২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যেখানে থেমে গেছে মেসি-রোনালদোর সেরা হওয়ার লড়াই

যেখানে থেমে গেছে মেসি-রোনালদোর সেরা হওয়ার লড়াই - সংগৃহীত

কে সেরা? লিওনেল মেসি নাকি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এই প্রশ্নটা গত একদশকে ফুটবল প্রেমীদের কাছে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় ছিল। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপের পর সেই বিতর্ক কেবল ইতিহাস মাত্র। নিজেদের গ্রেটেস্ট অব অল টাইম (GOAT) বলে দাবি করলেও দুজনই ২০১৮ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছেন গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই। সুতরাং, বিতর্ক তৈরি হয়ে গেছে, মেসি-রোনালদোদের স্ব স্ব পক্ষে দাবি করা গ্রেটেস্ট অব অল টাইম- খেতাবটা সত্যি সত্যি দেয়া যায় কি না।

ক্লাব ফুটবলে অনেক কিছুই তারা করেছেন। ভুরি ভুরি গোল দিয়েছেন। একের পর এক ট্রফি জিতেছেন। ব্যক্তিগত পুরস্কারে ভরিয়ে ফেলেছেন নিজেদের শো কেস। ৫ বার করে জিতেছেন ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার এবং ব্যালন ডি’অর। গ্রহের সেরা ফুটবলার, মত্যের সেরা ফুটবলার কিংবা ভিন গ্রহের ফুটবলার- কত নামেই তো ডাকা হয়েছে।

কিন্তু সেরার মাপকাঠি তো বিশ্বকাপ। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টই একজন ফুটবলারের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সেরা সুযোগ। সেই সুযোগকে চারবারের চেষ্টায়ও কাজে লাগাতে পারেননি লিওনেল মেসি। সর্বোচ্চ একবার দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে সহজ সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেননি। মেসি নিজে এক সময় বলেছেন, ‘আজও সেই মিসের কথা মনে উঠলে হাহাকার তৈরি হয়।’ যে কারণে সেই ম্যাচের ভিডিও’ও দেখতে সাহস পান না তিনি।

দু’বার কোপা আমেরিকার ফাইনালেও তুলেছিলেন দলকে। দু’বারই চিলির কাছে টাইব্রেকারে হেরে শিরোপা বঞ্চিত থাকতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। এমনকি শেষবার তিনি নিজেই টাইব্রেকারে শট মিস করেছেন। জাতীয় দলের হয়ে তাই মেসির সাফল্যের খাতা একেবারেই শূন্য।

এখানে মেসির চেয়ে একটু হলেও এগিয়ে রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। জাতীয় দলের হয়ে একটি ট্রফি অন্তত নিজের নামের পাশে লিখতে পেরেছেন তিনি। ২০১৬ ইউরো জিতিয়েছেন দলকে। পর্তুগালের ইতিহাসে প্রথম কোনো বড় শিরোপা উপহার দিলেন তিনি। সেই সাফল্যে কিছুটা হলেও মেসির চেয়ে এগিয়ে সিআর সেভেন।

গত বছর থেকেই গ্রেটেস্ট অব অল টাইম বিতর্কটা উঠে গেছে। গত এপ্রিলেই বার্সার হয়ে দেপোর্তিভো লা করুনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথম ছাগলের ইমোজি ব্যবহার করে বার্সেলোনা তাদের টুইটার পেজে পোস্ট দেয়। ছাগলের ইংরেজি GOAT। যার পুরো অর্থ গ্রেটেস্ট অব অল টাইম।

মেসিকে এরপর দেখা গেছে নিজেও ছাগলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। ছাগলের ইমোজি ব্যবহার করে টুইটার, ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিচ্ছেন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে এর আগে কখনও দেখা যায়নি এমনটা করতে। নিজেকে GOAT বলে সেরাও দাবি করেননি।

কিন্তু বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেই নিজের থুতুনি খামছে ইঙ্গিত দিয়ে গোল উদযাপন করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বিশ্লেষকদের মতে, এটা হচ্ছে রোনালদোর নিজেকে GOAT দাবি করার ইঙ্গিত। পরে দেখা গেলো, ছাগলের মত একগুচ্ছ দাড়িও রেখে দিয়েছেন তিনি। যদিও মুখে স্বীকার করলেন না, এর মূল রহস্য কী!

মেসির শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা রোনালদোর ক্যারিশমা- সবই থেমে গেলো বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে এসে। আর্জেন্টিনাকে হারতে হলো ফ্রান্সের কাছে, ৪-৩ গোলে। মেসি এই ম্যাচেও দিলেন চরম ব্যর্থতার পরিচয়। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন পুরো ম্যাচে। সতীর্থদের কাছ থেকে ছিলেন বলের অপেক্ষায়। কেউ তাকে বল জোগান দিতে পারেননি। মেসিও ছিলেন নিষ্প্রভ। রোনালদো বিদায় নিলেন উরুগুয়ের কাছে হেরে। আবারও বিশ্বকাপের নকআউটে গোল করতে না পারার ব্যর্থতায় পুড়লেন মেসি-রোনালদো দু’জনই। দলের গুরুতত্বপূর্ণ মুহূর্তে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হলেন তারা।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপ কি খেলবেন মেসি? কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো? যদিও রোনালদো নিজে জানিয়ে দিয়েছেন, অবসরের ব্যাপারে এখনও তিনি কিছু ভাবেননি। তার ইচ্ছা, আগামী বিশ্বকাপও খেলার। মেসি খেলবেন কি না সেটা এখনই ধোঁয়াশায় ভরা। অবসরের ঘোষণাও দিতে পারেন আবার নাও পারেন। আগামী বিশ্বকাপ যদি খেলেন, তাহলে ৩৫ বছর পেরিয়ে যাবে মেসির বয়স। ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মেসির বয়স হবে ৩৫ বছর ২০৮ দিন।

২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর হতে পারে, মেসির বিশ্বকাপ জেতার সর্বশেষ সুযোগ। মাত্র তিনজন ফুটবলার এতটা বয়সে এসে শিরোপা জয়ের রেকর্ড দেখিয়েছেন। তারা হলেন নিলটন সান্তোস, ১৯৬২ সালে, ব্রাজিলের হয়ে, দিনো জফ, ১৯৮২ সালে ইতালির হয়ে এবং মিরোস্লাভ ক্লোসা, ২০৪ সালে জার্মানির হয়ে।

কিন্তু মেসি কী সত্যি সত্যি পারবেন পরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিজেকে ধরে রাখতে! ৫টি ব্যালন ডি’অর, ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং বার্সেলোনার হয়ে ৫৫২ গোল করার পর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আরেকটা বিশ্বকাপের অপেক্ষায় থাকবেন কি না মেসি, সেটাই বড় প্রশ্ন। তবে কথা হচ্ছে, ব্রাজিলের নিলটন সান্তোস পেয়েছিলেন ফুটবল ইতিহাসের সেরা একটি দলকে। দিনো জফ ছিলেন গোলরক্ষক। তার সঙ্গেও ছিল ইতালির ইতিহাসে অন্যতম সেরা একটি দল এবং ২০১৪ সালে মিরোস্লাভ ক্লোসার সাথেও ছিল সময়ের সেরা দলটি। কিন্তু বাকি ৪ বছর পর মেসির সঙ্গে তেমন একটি দল থাকবে কি না সেটাও প্রশ্নের বিষয়।

সুতরাং, এখনই হয়তো বলে দেয়া যায়, রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়ে মেসি এবং রোনালদো, দু’জনই ‘সর্বকালের সেরা’ হওয়ার বিতর্ককে থামিয়ে দিলেন। পেলে-ম্যারাডোনা, ব্রাজিলের রোনালদো, রোমারিও, জিদান, বেনেকনবাওয়ার, পাওলো রোসি- এদের মত বিশ্বজয়ী ফুটবলাররাই হয়ে থাকবেন সর্বকালের সেরার তালিকায়। মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে যোগ দিতে হচ্ছে জিকো, সক্রেটিস, ক্রইফ, ইউসেবিও, পুসকাস, ককসিসদের তালিকায়। যারা সেরা হতে পারলো সেরাদের সেরা।


আরো সংবাদ



premium cement