১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনারি হৃদরোগে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট

-

সুপার-পোষকগুলো বর্তমানে মেডিক্যাল আর বৈজ্ঞানিক রিসার্চের মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে। এগুলো হচ্ছে : ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-ই এর অগ্রদূত। এসব পোষক একসাথে মিলে এমন শক্তিশালী জোট সৃষ্টি করে, যেটা শরীরকে বেশ কিছু রোগের হাত থেকে রা করতে পারে আর বয়স বাড়ার ক্রিয়াকেও কম করতে পারে। লিখেছেন ডা: গোবিন্দ চন্দ্র দাস
মানব দেহে প্রয়োজনীয় ভিটামিন বেশ কয়েক ধরনের খাদ্য পদার্থে পাওয়া যায় আর প্রাকৃতিকরূপে ফল আর সবজির মধ্যে পাওয়া যায়, যেগুলো আমরা বেশি পরিমাণে খেতে পারি, বিশেষ করে যখন যেগুলোর মওসুম থাকে। অন্য দিকে, ওষুধ খেলে তার সাইড এফেক্টস হতে পারে আর প্রাকৃতিক পোষকগুলোর সাথে এর কোনো মিলই নেই। আসলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর অন্য খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়গুলোর সমর্থনে এ দিকে যথেষ্ট অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।
বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-ই এর অদ্ভুত শক্তির ব্যাপারে প্রচুর অধ্যয়ন করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে ভিটামিন-এ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই সেবন করা ব্যক্তিদের মধ্যে ক্যান্সার, অ্যাঞ্জাইনা আর হৃদরোগ কম দেখতে পাওয়া যায়। তাদের আয়ুও লম্বা হয়।
শরীরকে চালানোর জন্য ভোজন থেকে প্রাপ্ত অক্সিজেনের সঞ্চার হিমোগ্লোবিনের লাল রঙের কণাগুলো দ্বারা হয়, যাতে লৌহ থাকে। রক্তপ্রবাহে অক্সিজেন কোশিকাগুলোকে জীবিত রাখার জন্য গ্রহণ করা হয়। এই ক্রিয়াকে অক্সিডেশন বলা হয়। যদিও এই অক্সিজেন মুক্ত কণার নির্মাণও করে, যেটা অধিক পরিমাণে হয়ে পড়লে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
মুক্ত কণা অক্সিডেশনের ক্রিয়ার সময় সৃষ্টি হয়। যখন শরীর অক্সিজেনের ব্যবহার করে, তখন সেটা এনার্জি তৈরি করার জন্য ভোজনকে বিঘটিত করে। এটা কীটাণু, ওজন আর কর্বন মনো-অক্সাইডের মতো বিষাক্ত তত্ত্বগুলোকেও নষ্ট করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় মুক্ত কণাও সৃষ্টি হয়। এ সব কণা কোশিকাগুলোর ঝিল্লিকে নষ্ট করে দেয় আর ক্রোমোসোন্স এবং জৈবীয় সামগ্রীগুলোর তিসাধন করে। এটা মূল্যবান অ্যাঞ্জাইমগুলোকেও নষ্ট করে ফেলে, যার কারণে পুরো শরীরে নষ্ট হয়ে পড়ার এক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে পড়ে। এভাবে মুক্ত কণা করোনারি হৃদরোগ, ফসফুসের রোগ, কয়েক ধরনের ক্যান্সার, চোখের ছানি, আর্থ্রারাইটিস, পার্কিংসন্স রোগ আর বার্ধক্যের মতো কমপে ৫০ শতাংশ রোগের এক বড় কারণ হয়ে ওঠে।
মুক্ত কণা থেকে হওয়া তিকে আমরা দু’ভাবে ভাগ করতে পারি। প্রথম, আমাদের এমন তত্ত্ব আর গতিবিধির হাত থেকে বাঁচতে হবে, যেগুলো মুক্ত কণা সৃষ্টি হতে সহায়তা করে, যেমনÑসিগারেট, প্রদূষণ আর সূর্যের আল্ট্রভায়োলেট কিরণ।
দ্বিতীয়ত, এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা নিজেদের দৈনিক আহারে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি আর মিটামিন-ই সেবন করে বেশি মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গ্রহণ করব।
