২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘামাচির প্রতিকার

ঘামাচি
ঘামাচি - সংগৃহীত

বাংলায় আমরা যাকে ঘামাচি বলি তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় (Miliaria)। এটি একটি ঘর্মগ্রন্থির রোগ। ঘর্মগ্রন্থির নালী অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও গরমে বন্ধ হয়ে এ রোগের সৃষ্টি করে। এ রোগটি গ্রীষ্মকালে দেখা যায় এবং শীতকাল এলে আপনা-আপনিই ভালো হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘাম নিঃসরণ হতে থাকে। ফলে তখন এত বেশি পরিমাণ নিঃসরণ কেবল ঘর্মগ্রন্থির ছিদ্রপথে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ফলে ওই নিঃসরণ ধর্মগ্রন্থিকে ফুটো করে ত্বকের নিচে এসে জমা হতে থাকে এবং সে স্থান ফুলে ওঠে। সেই সাথে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি ও সামান্য জ্বালাপোড়া ভাব এবং খুব ছোট ছোট উদ্ভিদ। মূলত এটাই হচ্ছে ঘামাচি। ঘামাচি তিন ধরনের হয়। যেমন মিলিয়ারিয়া, কৃস্টালিনা। এ ক্ষেত্রে ঘর্ম নালীর মুখের অংশটি কালো দেখা যায় এবং এ ক্ষেত্রে ত্বক দেখতে প্রায় স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। সাধারণত এ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গই থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উজ্জ্বল পানির দানা স্বাভাবিক ত্বকের ওপর হতে দেখা যায়। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ মিলিয়ারিয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর রুদ্ধতা দেখা যায়। ত্বকের বহিঃত্বকের মধ্যের ঘর্মনালীতে এবং এ ক্ষেত্রে ত্বকের ওপরে ছোট ছোট অসংখ্য গোটা দেখা যায়। যে গোটার মাথায় পানির দানা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে, যা লালচে ত্বকের ওপর হতে দেখা যাবে এবং সেই সাথে থাকবে প্রচণ্ড চুলকানি, যা মূলত শরীরের মূল অংশ ও ঘাড়ে বেশি হতে দেখা যায়।

তৃতীয়টি অর্থাৎ Miliaria Profounda-এর ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর Block বা বদ্ধতা মূলত ত্বকের বহিঃত্বক ও অন্তঃত্বকের মিলন স্থানে দেখা দেয় অর্থাৎ ত্বকের অনেক গভীরে। কাজেই ত্বক দেখতে অনেকটা স্বাভাবিক ধরনের মনে হয় এবং এ ক্ষেত্রে এই দানা বা গোটা মূলত দেহের মূল অংশে (Trunk) এবং হাতে ও পায়ে হতে দেখা যায়। এই তিন ধরনের মধ্যে Miliaria সবচেয়ে বেশি হয়। এ রোগটি গরমকালে হয় বলে তাকে Heat Rash বলা হয়ে থাকে। গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বেশি হয় এবং গরমকালে যারা গায়ে তেল মাখেন, তাদের এ রোগ বেশি হয়। এ রোগ নির্ণয়ের জন্য সাধারণত কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। চোখে দেখে চিকিৎসকরা এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে Folliculiltis কিংবা ত্বকের CANDIDIASIS অথবা Contact Dematititis-এর মতো দেখতে মনে হয় বলে চিকিৎসকরা Confusion-G ভুগে থাকেন।

চিকিৎসা : মূল চিকিৎসা হলো গরম আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটিয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশে যেতে হবে। আর যদি Air Cooler-এর ব্যবস্থা সম্ভব না হয় তাহলে সার্বক্ষণিক ফ্যানের নিচে থাকতে হবে, যেন ত্বকের সংস্পর্শে বাতাস খেলতে পারে। এ ছাড়া হাইড্রোকটির্সোন ১% ব্যবহার করলে ত্বকের চুলকানি কমে যায়। এ ছাড়া Anthical Lotion অথবা Calamine Lotion লাগিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায় এবং এর সাথে Antihistaminও ব্যবহার করা যায়।

