২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লিম্ফোমা

-

লিম্ফোয়েড সিরিজের কোষগুলোর ক্যান্সারের ফলে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়, এতে বিভিন্ন লিম্ফোয়েড টিম্পু বা লিসকা কলা বা গ্রন্থি ব্যথাহীনভাবে ক্রমান্বয়ে আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে শরীরের ইমিউনো সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়াতেও অস্বাভাবিকতার সৃষ্টি হয়। এটিই লিম্ফোমা। ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে লসিকা গ্রন্থিতেই হতে পারে বা দূরবর্তী কোনো ক্যান্সার থেকে লসিকা গ্রন্থিতে ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য হতে পারে। লিম্ফোমা বা লসিকা গ্রন্থির ক্যান্সার দুই ধরনের হতে পারেÑ
১. হজকিন্স লিম্ফোমা
২. নন হজকিন্স লিম্ফোমা।
হজকিন্স লিম্ফোমা
প্রতি বছর প্রতি লাখে চারজন করে মানুষ হজকিন্স লিম্ফোমাতে আক্রান্ত হয়। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি। দুই ধরনের বয়স গ্রুপের মধ্যে এর প্রবণতা দেখা যায়। তা হলো ২০-৩৫ বছর বয়স গ্রুপ ও ৫০-৭০ বছর বয়স গ্রুপ।
কারণ Ñ
এ রোগের অধিকাংশ কারণই অজানা। তবে দেখা গেছে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের অধিকাংশই সুশিক্ষিত ও ছোট পরিবারের সদস্য।
যাদের গ্লান্ডুলার ফিভার হয়েছিল তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে তিন গুণ বেশি।
রোগের লক্ষণ
জ্বর থেমে থেমে আসে। ১০-১৫ দিন একটানা জ্বর চলল আবার ১০-১৫ দিন জ্বর নেই। তারপর আবার শুরু হলো। এভাবে পালাক্রমে চলতে থাকে।
রাতে ঘেমে যায়, ওজন আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
হাড়ে ব্যথা, সারা গায়ে চুলকানি হয়।
লসিকা গ্রন্থিগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে প্রথমে ব্যথাহীন থাকে। প্রথমে গলা এবং ঘাড়ের আশপাশের লসিকা গ্রন্থিতে এ ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। আস্তে আস্তে গ্রন্থিগুলো বড় হতে হতে রাবারের মতো হয়ে যায় এবং এর উপরকার ত্বকের সাথে এটে থাকে না। এরপর গ্রন্থিগুলোতে ব্যথা অনুভূত হয় এবং বড় আকারের জন্য নিকটবর্তী কলার ওপর চাপ দেয় এতে আবার অন্য কোনো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
যেমন : ১. শ্বাসকষ্ট
২. খাবার গিলতে অসুবিধা
৩. পেটে ব্যথা
৪. জন্ডিস
৫. স্নায়ুর ওপর চাপের ফলে প্রদাহ
৬. মেরুদণ্ডে আক্রমণের জন্য দুই পায়ের অসাড়তা
রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
১. রোগ সম্পর্কিত প্রাপ্ত ইতিহাস
২. রোগের লক্ষণ ও শারীরিক পরীক্ষা
৩. ল্যাব পরীক্ষা
লসিক গ্রন্থিত বায়োপসি (নিশ্চিতকরণ পরীক্ষা)
-রেড স্টার্নবার্গ জায়েন্ট কোষের উপস্থিতি
রক্ত পরীক্ষা
১. শ্বেতকণিকার সংখ্যা বিশেষ করে নিউট্রোফিল ও ইয়োসিনোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, লিম্ফোসাইটের হিমোগ্লোবিনের মতো কমে যায়।
ব্লাড ফিল্মÑ লোহিত রক্ত কণিকার আকার ছোট হয়।
রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি হয়। লো ডেনসিটি লাইপো প্রোটিনের মাত্রা বাড়ে।
অন্যান্য ১. বুকের এক্সরে, ২. আলট্রাসনোগ্রাফি
৩. কিউনি ও লিভারের কার্যকারিতার পরিমাপ পরীক্ষণ ৪. অস্থিমজ্জা, প্লিহা, লিভার বায়োপসি। ৫. সিটি স্ক্যান ইত্যাদি।
রোগের চিকিৎসা
এ রোগের চিকিৎসা করা হয় রোগের পর্যায় অনুসারে।
পর্যায় ১ একটি গ্রুপের লসিকা গ্রন্থির বৃদ্ধি
পর্যায় ২ মধ্যচ্ছদার একই দিকে একাধিক স্থানে লসিকা গ্রন্থির বৃদ্ধি
পর্যায়-৩ মধ্যচ্ছদার দুই দিকে লসিকা গ্রন্থির বৃদ্ধি
পর্যায়-৪ লিভার, প্লিহা, হাড় বা অন্যান্য কলাতে ছড়িয়ে পড়া।
যেসব চিকিৎসাব্যবস্থা আছে তা হলো
রেডিও থেরাপি
কেমোথেরাপি
রেডিও ও কেমোথেরাপি একসাথে
সার্জারি
১. পর্যায় ১ ও পর্যায় ২ এর ক্ষেত্রে সার্জারির পর রেডিও থেরাপি,
২। পর্যায় ৩ ও পর্যায় ৪-এর ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি দেয়া হয়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা। ফোন: ০১৬৭৩৪৪৯০৮৩ (রোমান)


আরো সংবাদ



premium cement