২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হেপাটাইটিস : লিভারে প্রদাহ

-

মানবদেহের অত্যন্ত জরুরি একটি অঙ্গের নাম যকৃত বা লিভার। লিভারের প্রদাহের নামই হেপাটাইটিস। হেপাটাইটিসের একটি প্রধান উপসর্গ হচ্ছে জন্ডিস। তাই অনেকেই জন্ডিস এবং হেপাটাইটিস একই বলে মনে করেন। জন্ডিস হেপাটাইটিসের প্রধান লক্ষণ হলেও জেনে রাখা ভালো যে, হেপাটাইটিস ছাড়া অন্য কারণ যেমন, হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া বা পিত্ত সঞ্চালনের পথে প্রতিবন্ধকতার জন্যও জন্ডিস হয়।
হেপাটাইটিস বিভিন্ন কারণে হয়। তবে তিন ধরনের হেপাটাইটিস বেশি দেখা যায়। এসব হেপাটাইটিস হলো ভাইরাল হেপাটাইটিস, ড্রাগ হেপাটাইটিস ও এলকোহলিক হেপাটাইটিস। নাম থেকেই যেমন বোঝা যায় ড্রাগ হেপাটাইটিস বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য এবং এলকোহলিক হেপাটাইটিস হয় মদ্যপান করার জন্য। ভাইরাল হেপাটাইটিস হয় ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য। যেসব ভাইরাস হেপাটাইটিস তৈরি করে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই এবং জি ভাইরাস। এসব ভাইরাসের বেশির ভাগই পানীয় বা খাদ্যের মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে ছড়ায়। তাই এগুলো প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধ পানি এবং খাদ্য গ্রহণের বিকল্প নেই।
হেপাটাইটিস ভাইরাসের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি ভাইরাস হচ্ছেÑ বি এবং সি। এদের সংক্রমণ সংক্রমিত ব্যক্তির রক্তের সংস্পর্শে আসা, রক্ত গ্রহণ এবং কোনো যন্ত্রপাতি যেমনÑ সিরিজ, শেভিং ব্লেড বা ডাক্তারি যন্ত্রপাতি এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে হয়। এ সব ভাইরাস আক্রান্ত মায়ের থেকে তার গর্ভের শিশুর শরীরেও জন্মগ্রহণের সময় ছড়াতে পারে। এই দুই ভাইরাসের ভয়ানক দিক হলো এরা শরীরে কোনো লক্ষণ ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ীভাবে ‘ক্রনিক কেরিয়ার’ হিসাবে থেকে যেতে পারে এবং লিভারের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ যেমন ক্রনিক হেপাটাইটিস, সিরোসিস, এমনকি লিভারের ক্যান্সারও করতে পারে। যখন লক্ষণ ছাড়া কারো শরীরে হোপাটাইসিসের জীবাণু থাকে তখন এই জীবাণু কারো অজান্তেই অন্যদের শরীরে ছড়াতে পারে।
হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে খাদ্যের অরুচি, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা এবং চোখ ও প্রসাবের রঙ হলুদ হয়ে যাওয়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তবে যাদের ক্রনিক হেপাটাইটিস বা সিরোসিস হয় তাদের শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যায়। পেটে পানি আসে, কখনো রক্তবমি হয় বা পায়খানার সাথে রক্ত যায় এবং এভাবেই আস্তে আস্তে রোগীর মৃত্যু হয়। এই রোগের আরো ভীতিকর দিক হলো যে, এই রোগের চিকিৎসা সুবিধা খুব সীমিত। ক্রনিক হেপাটাইটিস বা সিরোসিস হয়ে গেলে সম্পূর্ণভাবে সারানোর মতো চিকিৎসা নেই বললেই চলে; যাও কিছু আছে যেমনÑ ইন্টারফেরন, লিভার প্রতিস্থাপন ইত্যাদি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই নাগালের বাইরে। তাই এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো এই রোগের প্রতিরোধ। হেপাটাইটিস রোগের প্রতিরোধের জন্য দেশের সরকার ও জনগণ সবার ভূমিকাই মুখ্য। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিয়োজিত কর্মীরা ছাড়া প্রতিটি সচেতন নাগরিকের এ ব্যাপারে নজর দেয়া দরকার। এই রোগের প্রসারের উপায় সম্বন্ধে সব নাগরিককে জানাতে হবে এবং কিভাবে প্রসার বন্ধ করা যায় তার ব্যাপারেও সবাইকে সচেতন করতে হবে। এই রোগের প্রসার বন্ধ করার কয়েকটি উপায় হলোÑ
Ñপরীক্ষার মাধ্যমে এসব ভাইরাসের অনুপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোনো রক্ত শরীরে গ্রহণ না করা।
Ñঅন্য কারও ব্যবহার করা সুই বা সিরিঞ্জ নিজে ব্যবহার না করা।
-সেলুনে অন্যের ব্যবহার করা ব্লেড দিয়ে সেভ না করা।
-কোনো ডাক্তারি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের আগে সেসব যন্ত্রপাতির জীবাণুমুক্তকরণের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া।
-কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির (পুুরুষ বা মহিলা) বা অজানা অবিশ্বস্ত ব্যক্তির সাথে যৌন সংসর্গ না করা।
-হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা নিলেও এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অনেকেই এই টিকাকে জন্ডিসের টিকা বলে জানেন এবং তাদের ধারণা যে এই টিকা দিলে আর জন্ডিস হবে না; কিন্তু কথাটা হলো, এই টিকা নিলে মারাত্মক হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ হবে না। তবে অন্য কারণে জন্ডিস হতে পারে। অন্য মারাত্মক ভাইরাস হেপাটাইটিস-সির এখনো কোনো প্রতিষেধক টিকা পাওয়া যায়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement