২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দূর হ বিষণœতা

-


‘মন ভালো নেই’Ñ এই কথাটা অনেক লোকের মুখেই শোনা যায়। নিত্যদিনের অসুখী ভাব মানুষের মনে জন্ম দেয় বিষণœতার। কারণ একমাত্র মনের মধ্যে সীমিত নয়Ñ পারিপার্শ্বিক কারণ জড়িয়ে আছে এর সাথে। বিষণœতা মূলত এমন এক ব্যাধি যা মানুষকে আত্মহননে উৎসাহ জোগায়। যারা সারাক্ষণ বিষণœতায় ভোগেন তাদের মধ্যে দেখা দেয় নানা উপসর্গ। ঘুমের ব্যাঘাত, অবসাদগ্রস্ততা, মাথাব্যথা, বুকে কিংবা পেটে ব্যথা, খাবার গ্রহণে অনীহা, ওজন কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, যৌনশক্তি হ্রাস পাওয়া, কোনো কিছুতে মনোনিবেশ না করাÑ এসব যে নিত্যদিনের সঙ্গী। বিষণœতাগ্রস্ত ব্যক্তিদের জীবনের প্রতি চলে আসে প্রচণ্ড হতাশা। সমীক্ষায় দেখা গেছে, পুরুষদের চেয়ে মহিলারাই বেশি করে বিষণœতায় ভোগেন। তবে বিষণœতার জন্য আত্মহত্যা করে থাকেন পুরুষেরাই বেশি। কেন এ বিষণœতা।
গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনের প্রাপ্তির সাথে যখন স্বপ্নের অসঙ্গতি ঘটে তখন বিষণœতা ভর করে। প্রতিদিন একঘেয়ে কাজও বিষণœতার এটি কারণ। এ ছাড়া যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করছেন সেগুলো বিষণœতা ঘটাতে পারে। এই ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে রেসারপিন, মেথাইল ডোপা, বেটা বব্লকার প্রভৃতি। হৃদরোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ ডিজিটালিস অনেক ক্ষেত্রে বিষণœতার কারণ। হাঁপানি, চর্মরোগ, আর্থ্রাইটিস প্রভৃতি অসুখে ব্যবহৃত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বিষণœতা ঘটায়। যারা সর্দি-কাশির জন্য নিয়মিত এন্টিহিস্টামিন ওষুধ খেয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে বিষণœতা। যারা থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায় ভুগছেন তারাও বিষাদগ্রস্ত হয়ে ওঠেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের পূর্বে বিষণœতায় ভোগার লক্ষণ দেখা দেয়। কেউ কেউ সন্তান প্রসাবের পর হরমোনের মাত্রা পরিবর্তনের জন্য বিষণœতায় আক্রান্ত হন। ডায়াবেটিস কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগও বিষণœতার জন্য দায়ী। শরীরে পুষ্টির অভাব ঘটলে বিষণœতা দেখা দিতে পারে। যৌন কাজে অসফলতা বিষণœতার একটি প্রধান কারণ। মোটামুটিভাবে নানা কারণে একজন মানুষ বিষণœতায় আক্রান্ত হতে পারে।
কিভাবে দূর করবেন এই বিষণœতা
১। কারণ নির্ণয় করুন
অনেকেই জানেন না তিনি কী কারণে বিষণœতায় ভুগছেন। মন খারাপ হলে কিংবা কোনো কিছু ভালো না লাগলে তার কারণ খুঁজে বের করুন। যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। আপনি যদি কোনো বিশেষ ওষুধ খেতে থাকেন সে ব্যাপারটা চিকিৎসককে বলুন। কারণ বিভিন্ন ওষুধ বিষণœতার সৃষ্টি করে।
২. পুষ্টিযুক্ত খাবার খান
গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব ঘটলে বিষণœতা দেখা দেয়। ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের অভাবে বিষণœতা দেখা দিতে পারে। শরীরে লৌহ উপাদানে ঘাটতি বিষণœতার জন্ম দেয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক চলাকালীন এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই সর্বদা পুষ্টিযুক্ত খাবার খান। ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যেসব খাদ্যদ্রব্যের রয়েছে সেই খাবারগুলো বেছে বেশি করে খান।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আপনার বিষণœতা কাটিয়ে দেবে। প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় অন্তত এক মাইল মুক্ত বাতাসে হেঁটে আসুন। খুব বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই। স্রেফ হাঁটুন। এ ছাড়া হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। ১০ বার বুক ডন, ওঠবস, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটা এই চারটি বিষয়ের মধ্যে থেকে আপনার পছন্দমতো একটি বেছে নিয়ে অনুশীলন করুন। কেটে যাবে আপনার বিষণœতা।
৪. প্রাণ খুলে হাসুন
কখনো মুখ গোমড়া করে থাকবেন না। যেকোনো হালকা বিষয় হলেও হাসতে শিখুন। গবেষণায় দেখা গেছে হাসি ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ করে।
৫. দুশ্চিন্তাকে তাড়া করুন
মনে রাখবেন, কখনো যেন দুশ্চিন্তা আপনাকে তাড়া না করে বরং আপনি দুশ্চিন্তাকে তারা করুন। জীবনের সবকিছুকে সহজভাবে নিন। মনে রাখবেন, একজন মানুষ এক জীবনে সবকিছু হতে পারে না। আপনি যা হতে পারেননি তার জন্য মনে ক্ষোভ পুষে রাখবেন না। বরং বর্তমান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। বর্তমানকে সাজিয়ে তুলুন আপনার সামর্থ্য দিয়ে।
৬. বেড়িয়ে আসুন কিছু দিন
মাঝে মধ্যে একঘেয়ে জীবন থেকে কিছু দিনের জন্য স্বস্তি পেতে বেড়িয়ে আসুন অন্য কোনো জায়গা থেকে। আপনার প্রিয়জনকে সাথে নিন। উপভোগ করুন জীবনের অপার মাধুর্য। প্রকৃতিকে উপলব্ধি করুন। সাগর তীরে গিয়ে একেবারে ছেলে মানুষ হয়ে যান। দেখবেন বেঁচে থাকাটা মন্দ না।
৭. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি এসব করেও আপনার বিষণœতা না কাটে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকই আপনার ভালো বন্ধু, যিনি বাতলে দেবেন আপনার সঠিক গন্তব্যের দিকনির্দেশনা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা।
ফোন : ০১৬৭৩৪৪৯০৮৩ (রোমান)

 


আরো সংবাদ



premium cement