২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

'আমার চোখের সামনে ভাইয়ের ছিন্ন-ভিন্ন লাশ পড়েছিল'

ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মারিয়াম - সংগৃহীত

প্রতিদিনের মতোই গত শুক্রবার কাজে যান সাংবাদিক মারিয়াম আবু দাক্কা। অফিসে পৌঁছে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সেনাদের সাথে প্রতি নিয়ত বাধা সংঘর্ষের আপডেট জানাচ্ছিলেন। তিনি দর্শকদের জানান, কিছুক্ষণ আগেই ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের উপর বিমান হামলা ও ট্যাঙ্ক থেকে গোলা বর্ষণ করেছে ইসরাইলি সেনারা। এরপর ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি।

সেখানে হতাহতদের খবর জানতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর ঘটনায় হতাহতদের নাম-পরিচয়ের তালিকা চলে আসে। এর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জানেন না, কী মর্মান্তিক ঘটনা তার জন্য অপেক্ষা করছিল।

একের পর এক নাম ঘোষণা হচ্ছিল, হঠাৎ তিনি তার বড় ভাইয়ের নাম শুনতে পান। তিনি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। আসলেই তিনি তার ভাইয়ের নাম শুনেছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন মারিয়াম। ক্যামেরা নামিয়ে ফেলেন।

হ্যাঁ, ভাইয়ের নামই শুনেছেন তিনি। মারিয়ারের বড় ভাইয়ের নাম মোহাম্মদ আবু ফারহানা।

তখন নিজেকে সামলে নেন মারিয়াম। ফোন করে অফিসে সহকর্মীকে জানান, খবরটি প্রচার করতে বলেন।

সেই দিনের ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয় আল-কুদস নেটওয়ার্ককে মারিয়াম বলেন, 'আমি কখনো ভাবিনি, একদিন আমাকে আমার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর প্রচার করতে হবে।'

বলেন, 'আমার চোখের সামনে বিমান হামলায় ছিন্ন-ভিন্ন লাশ পড়েছিল। আমার ভাইয়ের লাশও ছিল। কিন্তু কাউকে চেনার উপায় ছিল না।'

মারিয়াম বলতে থাকেন, 'আমি যখন নিহতের মধ্যে আমার ভাইয়ের নাম শুনার পর তাকে নিয়ে খুব বেশি সময় শোক করেত পারিনি। কারণ আমি আমার ছোট ভাইদের নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। কারণ আমার অন্য ভাইরা হামলায় আহতদের সেবার কাজে নিয়োজিত ছিল। ইসরাইলি সেনাদের গুলির মুখে আমার ভাই তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। আমি শুধু দেখছিলাম আর দোয়া করছিলাম, তার যেন কিছু না হয়।'

 

আরো পড়ুন : ইসরাইলি সেনার গুলিতে ফিলিস্তিনি কিশোর নিহত

অধিকৃত পশ্চিম তীরে রাতে অভিযান চলাকালে ইসরাইলি সৈন্যের গুলিতে ফিলিস্তিনি এক কিশোর নিহত হয়েছে। আজ সোমবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একথা জানিয়েছে। খবর এএফপি’র।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, পশ্চিম তীরের দক্ষিণাঞ্চলীয় বেথেলহামে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে সংঘর্ষ চলাকালে ইসরাইলি সেনার গুলিতে আরকান মিজহার (১৫) নিহত হন।

এদিকে ইসরাইলি সেনা সূত্র বলছে, তাদের সৈন্যরা এ শরণার্থী শিবিরে প্রবেশ করে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে। এতে সেখানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

 

আরো পড়ুন : জর্দানে সরিয়ে নেয়া হলো সিরিয়া থেকে ৮০০ হোয়াইট হেলমেট ও পরিবারের সদস্যদের

দক্ষিণ-পশ্চিম সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে বেসামরিক প্রতিরক্ষাবাহিনী হোয়াইট হেলমেটসের স্বেচ্ছাসেবকদের সরিয়ে নিচ্ছে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর অনুরোধে তারা এ কাজ করছে বলে গতকাল রোববার ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনীগুলো (আইডিএফ) জানিয়েছে।

ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো বলছে, তেল আবিব তাদের দখলে থাকা গোলান মালভূমি দিয়ে এক রাতের মধ্যেই হোয়াইট হেলমেটসের সদস্য ও তাদের পরিবার পরিজন মিলিয়ে প্রায় ৮০০ জনকে সরিয়ে নিয়েছে। সিরিয়ার যুদ্ধ ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে আটকেপড়া সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে ২০১৩ সাল থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল হোয়াইট হেলমেটস। বেসামরিক রক্ষাবাহিনী হিসেবে কাজ করা গোষ্ঠীটি নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী ও নির্দলীয় হিসেবে পরিচয় দিলেও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার মিত্র রাশিয়া সংগঠনটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করার অভিযোগ করে আসছিল।

সরিয়ে নেয়া হোয়াইট হেলমেটসের সদস্যরা সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কাজ করছিল এবং সরকারি বাহিনীর আক্রমণের ফাঁদে আটকা পড়েছিল। বেসরকারি সংগঠনটির সদস্য ও তাদের পরিবার পরিজনের জীবন ‘ঝুঁকির মুখে থাকায় মানবিক এ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে’ বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনী। বেসামরিক নাগরিকদের ‘ইসরাইলের ভেতর দিয়ে পার্শ্ববর্তী এক দেশে সরিয়ে নেয়া হয়েছে’ বলে দাবি করেছে তারা।

সিরিয়ায় সাত বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ইসরাইল সরাসরি জড়িত না হলেও সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে কার্যত কয়েক দশক ধরেই যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। হোয়াইট হেলমেটসের সদস্যদের সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টতা থাকলেও ‘সিরীয় সংঘাতে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে ইসরাইল অবিচল আছে’ বলেও জানিয়েছে আইডিএফ। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এমানুয়েল নাশোন পরে হোয়াইট হেলমেটসের সদস্য ও তাদের পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও স্বেচ্ছাসেবীদের কোন দেশ গ্রহণ করেছে সে বিষয়ে মুখ খোলেননি। আইডিএফও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

জর্দানের সরকার পরে ৮০০ সিরীয় নাগরিককে তাদের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে সরিয়ে নেয়ার একটি কার্যক্রমে জাতিসঙ্ঘের অনুমতি দেয়ার খবর নিশ্চিত করে। জর্দান বলেছে, (হোয়াইট হেলমেটসের সদস্য ও পরিবারবর্গের) ‘জীবনের ঝুঁকি থাকায়’ ব্রিটেন, জার্মানি ও কানাডা স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ গ্রহণ করতে আইনত বাধ্য। সরিয়ে নেয়া হোয়েইট হেলমেটদের জর্দানের একটি ‘সংরক্ষিত এলাকায়’ রাখা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement