২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ব্রন থেকে বাঁচার সহজ উপায়

ব্রন থেকে বাঁচার সহজ উপায় - ছবি : সংগৃহীত

সুন্দর মুখশ্রী নষ্ট হয়ে অসুন্দর, ক্ষত ও অবাঞ্ছিত দাগ কার নয় দুশ্চিন্তার কারণ। আর বিশেষ ভাবে সুন্দরী ললনাদের জন্য বয়ে আনে এক দুৎসহ যাতনা। উঠতি বয়সের যুবক- যুবতীদের জন্য এটি একটি দারুন মন কষ্টের এবং যেন এক সামাজিক আতঙ্ক। ব্রন বা একনি হচ্ছে সিবেসাস গ্লান্ডের গোলযোগ সংক্রান্ত ত্বকের একটি খুব প্রচলিত রোগ। সিবেসাস গ্লান্ডগুলো মাথা ও মুখসহ মানব দেহের সর্বত্র ত্বকের নিচে হেয়ার ফলিকল বা কেশ গর্ভের গায়ে অবস্থান করে। এরা সিরাস নামে এক প্রকার তৈলাক্ত পদার্থ ক্ষরণ করে যা লোমকূপ দিয়ে দেহের বাইরে এসে মুখ ও গাত্র ত্বককে মসৃণ ও তৈলাক্ত / তেলতেলে রাখে এবং চুলকে ও তৈলাক্ত রাখে। এর ফলে ত্বকের কোষগুলো নরম থাকে এবং অকালে শুকিয়ে বা কুচকে যায় না। ত¦কের যেসব সূক্ষ সূক্ষ ছিদ্র বা লোমকূপ দিয়ে সিরাম বের হয় সেগুলো কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে সিরাম বাইরে আসতে পারে না। উহা জমতে থাকে এবং একসময় চামড়া ঠেলে উপরে উঠে, ফলে পিমপেল বা ফুসকুড়ির মতো দেখায় অনেক সময় ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে পুঁজ ও জমে- এগুলোকেই ব্রন বলে।

সাধারণত ১২/১৪ বৎসর বয়স হতে ২৮-৩০ বৎসর বয়স পর্যন্ত মুখে ব্রন দেখা দেয়। ২০/২২ বৎসর বয়সেই সবচেয়ে বেশি থাকে- (১) জন্মগত বা পূর্ব পুরুষের ধারা অনুসারে ব্রন হতে পারে। (২) হরমোন- এ্যান্ড্রোজেন, এ্ষ্ট্রাজেন সিরাম ও ত্বকে বসবাস কারী জীবানুদের ইন্ট্রার এ্যাকশন বা ভারসাম্যের গোলযোগ হেতু। বিশেষ করে বয়সন্ধিকালে সেক্স হর্মোন ক্ষরণ বৃদ্ধির ফলে সিবেসাম গ্লান্ড আকারে বেরে যায় এবং কর্মতৎপরতা ও বৃদ্ধি পেয়ে বেশি করে সিরাম বা তেল উৎপন্ন হয়ে ব্রন ডেকে আনতে সাহায্য করে। (৩) খাবার থেকে- অধিক মশলাযুক্ত বা গরম মশলা বেশি খেলে এই রোগ হতে পারে এবং এলার্জিটিক খাবারে বেড়ে যেতে পারে। (৪) যাদের কোষ্ঠ কাঠিন্য সর্বদা অবস্থান করে। (৫) অনিয়মিতভাবে ২/৪ দিন পর পর পায়খানা হয় তাদের ব্রন দেখা দেয়। (৬) অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় সেবাই ব্রনের অন্যতম কারণ হতে পারে এবং রাত্রি জাগরণ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা জীবন যাপন, আলো বাতাসহীন ঘরে থাকা। (৭) লিভারের ক্রিয়ার গোলযোগ, পেটের পীড়ায় ভোগা। (৮) উত্তেজক বস্তুর ব্যবহার, অতিরিক্ত কসমেটিকস ব্যবহারের কুফল এবং অত্যান্ত গরম ঠান্ডা থেকে। (৯) বিসদৃশ ঔষধ সেবনের ফলে এবং জন্ম নিয়ন্ত্রনের বড়ি খাওয়ার ফলে ব্রন হতে পারে। (১০) অতিরিক্ত আবেগের ফলে। (১১) মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব দেখা দেয়ার পূর্বে/পরে/সময়ে এবং গোলযোগের ফলে।

লক্ষণানুসারে ব্রন চার শ্রেণীতে ভাগ করা যায় যথা
১। একনি ভালগারিস এ ব্রন অতি সাধারণ প্রকৃতির এতে সাদা শাসের মত থাকে । ৪/৬ দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে কমে যায়। পরে কালো দাগও মিলে যায়।
২। একনি রেজিওলো ইহা রক্তিম বর্ণের আশ-পাশের শিরাগুলো স্ফীত হয়ে উঠে। গরম থাকে। ব্যথা বেদনার সৃষ্টি হয়। সহজে আরোগ্য হতে চায় না।
৩। একনি ইন্ডোরেটা আকারে গুটিকার মতো। পরিণত বয়সে এবং পুরুষদের বেলায় বেশি দেখা যায় এবং মাসিক ঋতুর গোলযোগ হেতু।

লক্ষণ :
১) ছোট ফুসকুড়ির ন্যায় উদ্ভেদ। ২) গালে মুখে এবং পিঠে বেশী হয়। ৩) ফুসকুড়িগুলো স্ফীত হয়ে, লাল হয়,ব্যাথা থাকে। ৪) উদ্ভেদগুলো টিপে দিলে অনেক সময় ভাতের ন্যায় পদার্থ বের হয়। ৫) উদ্ভেদ গুলো ধীরে ধীরে মুখমন্ডলের চারদিকে এবং বুকে পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। ৬) অনেক সময় পেকে পুঁজ হয়ে এবং ব্যথা করতে পারে। চাপের ফলে ফোড়ার আকার ধারণ করতে পারে।

ব্রনে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গুলো লক্ষণানুসারে সফলতার সাথে ব্যবহার হয়- আর্নিকা মন্ট, ডালকামরা, বেলিসপেরিনামে, ব্যাসিলিনাম, থুজা অক্স, হাইপেরিকাম, বেলাডোনা, কেলিব্লোম, কার্বোলিক এসিড, নেট্রাম মিউর ইত্যাদি।

সতর্কতা :
যারা ব্রনে ভোগে তাদের মুখে তেল বা ক্রিম মাখা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করবেন না। ব্রন মুখে হাত/ নখ লগিানো কোনক্রমেই সমচিন নয়। বেশী তৈলাক্ত,চুলকানী যুক্ত
খাবার বর্জনীয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে।
করণীয় :
ডাক্তারের পরামর্শ মতে ঔষধ সেবন, ভাল সাবান দিয়ে আলতুভাবে মুখ ধুয়ে পরিস্কার রেখে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে অতি অল্প সময়ে হোমিওপ্যাথিতে ব্রন এবং ব্রনের দাগ থেকে চিরমুক্তি সম্ভব ইন্শাল্লাহ।

লেখক : তানজিম হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ।
চেম্বার : সিটি হোমিও ইন্টারন্যাশনাল ২৩, জয়কালি মন্দির, ঢাকা।
ফোন : ০১৯১২৮৪২৫৮৮

আরো পড়ুন :
দূর হ বিষণ্নতা
ডা: মিজানুর রহমান কল্লোল

‘মন ভালো নেই- এই কথাটা অনেক লোকের মুখেই শোনা যায়। নিত্যদিনের অসুখী ভাব মানুষের মনে জন্ম দেয় বিষণ্নতার। কারণ একমাত্র মনে মধ্যে সীমিত নয়- পারিপার্শ্বিক কারণ জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। বিষণœতা মূলত এমন এক ব্যাধি যা মানুষকে আত্মহননে উৎসাহ জোগায়। যারা সারাক্ষণ বিষণ্নতায় ভোগেন তাদের মধ্যে দেখা দেয় নানা উপসর্গ। ঘুমের ব্যাঘাত, অবসাদগ্রস্ততা, মাথাব্যথা, বুকে কিংবা পেটে ব্যথা, খাবার গ্রহণে অনীহা, ওজন কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, যৌনশক্তি হ্রাস পাওয়া, কোনো কিছুতে মনোনিবেশ না করা- এসব যে নিত্যদিনের সঙ্গী। বিষণ্নতাগ্রস্ত ব্যক্তিদের জীবনের প্রতি চলে আসে প্রচণ্ড হতাশা। সমীক্ষায় দেখা গেছে, পুরুষদের চেয়ে মহিলারাই বেশি করে বিষণ্নতায় ভোগেন। তবে বিষণ্নতার জন্য আত্মহত্যা করে থাকেন পুরুষরাই বেশি। কেন এ বিষণ্নতা।

গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনের প্রাপ্তির সঙ্গে যখন স্বপ্নের অসঙ্গতি ঘটে তখন বিষণ্নতা ভর করে। প্রতিদিন একঘেয়ে কাজও বিষণ্নতার এটি কারণ। এ ছাড়া যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করছেন সেগুলো বিষণœতা ঘটাতে পারে। এই ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে রেসারপিন, মেথাইল ডোপা, বেটা বব্লকার প্রভৃতি। হৃদরোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ ডিজিটালিস অনেক ক্ষেত্রে বিষণ্নতার কারণ। হাঁপানি, চর্মরোগ, আর্থ্রাইটিস প্রভৃতি অসুখে ব্যবহৃত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বিষণ্নতা ঘটায়। যারা সর্দি-কাশির জন্য নিয়মিত এন্টিহিস্টামিন ওষুধ খেয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে বিষণ্নতা। যারা থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায় ভুগছেন তারাও বিষাদগ্রস্ত হয়ে ওঠেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের পূর্বে বিষণ্নতায় ভোগার লক্ষণ দেখা দেয়। কেউ কেউ সন্তান প্রসাবের পর হরমোনের মাত্রা পরিবর্তনের জন্য বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। ডায়াবেটিস কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগও বিষণ্নতার জন্য দায়ী। শরীরে পুষ্টির অভাব ঘটলে বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। যৌন কাজে অসফলতা বিষণ্নতার একটি প্রধান কারণ। মোটামুটিভাবে নানা কারণে একজন মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারে।

কিভাবে দূর করবেন এই বিষণ্নতা
১। কারণ নির্ণয় করুন
অনেকেই জানেন না তিনি কি কারণে বিষণ্নতায় ভুগছেন। মন খারাপ হলে কিংবা কোনো কিছু ভালো না লাগলে তার কারণ খুঁজে বের করুন। যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। আপনি যদি কোনো বিশেষ ওষুধ খেতে থাকেন সে ব্যাপারটা চিকিৎসককে বলুন। কারণ বিভিন্ন ওষুধ নিণœতার সৃষ্টি করে।
২. পৃষ্টিযুক্ত খাবার খান
গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব ঘটলে বিষণ্নতা দেখা দেয়। ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের অভাবে বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। শরীরে লৌহ উপাদানে ঘাটতি বিষণ্নতার জন্ম দেয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক চলাকালীন এটা বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই সর্বদা পুষ্টিযুক্ত খাবার খান। ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যেসব খাদ্যদ্রব্যের রয়েছে সেই খাবারগুলো বেছে বেশি করে খান।

৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার বিষণ্নতা কাটিয়ে দেবে। প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় অন্তত এক মাইল মুক্ত বাতাসে হেঁটে আসুন। খুব বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই। স্রেফ হাঁটুন। এ ছাড়া হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। ১০ বার বুক ডন, ওঠবস, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটা এই চারটি বিষয়ের মধ্যে থেকে আপনার পছন্দমতো একটি বেছে নিয়ে অনুশীলন করুন। কেটে যাবে আপনার বিষণ্নতা।

৪. প্রাণ খুলে হাসুন
কখনো মুখ গোমড়া করে থাকবেন না। যেকোনো হালকা বিষয় হলেও হাসতে শিখুন। গবেষণায় দেখা গেছে হাসি ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ করে।

৫. দুশ্চিন্তাকে তাড়া করুন
মনে রাখবেন, কখনো যেন দুশ্চিন্তা আপনাকে তাড়া না করে বরং আপনি দুশ্চিন্তাকে তারা করুন। জীবনের সবকিছুকে সহজভাবে নিন। মনে রাখবেন, একজন মানুষ এক জীবনে সবকিছু হতে পারে না। আপনি যা হতে পারেননি তার জন্য মনে ক্ষোভ পুষে রাখবেন না। বরং বর্তমান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। বর্তমানকে সাজিয়ে তুলুন আপনার সামর্থ্য দিয়ে।

৬. বেড়িয়ে আসুন কিছু দিন
মাঝে মাঝে একঘেয়ে জীবন থেকে কিছুদিনের জন্য স্বস্তি পেতে বেড়িয়ে আসুন অন্য কোনো জায়গা থেকে। আপনার প্রিয়জনকে সঙ্গে নিন। উপভোগ করুন জীবনের অপার মাধুর্য। প্রকৃতিকে উপলব্ধি করুন। সাগর তীরে গিয়ে একেবারে ছেলে মানুষ হয়ে যান। দেখবেন বেঁচে থাকাটা মন্দ না।

৭. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি এসব করেও আপনার বিষণ্নতা না কাটে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকই আপনার ভালো বন্ধু, যিনি বাতলে দেবেন আপনার সঠিক গন্তব্যের দিকনির্দেশনা।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা।
ফোন: ০১৬৭৩৪৪৯০৮৩ (রোমান)


আরো সংবাদ



premium cement