১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ

ভুলের খেসারত দিয়ে বিদায় নিল বাংলাদেশ

ভারত ৪:০ বাংলাদেশ
-

ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে ভারতীয় গোলরক্ষক অদিতি চৌহানের সাথে সংঘর্ষ হয় বাংলাদেশী স্ট্রাইকার স্বপ্নার। এরপর তর্কে জড়িয়ে পড়া এবং তেড়ে যাওয়া। শেষ বাঁশি বাজার পরওও চলতে থাকে তা। খেলা শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের করমর্দনের সময় এই দুই জন এড়িয়ে যান পরস্পরকে। এরপর স্বপ্না কিছু একটা বলে বসে বসেন অদিতিকে। সাথে সাথে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন ভারতীয় গোলরক্ষক। সতীর্থ খেলোয়াড় ও রেফারির হস্তক্ষেপে তা আর বেশী দূর এগোয়নি।

আসলে স্বপ্নাদের চরম হতাশারই বহিঃপ্রকাশ এই মেজাজ হারিয়ে ফেলাটা। যে ভারতকে হারিয়ে সাফের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ছিল, তা ধূলিসাৎ হয়ে গেল নিজেদেরই ভুলে। জয়ের বদলে হালি গোলে হেরে সেমিতে বিদায় গতবারের রানার্সআপদের। একের পর এক ভুলের খেসারত দিয়ে ভারত বধের বদলে উল্টো নিজেরাই নাস্তানাবুদ। পঞ্চম মহিলা সাফের দ্বিতীয় এই সেমি ফাইনালে বুধবার লাল সবুজদের ৪-০ গোলে হারিয়ে টানা পাঁচবারের মতো আসলের ফাইনালে চার বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। শুক্রবার তারা ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে স্বাগতিক নেপালকে। প্রথম সেমিতে নেপাল ৪-০ তে পরাজিত করেছে শ্রীলংকাকে। ফলে এখন দেশে ফিরতে হচ্ছে সেমিতে বিদায় নেয়া বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে।

একটি দল যদি এভাবে একের পর এক ভুল করতে থাকে, তা প্রতি ম্যাচেই এবং শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তাহলে কোচের কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসেনা। বুধভার তেমনটিই হলো ভারতের সাথে সেমিফাইনালে। এই দলটির বিপক্ষে আগের নয় ম্যাচের একটিতেও জয় নেই বাংলাদেশের। এদিন তাদের রঙ্গশালায় কাবু করতে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল লাল সবুজরা। সাবিনা, কৃষ্ণা, স্বপ্না, সানজিদারে দাপটে কোনঠাসা ছিল ভারত। তখনই মারাত্মক ভুলটি করে বসেন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। ১৮ মিনিটে সানজুর সাধারন মানের কর্নার কিক বাংলাদেশ কিপারের হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। রুপনা ‘মাই বল’ বলে চিৎকার দেয়ায় অন্য ডিফেন্ডাররা বলটি ক্লিয়ার কররে যাননি। পরবর্তীতে বলটি হার হাতের সাথে বেইমানী করে বেরিয়ে গেলে তাতে পা লাগিয়ে ভারতীয় শিবিরে উল্লাস ডেকে আনেন ডিফেন্ডার দালিমা চিবের।

এমন ভুলে গোল হতেই পারে। তখনও গোল পরিশোধের জন্য ম্যাচের ৭২ মিনিট বাকী ছিল। ম্যাচটি ধরে খেললেই সমতার সুযোগ আসবে; কিন্তু গোলাম রাব্বানী ছোটনের দল পিছিয়ে পড়ার পর থেকেই গোল পরিশোধে অল আউট অ্যাটাকে যায়। পুরো ডিফেন্স লাইন চলে আসে মাঝ রেখার বরাবর। ভারতীয় কোচ মায়মল রকিও ছিলেন এই সুযোগের অপেক্ষায়। সাথে যোগ হয় ডিফেন্ডার শিউলি আজিমের বাজে পারফরম্যান্স। এই রাইটব্যাক আটকাতেই পারছিলেন না সানজুকে। ম্যান মার্কিংয়ে ব্যর্থ মাসুরা ও আঁখিও।

ভারতীয় দল তখন কাউন্টার অ্যাটাকে একের পর এক গোল সংখ্যা বৃদ্ধি করে ম্যাচ নিজেদের করে নেয়। ২২ ও ৩৭ মিনিটে আরো দুই গোল আদায় এই পাল্টা আক্রমণ থেকে। ৯২ মিনিটে তাদের চতুর্থ গোলটি এই কৌশলেরই ফসল। তাদের প্রতিটি কাউন্টার অ্যাটাকেই এক সাথে ৪-৫ জন ফুটবলার উঠে আসেন। এতেই ছিন্ন ভিন্ন লাল সবুজদের রক্ষণ প্রাচীর। এই ডিফেন্স লাইন এবং গোররক্ষকের ভুলে নেপালের সাথে গ্রুপ ম্যাচে ৩ গোল হার। তা থেকে শিক্ষা নিতে পারেনি দল। সব মিলিয়ে গত দুই ম্যাচে ৭ বার বল গেল সাবিনাদের জালে।

২২ ও ২৭ মিনিটে বল ছিল ভারতীয় পোষ্টের সামনে, অর্থাৎ আক্রমনে বাংলাদেশ। সেই বলই কাউন্টার হয়ে গতবারের সাফ রানার্সআপদের জালে গেল। ২২মিনিটে সানজুর পাস থেকে ব্যবধান বাড়ান ইন্দুমাথি। ভারতীয়দের তৃতীয় গোলেরও মালিক ইন্দু মাথি কাথিরেসেনে। ৯২ মিনিটে বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেন বদলী হিসেবে নামা মনীষা।

রুপনার ভুলে প্রথম গোল হলেও ২৮ ও ৪৬ মিনিটে দুই বার দলকে বাঁচান তিনি। ভারতীয়দের আরো কয়েকটি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তা না হলে অবস্থা আরো খারাপ হতো। ম্যাচে বাংলাদেশ গোল পরিশোধের হাফ চান্স পেয়েছিল। ১১ মিনিটে স্বপ্না ও কৃষ্ণা ৩২ মিনিটে সাবিনা এবং ৪০ মিনিটে আঁখি ব্যর্থ হওয়ায় আবার ভারতের কাছে হার বাংলাদেশের।

গত নভেম্বরে এই ভারতের কাছে ১-৭ গোলে হেরেছিল ছোটন বাহিনী। কাল ৩৭ মিনিটেই ম্যাচ শেষ বাংলাদেশের। এরপরও কোচ ছোটন তিন খেলোয়াড় বদল করেছেন ৬৩ ও ৬৯ মিনিটে। এই ম্যাচে চমৎকার খেলেছেন সাবিনা, মনিকা, মাসুরা , আঁখি এবং শামসুন্নাহার।


আরো সংবাদ



premium cement