অতিরিক্ত ঘাম : হাত ও পায়ের তালুসহ শরীর থেকে অল্প পরিমাণ ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক দৈহিক ক্রিয়া। কিন্তু সে যদি অধিক পরিমাণে হয় বা তা থেকে যদি দুর্গন্ধ নির্গত হয়, তবে তাকে বলা হয় Hyperhidrosis। এটা Localized বা Generalized অর্থাৎ পুরো শরীরে হতে পারে। লক্ষ করলে দেখবেন অনেকেরই শুধু হাত কিংবা হাত ও পা একত্রে অধিক পরিমাণ ঘামে এবং কখনো কখনো দুর্গন্ধও হয়। এটি রোগ শোক, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও আবেগচালিত ব্যক্তিদেরই বেশি হয়। এ ছাড়া Spicy Food, টমেটো, সস, চাকোলেট, চা, কপি ও গরম সুপ খেলে অতিরিক্ত ঘর্ম হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কপালে, ওপরের ঠোঁটে, ঠোঁটের আশপাশে এমনকি বুকের মধ্যখানে অধিক মাত্রায় ঘাম শুরু হতে দেখা যায়। খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এ ধরনের অতিরিক্ত ঘর্ম হওয়াকে বলা হয় Gustatory huper hydrosis।

চিকিৎসা : ২০ ভাগ অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড টিংচার সপ্তাহে তিনবার প্লাস্টিক গ্লোবসের মাধ্যমে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঘুম ও দুশ্চিন্তানাশক ওষুধের সাথে Probanthinc ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

ঘর্মরোধ : Anhydrosis ঘাম না হওয়াকেই ঘর্মরোধ বলা হয়। বিভিন্ন কারণে এ রোগ হতে পারে। যেমন জন্মগতভাবে যদি ঘর্মগ্রন্থি অনুপস্থিত থাকে কিংবা স্নায়ুতন্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অনুভূতি ক্ষমতা কমে যায়। অথবা কোনো বিষাক্ত ওষুধ ব্যবহারে ঘর্মগ্রন্থি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে, লোমকূপের মধ্যে অধিক পরিমাণ ময়লা জমলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে Diprovate-MF মলম ব্যবহারের পাশাপাশি Tab. Betnelan 0.5mg একটি করে দিনে তিনবার দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।

লেখক : চর্ম, অ্যালার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ।

চেম্বার : আলরাজী হাসপাতাল, ১২ ফার্মগেট, ঢাকা। ফোন : ০১৮১৯২১৮৩৭৮

 

আরো পড়ুন : সাপে কাটলে কী করবেন?

ডা: মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন

সাপের কামড় জীবন বিপন্নকারী, একটি জরুরি প্রসঙ্গ। আমাদের দেশে প্রতি বছর অনেক লোক এতে মারা যায়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোর চাষিরা, শিকারিরা এবং শস্য কাটা ও সংগ্রহে নিযুক্ত লোকজন এর প্রধান শিকার। সারা বিশ্বে প্রতি বছর তিন থেকে পাঁচ মিলিয়ন লোক সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়। এতে মৃত্যুর পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার এবং অ্যাম্পুটেশনের শিকার হয় আনুমানিক ৪ লাখ।

সাপের কামড়ে শতকরা ৪০ জন রোগীর দেহে তেমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না, বিষক্রিয়ার লক্ষণও পরিলক্ষিত হয় না। তবে যেহেতু আগে থেকে নিশ্চিত বলা যায় না কোন কামড়টি জীবনকে বিপন্ন করতে পারে- তাই সাপের কামড়ের সব রোগীকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে জরুরি চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

উপসর্গ : সাপে কাটার রোগী এলে মূল যে তিনটি প্রশ্ন করতে হবে
- দেহের কোথায় কামড়টা?
- কতকক্ষণ আগে?
- কী ধরনের সাপ?

