২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেসিবিহীন আক্রমণভাগই কি আর্জেন্টিনার হারের কারণ?

শেষ মুহূর্তের গোলে ব্রাজিলের জয় - সংগৃহীত

সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মিরান্ডার শেষ মুহূর্তের গোলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল।

নেইমারের কর্ণার থেকে ইনজুরি টাইমের তিন মিনিটে ইন্টার মিলানের এই সেন্টার-ব্যাক দারুণ এক হেডে আর্জেন্টিনাকে পরাস্ত করেন। এর আগে পুরোটা সময়ই দুই দলের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে মধ্য প্রাচ্যের সমর্থকরা প্রথমবার প্রিয় দুই দলের তারকাদের ম্যাচ সরাসরি মাঠে বসে উপভোগ করেছে।

যদিও ম্যাচটিতে আর্জেন্টিনাকে বেশ রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ব্রাজিলই বেশি আক্রমণ করেছে। ৩৪ বছর বয়সী মিরান্ডা ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘এই বয়সেও প্রমাণ করেছি শারিরীকভাবে এখনো আমি অনেক ফিট রয়েছি। অবশ্যই আমি জাতীয় দলের হয়ে আরো কিছুদিন খেলা চালিয়ে যেতে চাই। কারণ এই জার্সি গায়ে আরো কিছু প্রমাণের বাকি আছে।’

যদিও মিরান্ডার গোলের আগে ব্রাজিল বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে। নেইমারের পাস থেকে ক্যাসেমিরোর ২৫ গজ দুরের জোড়ালো শট আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোর কল্যানে জালে প্রবেশ করেনি। শেষ মিনিটে রিচারলিসনের একটি প্রচেস্টাও ব্যর্থ হয়। আর্জেন্টিনার সবচেয়ে ভাল সুযোগটি তৈরি হয়েছিল ম্যাচের ৬০ মিনিটে। লিওনার্দো পারেডেসের ভলি ব্রাজিল গোলরক্ষক এ্যালিসনকে পরাস্ত করলেও জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি।

ম্যাচে যেখানে ম্যানচেস্টার সিটির গ্যাব্রিয়েল জেসুস, বার্সেলোনা ফিলিপ কুতিনহো, লিভারপুলের রবার্তো ফিরমিনোর পাশাপাশি নেইমারকে নিয়ে শক্তিশালী আক্রমণভাগ সাজিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান কোচ তিতে, সেখানে আর্জেন্টাইন অ্যাটাক লিওনেল মেসির পাশাপাশি আরো কিছু তারকাদের অনুপস্থিতিতে বেশ দুর্বলই ছিল।

ব্রাজিলিয়ান ফুল-ব্যাক ফিলিপ লুইস বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলাটা সবসময়ই কঠিন। কিন্তু আমাদের দল তাদের তুলনায় আজ ভাল ছিল। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই আমরা একই ভিত্তিতে দল গঠন করে চলেছি। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা দলে আমূল পরিবর্তন আনার পর্যায়ে রয়েছে।’

কাল আর্জেন্টিনা দলে ছিলেন না ম্যানচেস্টার সিটির ইন-ফর্ম ফরোয়ার্ড সার্জিও আগুয়েরো, পিএসজি উইঙ্গার অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ও এসি মিলান স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়েন। গত চারটি প্রীতি ম্যাচেই দলের বাইরে রয়েছেন মেসি। রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ ১৬’ থেকে বিদায়ের পরপরই মেসি নিজেই কিছুদিন জাতীয় দল থেকে বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী বছরের কোপা আমেরিকার আগে দলের বাইরে থেকে নিজেকে আবারো গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন এই সুপারস্টার।

এই নিয়ে ১০৫তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে দক্ষিণ আমেরিকার এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি মুখোমুখি হলো। এর মধ্যে ব্রাজিল জিতেছে ৪১টি, আর্জেন্টিনা ৩৮টি, ড্র হয়েছে ২৬টি ম্যাচ। দুই দল সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে অস্ট্রেলিয়ায় এক প্রীতি ম্যাচে মোকাবেলা করেছিল। ম্যাচটিতে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ১-০ গোলে। কিন্তু নভেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল সেলেসাওরা।

 

ইনজুরি টাইমের গোলে আর্জেন্টিনাকে হারাল ব্রাজিল

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ইনজুরি টাইমের গোলে আর্জেন্টিনাকে পরাজিত করেছে ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করার সময়ে (৯০+৩) ব্রাজিলীয় সুপারস্টার নেইমারের কর্নার থেকে হেডে গোল করেছেন মিরান্ডা। ফলে মঙ্গলবারের সুপার ক্ল্যাসিকোতে ১-০ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছে তিতের দল। গত বছর মেলবোর্নের সুপার ক্লাসিকোতে একই ব্যবধানে হারের প্রতিশোধ নিলো ব্রাজিল।

মেসিবিহীন আর্জেন্টিনা এই ম্যাচের প্রথমার্ধে  সমান তালে লড়াই করলেও দ্বিতীয়ার্ধে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে ছিল ব্রাজিলীয় দাপট। বিশেষ করে শেষ ২০ মিনিট আর্জেন্টাইন গোল পোস্টে একের পর এক আক্রমণ করেছে ব্রাজিল। ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ডদের গতির সাথে কুলিয়ে উঠতে পারেনি আর্জেন্টাইন ডিফেন্স। ফলে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা দিতে হয়েছে গোলরক্ষক রোমেরোকে। অনেকবারই ব্রাজিলীয় ফুটবলারদের গোল বঞ্চিত করেছেন রোমেরো।

গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার নিয়মিত এই গোলরক্ষক খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। বিশ্বকাপে ্আর্জেন্টিনার বিকল্প গোলরক্ষকদের পারফরম্যান্স ছিলো যাচ্ছে তাই। এদিন রোমেরো বেশ কয়েকটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে যেন সমর্থকদের আরো একবার মনে করিয়ে দিলেন বিশ্বকাপে তার অভাবের কথা।

ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার ছিলেন তার চেনা ছন্দে। পায়ে বল গেলেই দারুণ কারিকুরিতে প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের নাচিয়ে ছেড়েছেন নেইমার। বেশ কয়েকবার গোলের কাছাকাছি পৌছেও ফিনিশিংটা করতে পারেননি। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার জোরালো আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন নেইমার। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন কুতিনহো। আর দ্বিতীয়ার্ধে তো নেইমারই ছিলেন ব্রাজিলীয় ছন্দের প্রাণভোমরা। বামপ্রান্ত দিয়ে একের পর এক আক্রমণে তটস্থ রেখেছেন আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগকে।

৬৭ মিনিটে গাব্রিয়েল জেসুসের বদলি হয়ে মাঠে নামা রিচার্লিসন দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নেইমারের ক্রস ব্যাকপোস্টে পেয়েও গোলবারের পাশ দিয়ে শট নেন রিচার্লিসন। ৭০ মিনিটে নেইমারের ফ্রি-কিক থেকে  আসা উড়ন্ত বলে জোরালে শট নেন আর্থার।  কিন্তু আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো দুর্দান্তভাবে লাফিয়ে গোল ঠেকান।

গোলের সুযোগ আর্জেন্টাইনারও তৈরি করেছিলো কিছু। ম্যাচের ৮ মিনিটে নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর কাছ থেকে বল পেয়ে প্রথম শট নিয়েছিলেন জিওভানি ল চেলসো। সেটা গোলবারের পাশ দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

প্রথমার্ধে দারুণ লড়াই করা আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সেই ধারা ধরে রেখেছিলো ।  আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম পরিবর্তন আনে ৫৮ মিনিটে। দিবালা জায়গা করে দেন লতারো মার্তিনেসকে। কিন্তু তাতে আক্রমণের ধার বারেনি।

৬০ মিনিটে লিয়ান্দ্রো পারাদেসের ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শট ব্রাজিল গোলরক্ষক আলিসনকে শঙ্কায় ফেলতে পারেনি। পরের মিনিটে ল চেলসোকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করেন মারকুইনহোস।

ম্যাচে বল দখল ও আক্রমণে এগিয়ে ছিলো ব্রাজিল। উভয় দল মিলে ৩৫টি ফাউল করেছ। হলুদ কার্ড দেখেছেন দুই দলের মোট ৭ জন। ফলে প্রীতি ম্যাচ হলেও বল দখলের লড়াইয়ে ছিলো উত্তেজনা।


আরো সংবাদ



premium cement