২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ব্রায়ান লারার দেশের ফুটবলার ঢাকা লিগে

শেন এন্থনি বাথেউ এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন - ছবি : সংগৃহীত

খেলাধুলার জগতে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো (টিঅ্যান্ডটি) নামের দেশটির নাম এলেই সবার সামনে ভাসবে ক্রিকেট প্রসঙ্গ। বিশ্বের নামকরা সব ক্রিকেটারের জন্ম এই ক্যারিবিয়ান দ্বীপ রাষ্ট্রে। ব্রায়ান লারা, ইয়ান বিশপ, ল্যারি গোমস, গাস লগি, ড্যারেন গঙ্গা, রবি রামপাল, ফিল সিমন্স, রোনাল্ড হোল্ডার, মারভেন ডিলন, দীননাথ রামদিন, ডোয়াইন ব্রাভো, দিনেশ রামদিন, লিন্ডে সিমন্স, হাল আমলের ড্যারেন ব্রাভো সুনীল নারিন ও কাইরন পোলার্ড সবাই এই ত্রিনিদাদ টোবাগোর কৃতী সন্তান।

তবে তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন একজনই। ব্রায়ান চার্লস লারা। পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি উচ্চতার এই বামহাতিকে বলা হয় সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। টেস্টে ১১ হাজার ৯৫৩ এবং ওয়ানডেতে ১০ হাজার ৪০৫ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। টেস্ট এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪০০ এবং প্রথম শ্রেণীতে ৫০১ রানের রেকর্ড এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক এই অধিনায়কের দখলে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দেশে এখন জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে পড়েছে ক্রিকেট। স্থানটি নিয়েছে ফুটবল।

সেই দেশের ফুটবলার শেন এন্থনি বাথেউ এখন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। খেলছেন মুক্তিযোদ্ধার জার্সি গায়ে স্টপার ব্যাক পজিশনে। লাল-সবুজের দেশে এখন পর্যন্ত বহু দেশের ফুটবলার এসেছেন। তবে এই প্রথম পা দেয়া ত্রিনিদাদ-টোবাগোর কোনো ফুটবলারের।

১৬টি দ্বীপ দেশের সমন্বয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় ক্রিকেট দল। এরই একটি ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো। দুই দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশটি। এর ত্রিনিদাদ অংশের নাগরিক লারা। মুক্তিযোদ্ধার শেন এন্থনিও ত্রিনিদাদের। এন্থনি জানালেন, দেশটির তারকা ক্রিকেটার ড্যারেন ব্রাভো তার বাল্যবন্ধু। দেখা হয়েছে ক্যারিবিয় ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারার সাথেও।’ লারার ভাতিজা মারিও লারার সাথে একই স্কুলের ছাত্র ছিলেন এন্থনি। এই মারিওর সাথে দুইবার ব্রায়ান লারার বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল এন্থনির। তখনই দেখা গ্রেট ক্রিকেটারের সাথে। বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি। এন্থনির দেয়া তথ্য, লারা তখন বিশ্রামে ছিলেন।

এন্থনি নিজেও ছিলেন ক্রিকেটার। স্কুলপর্যায়ে বেশ ভালো পেস বল করতেন। কিন্তু ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলে অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনা বেশি তাই ফুটবলার হিসেবে গড়েন ক্যারিয়ার। ফুটবলে কোনো ফেলনা নয় ত্রিনিদাদ টোবাগো। ২০০৬ এর জার্মানি বিশ্বকাপে খেলেছে। ফিফা র্যাংকিংয়ে ৯৩তে থাকা দেশটি জার্মানি বিশ্বকাপে গোলশূন্য ড্র করে সুইডেনের সাথে। এ ছাড়া ০-২ গোলে হার ইংল্যান্ড ও প্যারাগুয়ের কাছে।

সেবার দেশটি আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে খেলে রেকর্ড গড়ে। ২০১৮ সালে এই রেকর্ড চলে যায় আইসল্যান্ডের দখলে। তা জনসংখ্যার বিচারে। ত্রিনিদাদ-টোবাগোর তারকা ফুটবলার ডুইট ইয়র্ক খেলেছেন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ক্লাব ম্যানচেষ্টার ইউনাটেডে।

এন্থনি জানান, ‘২০০৬ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার পর থেকেই ফুটবলে জনপ্রিয়তা বেড়েছে দেশটিতে। পেছনের কাতারে চলে গেছে ক্রিকেট।’ সেবার এশিয়ার দেশ বাহরাইনকে প্লে-অফে হারিয়ে জার্মানির টিকিট পায় টিঅ্যান্ডটি। অবশ্য এখনো দেশটির ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সংখ্যা বেশি। ২০ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বিপরীতে ফুটবল স্টেডিয়াম মাত্র ৬টি। বললেন তিনি। তবে প্রত্যেকের স্টেডিয়াম আলাদা। বৃষ্টি আর শুষ্ক এই দুই মওসুমে বিভক্ত দেশটি। খেলাধুলাও হয় মওসুমের সাথে মিল রেখে। তাদের ক্লাব ফুটবলে দর্শক তেমন না হলেও জাতীয় দলের ম্যাচে গ্যালারিতে জায়গা থাকে না তিল ধরনের। বিশ্বকাপের আগে ২০০০ সালে কনকাকাফ গোল্ডকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল। এরপর হয় তৃতীয়।

ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-২০ এবং অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলে খেলেছেন শেন এন্থনি। দেশের ফুটবলে শীর্ষ কয়েক ক্লাবেই প্রচুর টাকা। অন্য ক্লাবগুলোতে তেমন অর্থ কড়ি নেই। তাই ভাগ্য অন্বেষণে চলে এসেছেন এশিয়ায়। ছয় বছর ধরে এই মহাদেশে। থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ এবং ফিলিপাইন লিগে খেলেছেন। বিয়েও করেছেন থাইল্যান্ডে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র লিগের ফুটবলার ছিলেন। ফুটবলার পরিবারের সন্তান তিনি। তার বাবা খেলোয়াড় ছিলেন। এখন কোচ। আরেক ভাই খেলেন কাজাখস্তান লিগে। 

বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে তার মন্তব্য, কোয়ালিটি ফুটবলার আছে এই দেশে। স্কিল ফুল তারা। চেষ্টাও করে উন্নতির।

ফুটবল ক্রিকেটের বাইরে অ্যাথলেটিক্সেও ভালো দেশটি। অলিম্পিক গেমসে এখন পর্যন্ত তিন স্বর্ণ, চার রৌপ্য এবং ৮ ব্রোঞ্জ জিতেছে টিঅ্যান্ডটি।


আরো সংবাদ



premium cement