২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্বল্প পরিচিত এ যৌনবাহিত রোগটিই হতে পারে পরবর্তী মরণব্যাধি

স্বাস্থ্য
এমজি নামক এই রোগটার প্রায়শই কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। - ছবি : প্রতীকী

সতর্ক না হলে এখনকার স্বল্প পরিচিত যৌনবাহিত একটি রোগই সামনের দিনগুলোতে মরণব্যাধি হয়ে উঠতে পারে।

মাইকোপ্লাজমা জেনিটালিয়াম বা সংক্ষেপে এমজি নামক এই রোগটার প্রায়শই কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না।

কিন্তু শ্রোনী প্রদাহজনিত রোগের জন্ম দিতে পারে যা একজন নারীকে সন্তান জন্মদানে অক্ষম করে দিতে পারে।

মহিলাদের শ্রোণী অঞ্চলে যে অঙ্গগুলো থাকে তা হল- অন্ত্র, মুত্রাশয়, জরায়ু ও ডিম্বাশয়।

সঠিক চিকিৎসা না করালে এমজি জীবাণু শরীরে থেকে যেতে পারে যা শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে।

আর সে কারণেই ব্রিটিশি অ্যাসোসিয়েশন অফ সেক্সুয়াল হেল্থ অ্যান্ড এইচআইভি এ বিষয়ে নতুন পরামর্শ দিয়েছে।

এমজি আসলে কি?
এটি একটি ব্যাকটেরিয়া যা পুরুষের মুত্রনালীতে প্রদাহ তৈরির কারণ হতে পারে যা পুরুষাঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার ফলে মুত্রত্যাগের সময় ব্যথা অনুভূত হবে।

আর নারীদের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়সহ প্রজনন অঙ্গগুলোতে প্রদাহ হতে পারে যার মধ্যে প্রচণ্ড ব্যথা এবং জ্বর হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণেরও সম্ভাবনা আছে।

ইতোমধ্যেই এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত কারও সাথে যৌন সম্পর্ক হলে এ রোগ আরেকজনের মধ্যেও ছড়াতে পারে।

আর সে কারণেই যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কনডমের ব্যবহার রোগটি থেকে মুক্ত থাকার সহজ উপায় বলে বলা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে ১৯৮০ সালে প্রথম রোগটি সনাক্ত হয়েছিলো।

এখন এ রোগটিকে উদ্বেগজনক বলে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে ব্রিটিশি অ্যাসোসিয়েশন অফ সেক্সুয়াল হেল্থ অ্যান্ড এইচআইভি।

অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা হতে পারে কিন্তু সংক্রমক ব্যাকটেরিয়া এখন ক্রমশ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে।

‘আমি এমজি পরীক্ষা করিয়েছি’
বিবিসির কাছে এমজিতে সংক্রমিত হওয়ার নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন জন (ছদ্মনাম)।

‘নতুন পার্টনারের সাথে সম্পর্ক তৈরির পর আমার এমজি ধরা পড়ে। সম্পর্কের শুরুতে দুজনেই কিছু পরীক্ষা করিয়েছিলাম এবং তখন কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। তবে লক্ষণ না থাকায় এমজির টেস্ট করায়নি ক্লিনিক।’

এরপর নতুন সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক শুরুর একমাসের মাথায় সমস্যা বোধ করতে শুরু করেন জন।

‘মুত্রত্যাগের সময় অনেক ব্যাথা হচ্ছিলো। কিন্তু সমস্যাটি কোনোভাবেই বুঝতে পারছিলাম না। কয়েক সপ্তার মধ্যেই পরীক্ষা করে এমজির অস্তিত্ব পাই। তবে আমার সঙ্গীর তখনো ধরা পড়েনি। পরে আবার পরীক্ষার পর তার শরীরেও এমজির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।’

এরপর দু সপ্তাহ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন ও অন্তত পাঁচ সপ্তাহ যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকেন যাতে করে রোগটি থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেন জন।

কিন্তু পরে আবারও এটি ফিরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে এবং সেজন্য বেশকিছু পরীক্ষা করা হচ্ছে আবার।

ব্রিস্টলের যৌন বিষয়ক পরামর্শক ড. পিটার গ্রীনহাউস লোকজনকে আগেই সতর্ক হয়ে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলছেন, রোগটি সম্পর্কে জানতে এটাই সময়।

‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে?’
ব্রিটিশি অ্যাসোসিয়েশন অফ সেক্সুয়াল হেল্থ অ্যান্ড এইচআইভির নীতিমালায় বলা হয়েছে, লক্ষণ দেখা গেলে রোগীরা যাতে পরীক্ষা করে সঠিকভাবে এবং চিকিৎসা নেয়।

‘নারীদের মধ্যে যারা বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকিতে আছে তাদের ডায়াগনস্টিক ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সরঞ্জাম প্রয়োজন।’

জনস্বাস্থ্য নিয়ে সম্ভাব্য জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় সরকারকে অর্থ বরাদ্দের জন্যও আহবান জানিয়েছে ব্রিটিশি অ্যাসোসিয়েশন অফ সেক্সুয়াল হেল্থ অ্যান্ড এইচআইভি।

তবে জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এমজি পরীক্ষা বা ঔষধ প্রতিরোধী হয়েছে কি-না তা পরীক্ষার সুযোগ সহজলভ্য আছে।

জনস্বাস্থ্য বিভাগের মাইক্রোবায়োলজিস্ট ড. হেলেন ফিপার বলেন, ‘লক্ষণ দেখা গেলে স্থানীয় সেক্সুয়াল হেলথ ক্লিনিকে গিয়ে পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘নতুন বা পুরনো সঙ্গীর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার করেই এর প্রতিরোধ সম্ভব।’ সূত্র: বিবিসি

আরো পড়ুন :
বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ ‘সুপার গনোরিয়ায়’ আক্রান্ত ব্যক্তি অবশেষে সুস্থ
বিবিসি, ২৩ এপ্রিল ২০১৮
যুক্তরাজ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে খারাপ ধরণের 'সুপার গনোরিয়ায়' আক্রান্ত হয়েছিলেন, তিনি অবশেষে সুস্থ হয়েছেন।

যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসকরা বলছেন, তিনি খুবই ভাগ্যবান এবং এই ঘটনাটি সবার জন্য একটি সতর্কবার্তা।

যুক্তরাজ্যে তার একজন নিয়মিত সঙ্গী আছে । কিন্তু তিনি রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এক নারীর সাথে যৌন সম্পর্কের পর।

তিনিই বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি, যে এধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর যে অ্যান্টি-বায়োটিক দেয়া হয়ে থাকে, তাতে সুস্থ হননি। তাকে দেয়া অ্যান্টিবায়োটিকের দুইটি কোর্সই ব্যর্থ হয়। পরে অবশ্য অস্ট্রেলিয়াতেও এরকম দুইটি ঘটনার কথা জানা গেছে।

তাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণের পর চিকিৎসকরা সর্বশেষ চেষ্টা হিসাবে এরটাপেনেম নামের আরেকটি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সাফল্য পান।

যুক্তরাজ্যের জন স্বাস্থ্য ইংল্যান্ডের যৌন বাহিত রোগ বিভাগের প্রধান ড. গুয়েন্দা হিউজ বলছেন, একাধিক ওষুধ প্রতিরোধী গনোরিয়া রোগটি অবশেষে সফলভাবে চিকিৎসা করা গেছে।

আক্রান্ত ব্যক্তির ব্রিটিশ সঙ্গীসহ আর কোন ব্যক্তির মধ্যে এ ধরণের রোগ আছে কিনা, সেটির তদন্ত শুরু করেছে জন স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে তারা বলছেন, যুক্তরাজ্যে রোগটির বিস্তার হয়নি।

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল একমত হয়েছে যে, সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী গনোরিয়ায় এটাই একমাত্র উদাহরণ। তবে অস্ট্রেলিয়ায় আরো দুইটি ঘটনার কথা জানার পর চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে এরকম আরো রোগী পাওয়া যেতে পারে।

ভবিষ্যতে তাদের ক্ষেত্রে আর কোন অ্যান্টিবায়োটিক কাজ নাও করতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

অনেক দেশেই অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হয় এবং যেকোনো দোকান থেকে ইচ্ছেমত কেনা যায়। সেসব দেশের মানুষের মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া শক্তিশালী হয়ে ওঠে বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।

গনোরিয়া কী?
এ রোগের মূল কারণ একটি ব্যাকটেরিয়া, যার নাম নেইসেরিয়া গনোরিয়া।

মূলত অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের কারণে এ রোগটি ছড়িয়ে থাকে।

আক্রান্ত হওয়ার পর নারী ও পুরুষের মধ্যে নানা ধরণের লক্ষ্মণ দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে যৌন অঙ্গ থেকে সবুজ বা হলুদ রঙের পদার্থ বের হওয়া, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হওয়া বা পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া।

যথাযথ চিকিৎসা না নিলে এ থেকে আরও বন্ধ্যত্ব সহ নানা রোগ হতে পারে।

অনেক সময় নারীদের এই রোগটি হলেও, তার কোন লক্ষণ টের পাওয়া যায় না।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজার বালিতে আটকে পড়েছে ইসরাইলি বাহিনী : হামাস মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন : যা বলছে আওয়ামী লীগ মান্দায় বিদ্যুতের আগুনে পুড়ল ৮ বসতবাড়ি রিজওয়ানকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্র্যাডম্যান বললেন আফ্রিদি গোবিন্দগঞ্জে ট্রাক্টরচাপায় নারী নিহত অভিযোগ করার পর ইনসুলিন ইঞ্জেকশন কেজরিওয়ালকে! হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা তালায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি পরিবারের মাঝে জামায়াতের সহায়তা প্রদান শেরপুরের মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ বেনজীরের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চাইলেন হাইকোর্ট আবারো বৃষ্টির শঙ্কা দুবাইয়ে, চিন্তা বাড়াচ্ছে ইউরোপ

সকল