২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্পাইনাল ইনজুরি হলে

-

স্পাইনাল ইনজুরিকে বাংলায় বলে মেরুদণ্ডে আঘাত। এর মধ্যে রয়েছে কশেরুকা ভেঙে যাওয়া ও স্থানচ্যুত হওয়া।
মেরুদণ্ডে কী থাকে
ি স্পাইনাল কর্ড
ি হাড় যা স্পাইনাল কর্ডকে সুরক্ষা দেয় (একে বলে ভার্টিব্রা বা কশেরুকা)
ি দুই কশেরুকার মাঝখানে চাকতিসদৃশ ডিস্ক
ি ঘিরে থাকা মাংসপেশি
ি স্পাইনাল কর্ড থেকে বেরিয়ে আসা নার্ভ বা স্নায়ু
যদি কারো স্পাইনাল ইনজুরি হয় তাহলে সবচেয়ে বড় যে ঝুঁকি থাকে তা হলো তার স্পাইনাল কর্ড অস্থায়ীভাবে বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদি সে রকম কিছু ঘটে তাহলে আঘাতের স্থানের নিচ থেকে রোগীর শরীর প্যারালাইসড বা অসাড় হয়ে যায়।
আঘাতের কারণ
দুই ধরনের আঘাতে স্পাইনাল ইনজুরি হয়।
ি পরোক্ষ আঘাত
ি প্রত্যক্ষ বা সরাসরি আঘাত
যে কারণে পরোক্ষ আঘাত ঘটে
ি ভারী কিছু তুললে
ি হঠাৎ সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে গেলে
প্রত্যক্ষ আঘাতের কারণ
ি উঁচু থেকে পড়ার সময় পিঠ মাটিতে পড়লে
ি পিঠের ওপর ভারী কিছু পড়লে।
স্পাইনাল ইনজুরির সবচেয়ে সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে প্রবল ধাক্কা, তীব্র মোচড়ানো, কিংবা সামনে বা পেছনের দিকে বেঁকে যাওয়া।
যদি কেউ নিচের দুর্ঘটনায় পড়েন তাহলে স্পাইনাল ইনজুরির আশঙ্কার কথা মাথায় রাখবেনÑ
ি উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া। যেমন : মই।
ি বেঢপভাবে পড়ে যাওয়া, যেমন শরীরচর্চা করতে গিয়ে
ি অগভীর পুলে ডাইভ দেয়া ও আঘাত পাওয়া
ি চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়া, যেমন মোটরবাইক
ি ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যাওয়া
ি মোটরগাড়ি দুর্ঘটনা
ি পিঠে ভারী কিছু পড়া
ি মাথায় বা মুখে আঘাত পাওয়া
স্পাইনাল ইনজুরি কিভাবে বুঝবেন
যদি কশেরুকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়Ñ
ি ঘাড়ে বা পিঠে ব্যথা করা।
ি মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক আকৃতিতে পরিবর্তন ঘটা। সেটি অস্বাভাবিক আকৃতির হতে পারে কিংবা প্যাঁচানো হতে পারে।
ি মেরুদণ্ডের ওপরের ত্বকে ব্যথা অনুভূত হওয়া বা ত্বকে কালশিরা পড়া।
যদি স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়Ñ
ি হাত-পায়ের নাড়াচাড়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো। অর্থাৎ, হাত বা পা নাড়াতে বললে সেগুলো নাড়াতে না পারা।
ি অনুভূতিশূন্য হওয়া, কিংবা অস্বাভাবিক অনুভূতি হওয়া। যেমন, জ্বালাপোড়া করা বা মিনমিন করা।
ি প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা।
ি শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হওয়া।
কী করবেন
ি রোগীকে আশ্বস্ত করুন, নড়াচড়া করতে নিষেধ করুন।
ি অ্যাম্বুলেন্স ডাকার ব্যবস্থা করুন।
ি রোগীকে মাথা বা ঘাড় নাড়াতে নিষেধ করুন যাতে পুনরায় ক্ষতি না হতে পারে।
ি রোগীর মাথার পেছনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে ঝুঁকে বসুন। আপনার কনুই দুটো মাটিতে রাখুন। রোগীর মাথার দুই পাশে হাত নিয়ে ধরুন, কান দুটো খোলা রাখুন। রোগীর মাথা এমনভাবে ধরুন যাতে তার মাথা, ঘাড় ও মেরুদণ্ড সোজাসুজি লাইনে থাকে।
ি জরুরি সাহায্য না আসা পর্যন্ত আপনি রোগীর মাথাকে সাপোর্ট দিয়ে রাখুন। যদি আপনার ধারেকাছে কেউ থাকে তাহলে তাকে বলুন রোগীর মাথার দুই পাশে কম্বল, তোয়ালে কিংবা কাপড় ভাঁজ করে সাপোর্ট দিতে।
যদি রোগী সাড়া না দেয়
ি রোগীর শ্বাসপথ খোলা রাখুন। এ ক্ষেত্রে রোগীর মুখে আঙুলের ডগা ঢুকিয়ে আস্তে আস্তে হাঁ করান। খেয়াল রাখবেন ঘাড় যেন বেঁকে না যায়।
ি এবার শ্বাস নিচ্ছে কি না পরীক্ষা করুন।
ি যদি শ্বাস নেয় তাহলে রোগীর মাথাকে অবিরাম সাপোর্ট দিয়ে যান এবং অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন।
রোগী যদি শ্বাস না নেয় তাহলে রোগীকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে শুরু করুন।
অ্যাম্বুলেন্স না আসা পর্যন্ত রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস হৃদস্পন্দন ও প্রতিক্রিয়ার মাত্রা পরীক্ষা করতে থাকুন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি:, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা।
ফোন : ০১৬৭৩৪৪৯০৮৩ (রোমান)


আরো সংবাদ



premium cement