ফিফার বর্ষসেরা গোলদাতা মোহাম্মদ সালাহ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:০৩
প্রথমবারের মতো ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় শীর্ষ তিনে স্থান পেয়েছিলেন লিভারপুল তারকা মোহাম্মদ সালাহ। ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের সেরা তিনে এ বছর ছিলেন না আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো সেই তালিকায় থাকলেও অনুষ্ঠানে আসেননি। ফলে সম্ভাব্য বিজয়ী যে লুকা মদ্রিচ কিংবা মোহাম্মদ সালাহর মধ্যে একজন হচ্ছেন সেটাও প্রায় নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। সোমবার লন্ডনে 'দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ড' অনুষ্ঠানে সেটাই হল। সালাহকে পেছনে ফেলে ২০১৮ সালের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হলেন লুকা মদ্রিচ।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের বর্ষসেরা গোলের জন্য পুসকাস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মিশরের ফুটবল বিস্ময় মোহাম্মদ সালাহ।
সোমবার লন্ডনে ‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে সেরা গোলের জন্য এভারটনের বিপক্ষে করা গোলটির জন্য সালাহর নাম ঘোষণা করা হয়।
গত ডিসেম্বরে অ্যানফিল্ডে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ডি-বক্সের ডান দিকে বল পেয়ে দুজনকে কাটিয়ে বাঁ পায়ের উঁচু শটে দূরের পোস্ট দিয়ে গোলটি করেছিলেন মিশরের এই ফুটবলার। ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়।
আরো পড়ুন: বিশ্বকাপে সালাহ ম্যাজিক দেখবে বিশ্ব
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ২৭ মে ২০১৮
মিসরীয়দের আশার আলো প্রায় নিভেই গিয়েছিল শনিবার রাতে। কিন্তু তা আবার নিভু নিভু জ্বলছে। কারণ একটাই মোহাম্মদ সালাহ। সার্জিও রামোসের 'আক্রমণে' ঘাড়ে গুরুতর চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। যাওয়ার আগে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন। তার সাথে চোখের জল ঝরে অনেক ভক্তের। পরে জানা যায়, গুরুতর চোটের কারণে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। এই খবরে ভেঙে পড়ে সারাবিশ্বের সালাহ ভক্তরা। আর মিসরীয়রা তো শোকে ভাষাই হারিয়ে ফেলেছেন কিছু বলার। অবশেষে আশার আলো জ্বালিয়েছেন দেশটির কর্তৃপক্ষ। বলেছে, বিশ্বকাপে সালাহ ম্যাজিক দেখবে বিশ্ব।
শনিবার চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর বিশ্বকাপে সালাহ মাঠে নামতে পারবেন কিনা তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। ম্যাচ শেষে লিভারপুলের ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ বলেছেন, 'তার ইনজুরি খুবই মারাত্মক। খুবই মারাত্মক।'
তবে হাল ছেড়ে দেয়নি মিসর। তারা সালাহকে নিয়ে আশাবাদী। জানিয়েছে, টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই চোট থেকে সেরে উঠবেন এবং তাদের হয়ে মাঠ কাঁপাবেন।
রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক সার্জিও রামোস খেলার ২৬ মিনিটের মাথায় সালাহকে টেনে মাটিতে ফেলে দিলে কাঁধে মারাত্মক চোট পান। প্রথমে মাঠেই তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি খেলা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আর পারেননি। পরে তিনি ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে মাঠের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন। এসময় কাঁদছিলেন তিনি।
ম্যাচের ভাগ্য তখন প্রায় নির্ধারণ হয়ে যায়। ফাইনালে লিভারপুল ৩-১ গোলে হেরে যায় মাদ্রিদের কাছে। পরপর তিনবার শিরোপা জিতে হ্যাট্রিকের গৌরব অর্জন করে রিয়াল।
লিভারপুল বস ক্লপ জানিয়েছেন, "সালাহকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এক্স-রে করে দেখার জন্যে। আঘাতটা হয় তার কলারবোনে কিম্বা তার কাঁধে। তবে দেখে খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না।"
তবে মিসরের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন টুইট করে জানিয়েছে যে সালাহর এক্স-রে করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে যে, তার কাঁধের লিগামেন্ট মচকে গেছে।
মিসরের ফুটবল কর্তৃপক্ষ আশা করছে, রাশিয়ায় বিশ্বকাপ শুরুর আগেই সালাহ এই চোট থেকে সেরে উঠবেন।
আগামী ১৪ জুন থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল।
এই মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে মোহাম্মদ সালাহ ৪৪টি গোল করেছেন।
২৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার ৩৪ মিলিয়ন পাউন্ডে গত জুন মাসে রোমা থেকে চলে আসেন লিভারপুলে। প্রথম মৌসুমেই তিনি লিভারপুলসহ সবাইকে মাত করে দিয়েছেন।
প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষ গোলদাতা তিনি। করেছেন ৩২টি গোল। আর লিভারপুল পয়েন্ট তালিকায় উঠে এসেছে চার নম্বরে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সালাহ যতক্ষণ কিয়েভের মাঠে ছিলেন, রিয়াল মাদ্রিদের গোল পোস্ট লক্ষ্য করে লিভারপুল নয়টি শট খেলেছে কিন্তু তাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেয়ার পর প্রথমার্ধে আর কোনো শট নিতে পারেনি।
এদিকে মিসরীয় ফুটবল সাংবাদিক মারওয়ান আহমেদ লিখেছেন, তিনি মনে করেন আসলেই এটি একটি বিপর্যয়কর ঘটনা। এটা ব্যাখ্যা করার মতো কোনো ভাষা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।
তিনি লিখেছেন, "সালাহ যখন মাটিতে পড়ে গেল তখন মিসরে কয়েক মিনিটের জন্যে নিরবতা নেমে এসেছিল। পরেরবার যখন সে মাঠে বসে পড়লো তখন আমরা বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা খুব একটা সুবিধার নয়। তাকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হবে।
তিনি বলেছেন, মিসরের কোনো মানুষই এরকম একটা দৃশ্য দেখতে চায়নি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে এর আগে আমরা আর কোনো মিসরীয়কে খেলতে দেখিনি। মিসরীয়দের তখন কেমন লাগছিল সেটা লেখার জন্যে আমি কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। অনেকে তো কাঁদতেই লাগলো।
তবে তিনি আশা করছেন, চোট থেকে সেরে উঠবেন সালাহ। এবং বিশ্বকাপ খেলবেন।
"মিসরের ইতিহাসে তিনি একজন সেরা ফুটবলার। গত ২৮ বছর ধরে আমরা বিশ্বকাপ খেলতে পারিনি। এতো কাছাকাছি পৌঁছে এখন আমরা দেখতে চাই না যে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাক," লিখেছেন মিসরের এই ফুটবল সাংবাদিক।
'সালাহ যখন কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ছিলেন, রামোস তখন শয়তানের মতো হাসছিলেন'
কোনো কিছুই এখন মানুষের চোখ এড়ায় না। কিন্তু চোখ তো প্রমাণ রাখতে পারে না, যা পারে ক্যামেরা। সেই ক্যামেরায়বন্দি হলো, রামোসের কুৎসিত হাসি। মোহাম্মদ সালাহ যখন ঘাড়ের যন্ত্রণায় কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন কুৎসিতভাবে হাসছিলেন তিনি। সেই হাসি বন্দি হয়েছে ক্যামেরায়। আর এখন দেখেছে সারাবিশ্ব।
সালাহকে মাঠে ফেলে দেয়ার পর হাত সরিয়ে নেন সার্জিও রামোস। রেফারিকে বলেন, তিনি নির্দোষ। তা-ই মেনে নেন রেফারি।
ফিজিও এসে সালাহকে দেখে মাঠের বাইরে নিয়ে যান, তখন ক্যামেরা তাক করা ছিল রামোসের দিকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিক্রিয়া নেয়ার চেষ্টা। তা পেয়েও যান ক্যামেরাম্যান। সালাহকে মাঠ ছাড়তে দেখে কুৎসিতভাবে হাসতে থাকেন রামোস।
এই ছবি প্রকাশ হওয়ার পর ফুটবলবিশ্ব ধিক্কার দিচ্ছে এই রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড়কে। তাকে ভিলেন বলে সম্বোধন করা হচ্ছে।
গ্যালারি শুদ্ধ মানুষ যখন সালাহর জন্য কাঁদছেন, তখন স্বস্তির হাসি হাসছিলেন রামোস। যেন পথের কাটা দুর করে তৃপ্ত তিনি।
টুইটারে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একজন সমালোচনা করে বলেছেন, 'সালাহ যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, শয়তানের মতো হাসছিলেন রামোস।'
আরেকজন টুইট করেছেন, 'রামোস দেখতে তখন জঘন্য লাগছিল।'
ক্ষুদ্ধ আরেকজন বলেন, 'আমি ভাবতেই পারছি না রামোস কীভাবে এমন একটা কাজ করলেন?'
রামোসকে ধিক্কার জানিয়ে একজন লিখেছেন, 'বাজে কাজ করেছেন রামোস। সে ভয়ঙ্কর একজন খেলোয়াড়।'
ফুটবল না, কুস্তি করতে নেমেছিল রোনালদোরা
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শুরুটা ভালোই ছিল। রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদ আর সালাহর লিভারপুল লড়ে যাচ্ছিল। বল নিজেদের দখলে বেশি রাখছিলেন সালাহরা। কয়েকবারই রিয়ালের জালে আক্রমণ চালিয়েছে তারা। তাতেই হয়ত আতঙ্ক জেকে ধরেছিল রোনালদোদের। এরপর তাদের লক্ষ্য হয়ে উঠেছিলেন লিভারপুলের প্রাণভোমরা সালাহ। বার বার তাকে আক্রমণ করা হচ্ছিল। একটা পর্যায়ে তারা এ কাজে সফলও হয়। সার্জিও রামোস সালাহর হাত এমনভাবে আটকান যে, মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সালাহ। হাত বাঁকিয়ে চাপা পড়ে তার শরীরেই। ব্যাথায় ছটফট করেন সালাহ। তখন রামোস নির্দোষ ভাব করে সরে পড়েন। রেফারিও টু শব্দ করেন না। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত লিভারপুল বস ক্লপ। ম্যাচ শেষে বলেন, 'মনে হচ্ছিল কুস্তি হচ্ছে।'
প্রথমার্ধেই কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন সালাহ। চোট পেয়েও মাঠে নেমেছিলেন সালাহ। কিন্তু টিকতে পারেননি। ব্যাথায় ককিয়ে উঠে মাঠে লুটিয়ে পড়েন। পুরো গ্যালারি তখন স্তব্ধ!
সবাই দৌড়ে এসে সালাহকে ঘিরে ধরলেন। সালাহকে উঠে দাড় করালেন, কথা বললেন। এরপর অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন সালাহ। লিভারপুলকে স্বপ্নের শিরোপাটা উপহার দেয়া হলো না।
ওইদিকে গ্যালারিতে সালাহ-ভক্তরা কেউ মুখে হাত দিয়ে বসে আছেন। কেউ চোখ মুছছেন। আর সালাহ...। সালাহ কাঁদছেন...।
এই ঘটনার পর কার্যত ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায় লিভারপুলের। ৩-১ ম্যাচ জিতে নেয় রিয়াল।
ম্যাচ শেষে লিভারপুল বস তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, 'আমি জানি, এ ধরণের একটি ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর কিছু বললে, সবাই ব্যর্থতার বুলি আওড়াচ্ছি বলবেন। তবুও বলছি, ম্যাচটি কিছুটা কুস্তির মতো হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে সালাহ ঘাড়ে মারাত্মক চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন।'
তিনি আরো বলেন, 'যা হয়েছে তা কাম্য ছিল না। ছেলেরা এই ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেছে। তারা হতাশায় ডুবি গিয়েছিল, সেই সুযোগটাই রিয়াল কাজে লাগিয়েছে।'
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা