২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অবশেষে ক্ষোভে-দুঃখে অবসর নিলেন ওজিল

ওজিল
মেসুত ওজিল - সংগৃহীত

জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতি একরাশ ক্ষোভ। রাগ সমর্থকদের প্রতিও। বিশ্বকাপের মঞ্চে অপমানজনক ব্যবহার হজম করতে পারেননি ২৯ বছর বয়সী জার্মান ফুটবল তারকা মেসুত ওজিল। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ক্ষোভ উগড়ে গিয়ে ওজিল জানালেন, এর পর আর জার্মানির জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামা সম্ভব নয় তার পক্ষে। তাই এখন থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অবসরের গ্রহে ঢুকে পড়লেন তিনি।

রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায় ২০১৪’র বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বাকিদের সাথে ব্যর্থতার দায় গিয়ে পড়ে ওজিলের খাপার ফর্মের উপরেও। তবে পারফরম্যান্স জনিত কারণে নয়, দলের মধ্যে ওজিল কোণঠাসা হয়ে পড়েন রাজনৈতিক কারণে।

জার্মান হলেও পারিপারিক সূত্রে তুরস্কের সাথে যুক্ত ওজিল বিশ্বকাপের ঠিক আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়েব এরদোগোনের সাথে একটি ছবি পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতেই বেজায় চটে যায় জার্মান ফুটবল সংস্থা।

কোচ জোয়াকিম লো কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন, বিশ্বকাপের আগে বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে বৈঠক, ছবি তোলা, অটোগ্রাফ দেয়া জার্সি উপহার, এসব তিনি বরদাস্ত করবেন না।

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ভাবমূর্তি জার্মান জনমানসে স্বচ্ছ না হওয়ায় ওজিলকে এমন কাজের জন্য তীব্র ভর্ৎসনা করে জার্মান ফুটবল সংস্থা। সমর্থদেরও টিপ্পনি শুনতে হয় আর্সেনাল তারকাকে। সব মিলিয়ে রীতিমতো অপমানিত বোধ করেন ওজিল। সেই ক্ষোভ থেকেই অন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

 

আরো পড়ুন : আমার দু'টি হৃদয়, একটি তুরস্ক অন্যটি জার্মানি : ওজিল

ডেইলি সাবাহ

তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান ফুটবল খেলোয়ার মেসুদ ওজিল বলেছেন, আমি তুরস্ক বংশোদ্ভূত তাই তুরস্কের প্রতি আমার ভালবাসা রয়েছে। আমার পিতা আমাকে শিখিয়েছেন, আমরা যেখান থেকে এসেছি, যেখানে আমাদের পরিবার বেড়ে উঠেছে এবং আমাদের স্মৃতি রয়েছে আমরা যেন তাকে ভুলে না যাই।

ওজিল বর্তমানে জার্মানির নাগরিক। এ বিষয়টিকে তিনি ছোট করতে চান না। তিনি লিখেছেন, আমার দুইটি হৃদয়, এর একটি হচ্ছে তুরস্ক অন্যটি জার্মানি। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল ২০১০ সালে এরদোগানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ওই সময় বার্লিনে তুরস্ক ও জার্মানির মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি ফুটবল ম্যাচ এরদোগান ও মেরকেল একত্রে উপভোগ করেছিলেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের সাথে সাক্ষাৎ দিয়ে মুখ খুলেছেন তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান ফুটবল খেলোয়ার মেসুদ ওজিল। গত জুন মাসে তুরস্কে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এরদোগান লন্ডন সফরে গেলে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন ওজিল।

ওই ঘটনার পর জার্মান গণমাধ্যমে ওজিলের ব্যাপক সমালোচনা হয় এবং তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তখন থেকে ওজিল সম্পূর্ণ নীরব থাকলেও শনিবার তিনি তার টুইটার এ্যাকাউন্টে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। 

ব্রাজিলে ২০১৪ বিশ্বকাপের পর মেসুত ওজিলের সেই মহান কীর্তির কথা সকলেরই মনে আছে৷ জার্মানিকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড বোনাস পেয়েছিলেন। পুরোটাই দান করে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের ২৩ জন অসহায় শিশুর চিকিৎসার কাজে। শুধু সেবারই কেন, পুরো কেরিয়ার জুড়েই এমন সমাজ সেবা মূলক কাজ করেছেন জার্মান মিডফিল্ডার। ফের একবার মানবতার চূড়ান্ত নিদর্শন রাখলেন ওজিল৷ এবার সঙ্গে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন ফরাসি মিডফিল্ডার পল পগবাকে। ২২ জন অসহায় আফ্রিকান শিশুর অস্ত্রোপচারের সব খরচ দিয়েছেন এই দু’জন।

‘বিগ শ্যু ইলেভেন’ নামের এক দাতব্য উদ্যোগে যোগ দিয়ে এই অসাধারণ কাজ করেছেন পগবা এবং ওজিল। ফুটবলে তো ১১ জনের দলে সব সময়ই খেলেন, এবার দুজনে নিজেদের ১১ জনের দল গড়ে নিয়েছেন। তবে ফুটবল মাঠে নয়, পগবা এবং ওজিলের এই এগারো শিশুর লড়াইটা জীবনের মঞ্চে। শারীরিক অসুস্থতা যাদের নিষ্পাপ শৈশবের সরলতায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাইছে।

ফুটবলকেও ছাপিয়ে যাওয়া সেই লড়াইয়ে ‘সতীর্থ’দের পাশে দাঁড়াতে পেরে উচ্ছ্বসিত ওজিলও। টুইটারে ভিডিওবার্তায় ওজিল বলেছেন, ‘ইউরো চলার সময়ে ১১ জন শিশুর চিকিৎসার ভার নিচ্ছি আমি। এরাই আমার এগারো জন। আমার সবচেয়ে পছন্দের দল। চিকিৎসার ব্যয় মেটানোর সামর্থ্য নেই এমন ২২ জন শিশুর সফল অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসকেরা। এখানে সাহায্য করতে পেরে আমি গর্বিত।’ 

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement