২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দাঁতের দাগ প্রতিরোধে

দাঁতে কেন দাগ হয়, কী করবেন? - ছবি : সংগৃহীত

বিভিন্ন কারণে দাঁতে দাগ যে কারো হতে পারে। এ দাগ স্থায়ী এবং অস্থায়ী দু’রকমেরই হতে পারে। এবার আসা যাক এসব দাগ নিয়ে কিছু কথায়।
অস্থায়ী দাগের কারণ

১. পানের দাগ- পান, সুপারি, খয়ের ইত্যাদি ব্যবহারে দাঁতের গায়ে গাড় বাদামি রঙয়ের সৃষ্টি হয়।
২. তামাকের দাগ- ধূমপানকারীদের দাঁতে বাদামি বা কালো রঙয়ের দাগ সৃষ্টি হয়। এই দাগ দাঁতের সন্নিকটস্থ তলে এবং দাঁতের জিহ্বার দিকের অংশে বেশি জন্মে।
৩. ধাতব দাগ- দীর্ঘদিন ধরে নলকূপের পানি পান করলে সব দাঁতে বাদামি দাগ সৃষ্টি হতে পারে। কারণ নলকূপের পানিতে লোহার পরিমাণ বেশি থাকে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন আয়রণ জাতীয় ওষুধ সেবনের ফলেও এমন দাগ হতে পারে। এ ছাড়া দাঁতের ওপর জমে থাকা সাদা, খয়েরি বা কালো রঙের পাথরও দাঁতের দাগের মতোই দেখায়।

স্থায়ী দাগের কারণ
১. টেট্রাসাইক্লিনের দাগ- দীর্ঘদিন ধরে টেট্রাসাইক্লিন নামক জীবাণু প্রতিরোধক ওষুধ সেবনে দাঁতের গায়ে বাদামি বা হলদে ধরনের দাগের সৃষ্টি হয়। শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে মা যদি এই ওষুধ সেবন করে, তবে ভূমিষ্ঠ শিশুর দাঁতে এ ধরনের দাগ পরিলক্ষিত হয়। এ জন্য আট বছর বয়স পর্যন্ত টেট্রাসাইক্লিন নামক ওষুধ শিশুদের দেয়া যাবে না।
২. ফ্লুরোসিস- দাঁত গঠনকালে অধিক পরিমাণে ফ্লুরাইডযুক্ত পানি অধিক গ্রহণ করলে দাঁতে বাদামি রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। অনেক সময় অতিরিক্ত ফ্লুরাইড গ্রহণের ফলে দাঁতে ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়। একে বলে মটেলড এনামেল।

৩. দাঁত গঠনকালীন অন্যান্য ত্রুটি- বংশগত ত্রুটি বা রোগাক্রান্ত দাঁতের অবর্ধন বা দাতে অপরিমিত ক্যালসিয়াম সঞ্চয় হলে দাঁতের গায়ে সাদা, হলদে বা বাদামি রঙের দাগ ও ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। অপরিমিত ক্যালসিয়ামের কারণে দাঁতের গঠন খুবই দুর্বল হয় এবং সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
দাঁতের দাগের চিকিৎসা-
বেশির ভাগ অস্থায়ী দাগ ভালোভাবে ব্রাশ করলে উঠে যায়। তবে প্রয়োজন হলে স্কেলিং ও পলিশিং করেও দাঁতের দাগ দূর করা যায়।
স্থায়ী দাগের চিকিৎসা কঠিন। কোনো ছোট দাগ তুলে কেটে সেখানে দাঁতের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ফিলিং করা যায়। আর কোন সমস্যা না থাকলে কোন কিছু করার দরকার নেই।
বিকৃত রঙের এনামেলকে ফিরিয়ে আনতে কম্পেজিট ফিলিং একটি আধুনিক চিকিৎসা।
দাঁতের দাগ প্রতিরোধে করণীয়-

১. পানের সঙ্গে অতিরিক্ত পরিমাণে জর্দা, খয়ের ইত্যাদি না খাওয়া এবং পান খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা।
২. শিশুকালে আট বছর বয়সের মধ্যে এবং গর্ভবর্তী মাকে ‘টেট্রাসাইক্লিন’ জাতীয় ওষুধ না দেয়া।
৩. ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করা।
৪. অধিক আয়রন/ফ্লুরাইডযুক্ত পানি দীর্ঘদিন ব্যবহার না করা।
৫. সঠিক পদ্ধতিতে এবং সঠিক সময়ে অবশ্যই নিয়মিত দাঁত পরিস্কার রাখা।
লেখিকা : ডাইরেক্টর ও ডেন্টাল সার্জন, নাহিদ ডেন্টাল কেয়ার, ১১৭/১, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা। ফোন : ০১৭১২-২৮৫৩৭২


আরো পড়ুন :
শ্রবণশক্তি লোপ পেলে
ডা: নাহিদ শারমিন নূপুর

অন্তঃকর্ণের একটি বিশেষ ধরনের রোগ হলো অটোস্ক্রেরোসিস যার ফলে রোগীর শ্রবণশক্তি ক্রমবর্ধমান হারে এবং সাধারণত উভয় কানে বিলোপ পেতে থাকে। এটা শ্রবণশক্তি লোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
অটোস্ক্রেরোসিস কাদের হয়?

এ রোগ শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে দেখা যায়। কালোদের তুলনায় সাদা চর্মবিশিষ্ট লোকদের এ রোগের সম্ভাবনা প্রায় দশগুণ বেশি। মেয়েদের মধ্যে এ রোগের সম্ভাবনা ছেলেদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি।
অটোস্ক্রেরোসিদের কারণ কি?
কোলাজেন নামক বিশেষ ধরনের কলার বৃদ্ধির অস্বাভাবিকতার কারণে এ রোগ সৃষ্টি হয়। সাধারণত বংশগত কারণে (হেরোডটরি) এ রোগ দেখা দেয়। শতকরা ৫০ জন রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাদের কোনো নিকটাত্মীয়ের এ রোগ ছিল বা আছে। এ ছাড়া অন্য যেসব বিষয় এর সাথে জড়িত সেসব হলো হরমোনাল, বিপাকীয়, রক্তনালীর অস্বাভাবিকতাজনিত, ইমিউনোলজিক্যাল, সংক্রমণ ও আঘাতজনিত কারণসমূহ। এ বিষয়গুলো প্রকৃতপক্ষে এ রোগের প্রকটতা বাড়িয়ে দেয়।

অটোস্ক্রেরোসিসের লক্ষণ কি?
এ রোগ সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রকাশ পায়। সাধারণত দুই কান একত্রে আক্রান্ত হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক কানেও রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ :
ক) শ্রবণশক্তি লোপ
সাধারণত উভয় কানে ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান হারে শ্রবণশক্তি লোপ পায়। ধীরে ধীরে অগ্রসরমাণ বিধায় অনেক সময় রোগী প্রথম অবস্থায় (২০-৩০ ডেসিবেল পর্যন্ত) বুঝতে পারে না। এসব রোগী হই চইপূর্ণ পরিবেশে অপেক্ষাকৃত ভালো শুনতে পান।

খ) কানে শোঁ শোঁ শব্দ (টিনিটাস)
এটা অটোস্ক্রেরোসিসের একটি সাধারণ লক্ষণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগী এটাকেই প্রধান সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন। এই শোঁ শোঁ শব্দের প্রকটতা পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন হরমোনাল বা বিপাকীয় পরিস্থিতিতে যেমন গর্ভাবস্থায় বা মাসিকের সময় এ ধরনের অস্বাভাবিক শব্দের প্রকটতা বৃদ্ধি পেতে পারে বা নতুনভাবে দেখা দিতে পারে।

গ) রোগীর কথার ধরন
এ ধরনের রোগীরা মৃদু কণ্ঠস্বরে, নীচু গলায় কথা বলে থাকেন যার মাত্রা শ্রবণশক্তি লোপের মাত্রার সাথে সম্পর্কিত। অনেক সময় এ বিশেষ অবস্থাটি রোগীর নিকটজন রোগী কর্তৃক শ্রবণশক্তি লোপ বুঝতে পারার আগেই লক্ষ করে থাকেন।
ঘ) মাথা ঘুরানী বা মাথা ঝিমঝিম করা
সাধারণত এটা খুব প্রকট হয় না এবং দীর্ঘ স্থায়ী হয় না।
এ রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকের জন্য লক্ষণীয় বিষয়সমূহ :
রোগীর অতীতে কানের কোনো রোগ ছিল কি না?
রোগী অতীতে মাথায় আঘাত পেয়েছিল কি না?
রোগী শব্দদূষিত পরিবেশে থাকেন বা থাকতেন কি না?

কানের ওপর বিষক্রিয়া আছে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারের ইতিহাস আছে কি না?
হাড় ও জোড়ার কোনো রোগ (পেজেটস ডিজিজ, ওস্টিওজেনেসিস ইমপারপেক্ট) আছে কি না?
রোগীর কানের পর্দায় সাধারণত কোনো পরিবর্তন পওয়া যায় না।
নাক ও গলা পরীক্ষায় সংক্রমণের কোনো লক্ষণ পাওয়া গেলে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে হবে।
অডিওমেট্রি, টিমপেনোমেট্রি এবং স্টেপেডিয়াস রিফ্রেক্স নামক বিশেষ পরীক্ষাগুলো করতে হবে।

চিকিৎসা
অটোস্কে¬ারোসিসের চিকিৎসাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়
১. মেডিক্যাল চিকিৎসা। ২. হিয়ারিং এইড বা কানে শোনার বিশেষ ধরনের যন্ত্র এবং সার্জিক্যাল চিকিৎসা।
কোন রোগীর ক্ষেত্রে কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে থাকেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তবে শতকরা ৯০ জন রোগীর ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসা সর্বাধিক উপকারী ও ফলপ্রদ।
মেডিক্যাল চিকিৎসা : খুব কমক্ষেত্রে এ ধরনের চিকিৎসা প্রযোজ্য্ এ রোগের একটিভ স্টেজে সোডিয়াম ফ্লোরাইড নামক ওষুধ অগ্রসরমান অবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে। এ ধরনের ওষুধ সাবধানতার সহিত একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করতে হয়।
মেডিক্যাল চিকিৎসা : খুব কমক্ষেত্রে এ ধরনের চিকিৎসা প্রযোজ্য। এ রোগের একটিভ স্টেজে সোডিয়াম ক্লোরাইড নামক ওষুধ অগ্রসরমাণ অবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে। এ ধরনের ওষুধ সাবধানতার সাথে একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করতে হয়।

হিয়ারিং এইড : হিয়ারিং এইড বা কানে শোনার জন্য মেশিন ব্যবহারে অনেক ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়। নিম্নলিখিত অবস্থায় হিয়ারিং এইড ব্যবহার করতে হয়-
যদি কোনো কারণে অপারেশন করা নিষিদ্ধ হয়।
যদি রোগী অপারেশনে সম্মত না হন।
রোগী যদি অল্প বয়সের বা বার্ধক্যে উপনীত হন।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা : স্টেপিডেকটমি নামক বিশেষ মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব রোগীর শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অপারেশনের পর শতকরা ৮৫ জনের ক্ষেত্রে শ্রবণশক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় এবং শতকরা ১৫ জনের ক্ষেত্রে শ্রবণশক্তি স্বল্পমাত্রায় বৃদ্ধি পায়।
আমাদের দেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালসহ ঢাকা শহরের কয়েকটি হাসপাতালে এ ধরনের অপারেশনের মাধ্যমে অটোস্ক্রেরোসিস রোগীদের চিকিৎসা হয়ে থাকে।


আরো সংবাদ



premium cement