২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৭ বছর পর গোলশূন্য ড্র এল ক্লাসিকো

১৭ বছর পর গোলশূন্য ড্র এল ক্লাসিকো - ছবি : সংগৃহীত

২৩ নভেম্বর, ২০০২। শেষ যেবার গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হয়েছিল এল ক্লাসিকো, তখন জন্মই হয়নি বার্সেলোনার আনসুমান ফাতির। রদ্রিগো গোজ, ফেদেরিকো ভালভার্দেরা ছিলেন শিশু। রামোস, কাসেমিরো, ক্রুসদের কারো বয়স দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছায়নি। ১৭ বছর পর আবারো সেই ন্যু ক্যাম্পে যখন ২৪৩তম বারের মতো মুখোমুখি বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদ, তখন মাঠে ছিলেন রামোস-ক্রুস-ফাতি-রদ্রিগোদের সবাই। এই ম্যাচে ফিরে এলো ১৭ বছরের পুরনো স্মৃতি। প্রায় দেড় যুগ পর গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হল কোনো ক্লাসিকো। ১৭ ম্যাচ শেষে লিগে সমান ৩৬ পয়েন্ট দু’দলের। গোলব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে থাকল বার্সেলোনা।

ন্যু ক্যাম্পে মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার ফরোয়ার্ডদের ঠেকাতে রদ্রিগো বা ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে বসিয়ে ইস্কোতে ভরসা রেখেছিলেন জিনেদিন জিদান। ৪-৩-৩ থেকে সরে ৪-৪-২ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ ম্যানেজার। জিদানের বাজিটা কাজে দিয়েছিল দারুণভাবে, প্রথমার্ধে মেসি-সুয়ারেজ-গ্রিযমানদের কেউই সুবিধা করতে পারেননি একেবারেই। ইনজুরির কারণে এডেন হ্যাজার্ড, মার্সেলোকে পাননি জিদান। কিন্তু তাদের অনুপস্থিতিটা টের পেতে দেননি ইস্কো এবং ফার্লান্ড মেন্ডি। বার্সা ফরোয়ার্ডদের দমিয়ে রাখা রিয়ালই প্রথমার্ধে গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল বেশি।

১৭ মিনিটেই লিড নিতে পারত জিদানের দল। কাসেমিরোর হেড মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগানকে পরাস্ত করলেও গোললাইন থেকে দুর্দান্ত ক্লিয়ারেন্সে বল ফিরিয়ে দেন জেরার্ড পিকে। সাবেক স্প্যানিশ সতীর্থের মত প্রতিপক্ষকে গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন রামোসও। ৩১ মিনিটে জর্দি আলবার ক্রস থিবো কোর্তয়া ফিরিয়ে দিলে ফিরতি বল আসে মেসির পায়ে। কাতালান অধিনায়কের শট কোর্তোয়াকে পরাস্ত করলেও গোললাইন থেকে দলকে বাঁচিয়ে দেন রিয়াল অধিনায়ক।

প্রথমার্ধে বেশ সতর্কই থাকতে হয়েছে দুই গোলরক্ষককে, তবে কোর্তোয়ার চেয়ে ব্যস্ত ছিলেন টের স্টেগানই। রিয়ালের হয়ে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন ভালভার্দে। রক্ষণে রামোস-ভারানদের সাহায্য করেছেন, আবার আক্রমণেও বিপদে ফেলেছেন বার্সাকে। ভালভার্দের মত নজর কেড়েছেন বার্সার তরুণ ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং। বার্সার হয়ে মাঝমাঠের সুরটা গেঁথেছেন তিনিই। তবে ডি ইয়ং যতটা দুর্দান্ত ছিলেন, ঠিক ততটাই নিষ্প্রভ ছিলেন রাকিটিচ-রবার্তো। মাঝমাঠে সার্জিও বুস্কেটসের অভাবটা বেশ ভুগিয়েছে বার্সাকে।

একাদশ ঘোষণায় বড় চমক রেখে সার্জিও বুস্কেটসকে বাদ দিয়েই দল নামিয়েছিলেন এর্নেস্তো ভালভার্দে। কাতালানদের মাঝমাঠে তার অনুপস্থিতির সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে রিয়াল। প্রথমার্ধে বার্সার গোলে ৪টি অন টার্গেট শট নিয়েছিল তারা, কিন্তু শুধু গোলটাই পাওয়া হয়নি। আর সব মিলিয়ে ১২ বার গোলে শট করেছিলেন ভালভার্দে, বেনজেমারা। ২০০৩ সালের পর ন্যু ক্যাম্পে এক অর্ধে এতো বেশি গোলে শট নিতে পারেনি রিয়াল।

রিয়ালের লিড নিতে না পারার সুযোগটা আরেকটু হলেই কাজে লাগাতে পারত বার্সা। খুব সম্ভবত প্রথমার্ধে গোলের সেরা সুযোগটা হাতছাড়া করেছেন জর্দি আলবা। ৪১ মিনিটে মেসির দুর্দান্ত ডিফেন্সচেরা লম্বা পাসে কোর্তোয়াকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি ইনজুরি থেকে ফিরে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা স্প্যানিশ লেফটব্যাক।

প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও বার্সাকে চেপে ধরেছিল রিয়াল। মাঝমাঠে কাসেমিরো-ক্রুস-ভালভার্দেদের সামনে পাত্তাই পাচ্ছিলেন না রাকিটিচরা। ৫৫ মিনিটে একাদশে পরিবর্তন আনেন এর্নেস্তো ভালভার্দে। একাদশে থাকবেন না জেনে ক্লাসিকোর আগে শেষ অনুশীলন থেকে আগেই বেরিয়ে যাওয়া আর্তুরো ভিদালকে নেলসন সেমেদোর জায়গায় নামিয়ে দেন বার্সা ম্যানেজার। মাঝমাঠে ক্রুস-ভালভার্দেদের আটকে দেন ভিদাল, আক্রমণে বোঝাপড়া গড়ে তোলেন মেসি-সুয়ারেজদের সাথেও। নামার পাঁচ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয়ার্ধে বার্সাকে লিড এনে দেওয়ার দারুণ সুযোগ গড়ে দেন ভিদাল।

ভিদালের পাস থেকে রিয়াল রাইটব্যাক দানি কারভাহালকে কাটিয়ে মেসিকে পাস বাড়ান গ্রিযমান, কিন্তু গোলের সামনে থেকে কিছুটা বিস্ময়করভাবে শটটাই নিতে পারেননি মেসি। এমন মেসি বড় স্বভাব বিরুদ্ধ। পুরো ম্যাচেই আসলে সেভাবে নিজের ছন্দ খুঁজে পাননি বার্সা অধিনায়ক। ওই আক্রমণ থেকেই ফিরতি বলে সুযোগ পেয়েছিলেন সুয়ারেজও, কিন্তু রামোসের দুর্দান্ত ট্যাকেলে খালি হাতেই ফিরতে হয় তাকেও।

প্রথমার্ধে আলবার মিসে অল্পের জন্য লিড নিতে পারেনি বার্সা। দ্বিতীয়ার্ধেও বার্সার মত লিড নেওয়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে খালি হাতে ফিরতে হয় রিয়ালকে। দুর্দান্ত এক দলীয় প্রতি-আক্রমণে বেলকে পাস বাড়ান ভালভার্দে। ওয়েলশ ফরোয়ার্ডের বাঁ-পায়ের জোরাল শট চলে যায় গোলের বাইরে দিয়ে। ম্যাচ শেষে হয়ত আফসোসেই পুড়বেন বেল। কিছুক্ষণ বাদে অবশ্য আবারও হতাশ হতে হয় তাকে।

৭২ মিনিটে ফার্লান্ড মেন্ডির ক্রস থেকে বার্সার জালে বল পাঠান বেল, কিন্তু ফ্রেঞ্চ ফুলব্যাক অফসাইড থাকায় বাতিল হয় গোলটি। দ্বিতীয়ার্ধে গোলের আশায় রদ্রিগো, মদ্রিচকে নামিয়ে দেন জিদান। কিন্তু কাজ হয়নি তাতে।গ্রিযমানকে উঠিয়ে ফাতিকে নামিয়েও চমক দেখাতে পারেননি ভালভার্দে। অবশ্য তরুণ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড বনে গেছেন ক্লাসিকোর এই শতাব্দীর ইতিহাসে কনিষ্ঠতম ফুটবলার।

দশকের শেষ ক্লাসিকোটাই তাই আর দর্শকদের মনমতো হয়নি। গোলশূন্য ড্রয়ে কার লাভ-ক্ষতি কম-বেশি হলো সে হিসাবটাও এই মুহূর্তে করা যাচ্ছে না। তবে গোলশূন্য ড্র হলেও নিশ্চিতভাবেই মৌসুম শেষে শিরোপা দৌড়ে বড় প্রভাবই থাকবে এই ম্যাচের।
সূত্র : প্যাভিলিয়ন


আরো সংবাদ



premium cement