কামড়ের ফলে কতটুকু বিষ দেহে অনুবিষ্ট হয়েছে তা নির্ভর করবে সাপ কত আগে কেটেছিল এবং কামড়ানোর সময় কত ক্ষেপে ছিল। রোগীর যেসব লক্ষণ দেখা দেবে :

- মাথাব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, পিপাসা হওয়া, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, মাথা ঘোরা, লাল বেশি হওয়া, হাত-পা অবশ হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া, ঘাম বের হওয়া।
- বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া
- পায়ে হলে ফুলে যাওয়া, মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়া, ফোস্কা হওয়া, রক্ত জমে যাওয়া
- হাতে বা শরীরের অন্যান্য অংশে রক্তের জমাট বাঁধার অস্বাভাবিকতা ও ত্বকের নিচে রক্তপাতের চিহ্ন পাওয়া যাবে।
- ক্ষতস্থানে দুটি দাঁতের দাগ স্পষ্ট দেখা গেলে বুঝতে হবে এটা বিষধর সাপের কাপড়।

নির্ণয়
- আজকাল সাপের বিষ ডিটেকশন কিট পাওয়া যায়। কামড়ের স্থান থেকে সোয়াব নিয়ে এই কিটের সাহায্যে ভেনম নির্ণয় করা যায়।
- রোগীর ২-৩ এমএল রক্ত নিয়ে (ভেনাস ব্লাড) ২০ মিনিট কোথাও শান্তভাবে রেখে দিয়ে সে পাত্রটি আলতোভাবে একবার নেড়ে স্বাভাবিক রক্তের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে- যদি জমাট না বাঁধে বুঝতে হবে বিষক্রিয়ার প্রভাবে এমনটি হয়েছে। এ পরীক্ষাটি রিমোট এরিয়ার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
- এয়াড়া রক্ত পরীক্ষা, ইফরিয়া, ইলেকট্রোলাইটস, লিভার ফাংশন টেস্ট, ক্রিয়াটিনিন কাইনেস ট্রপোনিন করে সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
- ইসিজি করা যেতে পারে, যাতে এরিদমিয়া, এ-ভি ব্লকসহ অনেক পরিবর্তন পাওয়া যেতে পারে।
ব্যবস্থাপনা
- সাপে কামড়ানোর সাথে সাথে সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োজন। অবিলম্বে ডাক্তারি চিসিৎসা করে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব।
- কারো হাতে, পায়ে অথবা অন্য কোনো অঙ্গে সাপে কামড়ালে সম্ভব হলে দ্রুত ক্ষত স্থানটির ওপরে শক্ত করে দড়ি বা কাপড় দিয়ে বাঁধতে হবে। এতে বিষয় রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে যথাযথ প্রয়োগে সমর্থ না হওয়ায় অনেক সময় এ প্রক্রিয়া আশানুরূপ সুফল বয়ে আনে না।
- এবার ক্ষতস্থানটা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। মরিচামুক্ত ছুরি, ব্লেড নিয়ে ভালো করে জীবাণুমুক্ত করে নিয়ে ক্ষতস্থান সামান্য কেটে টিপে রক্ত বের করে ফেলতে হবে- এত রক্তের সাথে বিষ বেরিয়ে আসবে।
- মুখে রক্ত চুষে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা উচিত নয়।
- এরপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। ওঝা বা অন্য কোনো জাদুটোনা বা ঝাড়-ফুঁকের সাহায্যে সাপে কামড়ানোর বিষ নামানোর প্রচেষ্টা ভুল চিকিৎসা পদ্ধতি এবং কোনোমতেই তা করা উচিত নয়।
- এ রোগীর দ্রুত অনেকগুলো মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তাই হাসপাতালে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে।
- রক্তচাপ, রক্তের অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা (বিশেষ করে Coagulation defeet), কিডনি এবং হার্টের যে কোনো অস্বাভাবিকতার দিকে নজর দিতে হবে।
- উপসর্গ অনুযায়ী অনেক চিকিৎসা করতে হবে। তবে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন দেয়া উচিত নয়, কারণ এতে রক্তক্ষরণ বাড়তে পারে।
- রক্ত দিতে হতে পারে- দিতে হতে পারে প্রচুর তাজা, জমাট বাঁধা প্লাজমা বা রক্তরস।
- প্রয়োজনীয় সব সতর্কতা গ্রহণপূর্বক যথাযথ অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ সফলতা পাওয়া যায়।

লেখক : চিফ মেডিক্যাল অফিসার, ইস্টার্ন রিফাইনারি, চট্টগ্রাম

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement
তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩ দেশে কাতার আমিরের সফরে কী লাভ ও উদ্দেশ্য? মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু

সকল