যদিও ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-ই মুক্ত কণা থেকে হওয়া তির সাথে লড়তে সহায়তা করে, বায়ু প্রদূষণও এসব গুরুত্বপূর্ণ পোষকের সাপ্লাইকে কম করে তোলে। অধ্যয়ন থেকে এটা জানতে পারা গেছে যে, শহরে বাস করা ব্যক্তিদের মধ্যে, যারা প্রদূষিত হাওয়ায় শ্বাস নেন, অ্যান্টি অক্সিডেন্টের স্তর কম থাকে। এর ফলে শরীরে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-ই এর আপূর্তি বিপজ্জনকভাবে কমে আসে। এমনটা হলে এগুলোর জায়গা মুক্ত কণা নিয়ে আর অক্সিডেটিভ চাপের সৃষ্টি হয়ে পড়ে। আমাদের ভোজনে মুক্ত কণা থাকাটা আমাদের পে বিপজ্জনক হয়। এর মুখ্য উৎস হচ্ছে ফ্যাট (যেমন বেশি তাপমাত্রায় গরম করা রান্না করার তেল)। ফ্যাটকে যে মুহূর্তে গরম করা হয়, তার রাসায়নিক রচনা ভেঙে প্যারাক্সাইডস্ তৈরি করে। এগুলো ভেঙে প্যারাক্সাইডস ডাইড্রোক্সিল কণা তৈরি করে। কণার এরূপ অত্যধিক ক্রিয়াশীল হয় আর কোশিকাগুলোর আর ডিএনএ-এর প্রচণ্ড ক্ষতি করে (সূর্যমুখীর তেলের মতো পোলি-আনস্যারচুরেটেড ফ্যাট বেশি তাপমাত্রায় কম স্থায়ী থাকে। এটা জৈতুনের তেলের মতো মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের তুলনায় দ্রুত অক্সিডেটেড হয়ে পড়ে।)
মেডিক্যাল সায়েন্স সর্বদা ভিটামিনের লাভের প্রচার করে এসেছে আর বৈজ্ঞানিকেরাও এই জাদু তত্ত্বের সার্থকতা প্রমাণিত করার জন্য কঠোর প্ররিশ্রম করছেন। অ্যান্টি অক্সিডেন্টসের বিচার সম্বন্ধিত রূপে কিছুটা নতুন।
অ্যান্টি অক্সিডেন্টস প্যাথোলোজিক্যাল পরিস্থিতিগুলোয় চিকিৎসায় নতুন পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে যেমন :
১) কার্ডিয়োভাস্কুলার রোগ-সিএইচডি, উচ্চ রক্তচাপ।
২) সেরিব্রোভাস্কুলার রোগ।
৩) মেটাবোলিজম রোগ-ডায়াবেটিস মেলিটাস।
৪) শিরার রোগ-এল্জেমিট রোগ, মৃগী।
৫) বিপোষক রোগ-চোখের ছানি, আর্থ্রারাইটিস, বার্ধক্য।
৬) ক্যান্সার।
ভিটামিন-এ
ভিটামিন-এ দুই প্রকারের হয়। প্রথম, পশুদের থেকে প্রাপ্ত উৎপাদন, যেমন গোশত আর দুধে পাওয়া যায়। একে রেটিনল বলা হয়; এবং দ্বিতীয় ফল আর সবজিতে পাওয়া যায়, যাকে ক্যারোটিন বলা হয়। বিটা ক্যারোটিনই অ্যান্টি অক্সিডেন্টরূপে কাজ করে।
শরীরের বিকাশ আর তন্ত্রগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন-এ এর প্রয়োজন হয়। এর অভাব হয়ে পড়লে ত্বক আর চোখ অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। সুস্থ হাড় আর ভালো দাঁত তৈরি হতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি এর অভাবের চিকিৎসা সময় থাকতে না করানো হয়, তাহলে ব্যক্তি পুরোপুরি অন্ধও হয়ে পড়তে পারেন। ভারতে অন্ধত্বের কারণগুলোর মধ্যে সব থেকে সাধারণ কারণ হচ্ছে ভিটামিন-এ এর অভাব। বিটা ক্যারোটিন বেশ কিছু ফল আর সবজিতে পাওয়া যায়, যেমন- পালংশাক, ধনেপাতা, বাঁধাকপি, গাজর, আম, টমাটো ইত্যাদি। শরীরে এই ক্যারোটিন, ভিটামিন-এতে পরিবর্তিত হয়ে পড়ে। বিটা ক্যারোটিন রান্না করলে বা আল্ট্রা ভায়োলেট কিরণের ফলে নষ্ট হয় না।
একজন বয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৬০০ মিলিগ্রাম রেটিনল বা ২৪ মিলিগ্রাম বিটা ক্যারোটিনের প্রয়োজন হয়। বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী মহিলা আর অসুস্থ ব্যক্তিদের েেত্র এই প্রয়োজনটা আরও বেশি হয়। এক মিলিগ্রাম বিটা ক্যারোটিন=০.২৫ মিলিগ্রাম রেটিনল।
বিটা ক্যারোটিন দু’ভাবে কাজ করে। প্রথমে এর কিছু অংশ ভিটামিন-এতে পরিবর্তিত হয় আর অবশিষ্ট বিটা ক্যারোটিন অ্যান্টি অক্সিডেন্টরূপে কাজ করে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, বিটা ক্যারোটিন আর ভিটামিন-এ এর মধ্যে যেন ভ্রমের সৃষ্টি না হয়ে পড়ে, কারণ এই দুটো হচ্ছে আলাদা আলাদা তত্ত্ব। আমাদের শরীর বিটা ক্যারোটিনকে ভিটামিন-এতে পরিবর্তন করতে সম হয়।
যদিও দীর্ঘ সময় ধরে বেশি পরিমাণে ভিটামিন-এ সেবন করাটা তিকারক লণ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন- মাথা যন্ত্রণা, গা গোলানো, বমি, আলস্য, শুষ্ক ত্বক, ঠোঁট ফাটা ইত্যাদি।
ভিটামিন-এ এর প্রয়োজন শরীরের বিকাশ আর তার তত্ত্বগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য হয়। এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের কোশিকাগুলোকে স্বরাত্মক কবচ বা ঝিল্লি প্রদান করা। এটা মিউকাস ঝিল্লিকেও সুরতি রাখে। এটা ফ্যাটে গুলে যায়। মাছের লিভারের তেল হচ্ছে ভিটামিন-এ এর সব থেকে ভালো প্রাকৃতিক উৎস।
বিটা ক্যারোটিন হচ্ছে গাছের মধ্যে পাওয়া এক প্রাকৃতিক পদার্থ। সবার আগে এটাকে গাজরের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। এ জন্য পুরো পরিবারকে ক্যারোটেনয়েডস্ নাম দেয়া হয়েছিল। ক্যারোটেনয়েডস্ বেশ কিছু রঙিন পদার্থে রয়েছে, যেগুলো প্রকৃতিতে দেখতে পাওয়া বেশ কিছু রঙের ভাণ্ডার। বিটা ক্যারোটিন গাঢ় লাল-কমলা রঙের হয় এবং হলুদ আর কমলা গাঢ় সবুজ রঙের সবজিতেও ক্যারোটিন থাকে, কিন্তু কোরোফিলের কারণে হলুদ আর কমলা রঙ চাপা পড়ে যায়... কিন্তু অনেকবার এটা বেশি চাপা পড়তে পারে না। যেমন লাউতে।
বিটা ক্যারোটিন হচ্ছে সব থেকে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলোর অন্যতম, যেটা গাছকে সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট কিরণে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে রা করে। এটা হচ্ছে প্রকৃতির সঠিক রক। তরমুজ, বেদানা, আম আর গাজর, আলু, পালংশাক, টমেটো, আজওয়াইন, জলকুম্ভী আর ফুলকপির মতো ফল আর সবজিতে বিটা ক্যারোটিন থাকে।
ভিটামিন-সি (এস্কোর্বিক এসিড)
অ্যান্টি অক্সিডেন্টরূপে কাজ করা ছাড়াও ভিটামিন-সি এর আরও বেশ কিছু গুণ রয়েছে। এটা শরীরের বিকাশ আর শরীরের তত্ত্বগুলো, মাড়ি, দাঁত, রক্তের নাড়ি আর হাড়ে হয়ে পড়া তিকে পূরণ করতেও সহায়তা করে। এটা শারীরিক ব্যবস্থায় শামিল থেকে ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাল সংক্রমণের সাথে লড়তেও সহায়তা করে। ভিটামিন-সি এর অভাবের কারণে হেমারেজ তস্থান শুকাতে সময় নেয়া, স্কার্বি রোগ, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, হাড়ের ধীরগতিতে নির্মাণ ইত্যাদি লণ দেখতে পাওয়া যায়। ভিটামিন-সি আমলাতে পাওয়া যায়। ভিটামিন-সি এর ভালো উৎস হচ্ছে রসযুক্ত ফল, যেমন- পাতিলেবু, মুসম্বী লেবু, কমলা লেবু, পেয়ারা আর সবুজ পাতাওয়ালা সবজি, যেমন- পালংশাক ইত্যাদি।
কাটা আর রান্না একে নষ্ট করে দেয়। একজন বয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন এর প্রয়োজন হচ্ছে ৪০ মিলিগ্রাম। এটা শরীরে জমা হয়ে থাকে না অতিরিক্ত মাত্রা প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়।
ভিটামিন-ই
ভিটামিন-ইও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে আর ঝিল্লির ওপর জমা হয়। যার কারণে সেটাকে প্যারাক্সাইডসের ক্রিয়া থেকে রা করে। বাঁচায় আর অক্সিজেনের বিষাক্ত প্রভাবকেও আটকায়... এই প্রকার এটা অক্সিজের মুক্ত কণাগুলোকে মজবুত করে তুলে শরীরের রোগগুলোর সাথে লড়ার শক্তি দেয় আর হৃদয়রোগ থেকেও সুরা করে।
ভিটামিন-ই গম, অঙ্কুরিত আনাজ, গোটা আনাজ, সালাদ ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া আরও কিছু তত্ত্বও আমাদের শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে, যেমন- সেলেনিয়াম, মেলিডেনম ইত্যাদি।
লেখক : অধ্যাপক, ইমুনোলজি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা।
চেম্বার : হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার, ৫৭/১৫ পান্থপথ, ঢাকা।
ফোন : ০১৭১১৫৯৪২২৮


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল