২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আজও কি চোখজুড়িয়ে দিবে আঁখির গোল?

সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে গোল্ডেন বুট জিতেছিল আঁখি খাতুন - সংগৃহীত

‘ভাই তোমাদের ৫ নম্বর জার্সিধারী ফুটবলার তো দারুণ খেলে। তার শট তো নয়, যেন বুলেট। আমার খুব ভালো লেগেছে তার খেলা।’ পরশু চ্যাং ঝি ঝি ফুটবল মাঠ থেকে ফেরার সময় ট্যাক্সি ড্রাইভার দিলীপ কুমার ঘালির মুখে এভাবেই বাংলাদেশের আঁখি খাতুনের প্রশংসা। শুধু এই ট্যাক্সিওয়ালাই নন, মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে ভুটান লিগের দল ফুন সলিং এফসির ফুটবলার প্রেমা ওয়াংচুক, রিজঝুং এফসির খেলোয়াড় দর্জি গেলসেনসহ অনেকের মন জয় করেছেন আঁখি খাতুন। ডিফেন্সে যেমন প্রাচীরসম তিনি, তেমনি ওভার ল্যাপ করে উপরে উঠে আসেন চমৎকার পায়ের কাজে ড্রিবলিং করে। কর্নারের সময় হেড করতে আসেন। তার দীর্ঘ দেহটা তখন বড় অস্ত্র। সেই সাথে যুক্ত হয় তার দূরপাল্লার প্রচণ্ড গতির শট। এই দূরপাল্লার শটেই এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে গোল করেছিলেন তিনি। গত বছরের সাফে আজকের প্রতিপক্ষ ভুটানের বিপক্ষে তার ছিল জোড়া গোল। তাই আজো তার কাছে গোল প্রত্যাশা সবার।

আঁখি খাতুন জানান, আমার প্রধান দায়িত্ব প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো। এরপর সুযোগ পেলে গোলের চেষ্টা করব।

এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে চার গোল আঁখির। ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানের মাটিতে গোল করেছিলেন নেপালের বিপক্ষে। ৯ আগস্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে তার দর্শনীয় গোলটি ভাইরাল হয়েছে। তবে তিনি এগিয়ে রাখলেন গত বছর ঢাকায় ভুটানের বিপক্ষে কর্নার থেকে সাইড হিলে করা গোলটিকে। তখন ভুটানের বিপক্ষে তার অন্য গোলটিও কর্নার থেকে। হেডে বল জালে পাঠান তিনি।

লাল-সবুজদের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। হেডে বিপক্ষ দলের ক্রস বা লব কিয়ারে দারুণ দক্ষ তিনি। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের থ্রু পাসগুলো নস্যাৎ করে দেন সময়মতো ছুটে এসে। এরপর কয়েকজনকে কাটিয়ে ঢুকে পড়েন বিপক্ষ সীমানায়। সাথে আছে দূরপাল্লার শট। নেপালের বিপক্ষে তো তার এমন একটি শট অল্পের জন্য জালে যায়নি। মাঠের এমন উজ্জ্বল পারফরম্যান্সই দৃষ্টিবন্দী করেছে দর্শকদের। তার ভক্তও কম নয়।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাটগোলা গ্রামের তাঁতি পরিবারের মেয়ে আঁখি খাতুন। গ্রামের অন্য আট দশটা মেয়ের মতো তারও হওয়ার কথা ছিল তাঁত শ্রমিক। কিন্তু ২০১৪ সালে শাহজাদপুরের ইব্রাহিম পাইলট স্কুলের হয়ে বঙ্গমাতা ফুটবলের মাধ্যমে তার ফুটবলে আসা। সুযোগ হয় বিকেএসপিতে। ২০১৬ সালে ডাক পান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলে। এরপর তাঁত নিয়ে আর মাথা ঘামাতে হয়নি তাকে।

আঁখির বাবা আক্তার হোসেন তাঁত শ্রমিক। নিজের কোনো মেশিন নেই। কাজ করেন অন্যের মেশিনে। আঁখির মা নাসিমা বেগম চাইতেন মেয়েও যেন তাঁত শ্রমিকের কাজ করে সংসারে বাড়তি উপার্জনে সাহায্য করে। এখন অবশ্য ফুটবল খেলেই পরিবারকে সাহায্য করছেন। আঁখি জানান, ‘আমি কখনো তাঁত শ্রমিকের কাজ করিনি। তবে মায়ের সাথে সুতা বুনতাম।’ ফুটবলের প্রতি তার টান দেখে স্কুলশিক্ষক মনসুর আহমেদ তাকে বাড়তি ট্রেনিং করাতেন। তার দীর্ঘ দেহের কারণেই বাফুফের কোচরা তাকে নির্বাচন করেন। সেই সূত্র ধরে আজ তিনি বাংলাদেশ সিনিয়র জাতীয় দলের ভবিষ্যতের তারকা।


আরো সংবাদ



premium cement