস্ক্রেরোসিস যার ফলে রোগীর শ্রবণশক্তি ক্রমবর্ধমান হারে এবং সাধারণত উভয় কানে বিলোপ পেতে থাকে। এটা শ্রবণশক্তি লোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
অটোস্ক্রেরোসিস কাদের হয়?
এ রোগ শুধু মানুষের মধ্যে দেখা যায়। কালোদের তুলনায় সাদা চর্মবিশিষ্ট লোকদের এ রোগের সম্ভাবনা প্রায় ১০ গুণ বেশি। মেয়েদের মধ্যে এ রোগের সম্ভাবনা ছেলেদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি।
অটোস্ক্রেরোসিদের কারণ কী?
কোলাজেন নামক বিশেষ ধরনের কলার বৃদ্ধির অস্বাভাবিকতার কারণে এ রোগ সৃষ্টি হয়। সাধারণত বংশগত কারণে (হেরোডটরি) এ রোগ দেখা দেয়। শতকরা ৫০ জন রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদের কোনো নিকটাত্মীয়ের এ রোগ ছিল বা আছে। এ ছাড়া অন্য যেসব বিষয় এর সাথে জড়িত সেসব হলো হরমোনাল, বিপাকীয়, রক্তনালীর অস্বাভাবিকতাজনিত, ইমিউনোলজিক্যাল, সংক্রমণ ও আঘাতজনিত কারণগুলো। এ বিষয়গুলো প্রকৃতপক্ষে এ রোগের প্রকটতা বাড়িয়ে দেয়।
অটোস্ক্রেরোসিসের লক্ষণ কী?
এ রোগ সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রকাশ পায়। সাধারণত দুই কান একত্রে আক্রান্ত হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক কানেও রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ :
ক) শ্রবণশক্তি লোপ
সাধারণত উভয় কানে ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান হারে শ্রবণশক্তি লোপ পায়। ধীরে ধীরে অগ্রসরমাণ বিধায় অনেক সময় রোগী প্রথম অবস্থায় (২০-৩০ ডেসিবেল পর্যন্ত) বুঝতে পারে না। এসব রোগী হইচইপূর্ণ পরিবেশে অপেক্ষাকৃত ভালো শুনতে পান।
খ) কানে শোঁ শোঁ শব্দ (টিনিটাস)
এটা অটোস্ক্রেরোসিসের একটি সাধারণ লক্ষণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগী এটাকেই প্রধান সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন। এই শোঁ শোঁ শব্দের প্রকটতা পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন হরমোনাল বা বিপাকীয় পরিস্থিতিতে যেমন গর্ভাবস্থায় বা মাসিকের সময় এ ধরনের অস্বাভাবিক শব্দের প্রকটতা বৃদ্ধি পেতে পারে বা নতুনভাবে দেখা দিতে পারে।
গ) রোগীর কথার ধরন
এ ধরনের রোগীরা মৃদু কণ্ঠস্বরে, নিচু গলায় কথা বলে থাকেন যার মাত্রা শ্রবণশক্তি লোপের মাত্রার সাথে সম্পর্কিত। অনেক সময় এ বিশেষ অবস্থাটি রোগীর নিকটজন রোগী কর্তৃক শ্রবণশক্তি লোপ বুঝতে পারার আগেই লক্ষ করে থাকেন।
ঘ) মাথা ঘুরানি বা মাথা ঝিমঝিম করা
সাধারণত এটা খুব প্রকট হয় না এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
এ রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকের জন্য লক্ষণীয় বিষয়গুলো :
রোগীর অতীতে কানের কোনো রোগ ছিল কি না?
রোগী অতীতে মাথায় আঘাত পেয়েছিল কি না?
রোগী শব্দদূষিত পরিবেশে থাকেন বা থাকতেন কি না?
কানের ওপর বিষক্রিয়া আছে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারের ইতিহাস আছে কি না?
হাড় ও জোড়ার কোনো রোগ (পেজেটস ডিজিজ, ওস্টিওজেনেসিস ইমপারপেক্ট) আছে কি না?
রোগীর কানের পর্দায় সাধারণত কোনো পরিবর্তন পাওয়া যায় না।
নাক ও গলা পরীক্ষায় সংক্রমণের কোনো লক্ষণ পাওয়া গেলে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে হবে।
অডিওমেট্রি, টিমপেনোমেট্রি এবং স্টেপেডিয়াস রিফ্রেক্স নামক বিশেষ পরীক্ষাগুলো করতে হবে।

চিকিৎসা
অটোস্কে¬ারোসিসের চিকিৎসাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়
১. মেডিক্যাল চিকিৎসা। ২. হিয়ারিং এইড বা কানে শোনার বিশেষ ধরনের যন্ত্র এবং সার্জিক্যাল চিকিৎসা।
কোন রোগীর ক্ষেত্রে কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে থাকেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তবে শতকরা ৯০ জন রোগীর ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসা সর্বাধিক উপকারী ও ফলপ্রদ।
মেডিক্যাল চিকিৎসা : খুব কমক্ষেত্রে এ ধরনের চিকিৎসা প্রযোজ্য। এ রোগের একটিভ স্টেজে সোডিয়াম ফ্লোরাইড নামক ওষুধ অগ্রসরমান অবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে। এ ধরনের ওষুধ সাবধানতার সাথে একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করতে হয়।
মেডিক্যাল চিকিৎসা : খুব কমক্ষেত্রে এ ধরনের চিকিৎসা প্রযোজ্য। এ রোগের একটিভ স্টেজে সোডিয়াম ক্লোরাইড নামক ওষুধ অগ্রসরমাণ অবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে। এ ধরনের ওষুধ সাবধানতার সাথে একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করতে হয়।
হিয়ারিং এইড : হিয়ারিং এইড বা কানে শোনার জন্য মেশিন ব্যবহারে অনেক ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়। নিম্নলিখিত অবস্থায় হিয়ারিং এইড ব্যবহার করতে হয়Ñ
যদি কোনো কারণে অপারেশন করা নিষিদ্ধ হয়।
যদি রোগী অপারেশনে সম্মত না হন।
রোগী যদি অল্প বয়সের বা বার্ধক্যে উপনীত হন।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা : স্টেপিডেকটমি নামক বিশেষ মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব রোগীর শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অপারেশনের পর শতকরা ৮৫ জনের ক্ষেত্রে শ্রবণশক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় এবং শতকরা ১৫ জনের ক্ষেত্রে শ্রবণশক্তি স্বল্পমাত্রায় বৃদ্ধি পায়।
আমাদের দেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালসহ ঢাকা শহরের কয়েকটি হাসপাতালে এ ধরনের অপারেশনের মাধ্যমে অটোস্ক্রেরোসিস রোগীদের চিকিৎসা হয়ে থাকে।


আরো সংবাদ



premium cement