২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালে আর আমরা হিন্দু-মুসলিম খেলছি : হরভজন

ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালে আর আমরা হিন্দু-মুসলিম খেলছি : হরজভজন - ছবি : সংগৃহীত

আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা দেশ ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ ফুটবলে সাফল্য দেখে আফশোস করছেন দেশটির ক্রিকেটার হরভজন সিং। তিনি ট্যুইট করেছেন, ’৫০ লাখ মানুষের দেশ ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছে আর আমাদের দেশের ১৩৫ কোটি মানুষ হিন্দু-মুসলমান খেলছি। ভাবনা বদলাতে হবে, তবেই দেশ বদলাবে।’

ভারতীয় দল এখন পর্যন্ত একবারও বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে না পারলেও, ক্রোয়েশিয়া পঞ্চমবার বিশ্বকাপ খেলে ফেলল। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেই তৃতীয় স্থান অর্জন করার পর এবার রানার্স হয়েছে লুকা মদরিচ, মারিও মান্দজুকিচদের দল। তাদের এই খেলা দেখেই ভারতীয় ফুটবলের অবস্থা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন হরভজন।

আরো পড়ুন :

ঘটনাবহুল পাঁচে অবিস্মরণীয় বিশ্বকাপ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
জার্মানির বিপক্ষে জয়ের পর দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলারদের উল্লাস। (মাঝে) ইনজুরি টাইমের চতুর্থ মিনিটে নেইমারের শট হাতের আঙুলের আলতো টোকায় ক্রসবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে বেলজীয়দের বিপদমুক্ত করেন গোলরক্ষক থিও। (ডানে) হলুদ কার্ডে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ে মাঠেই ভেঙে পড়েন সেনেগালের এক ফুটবলার : ইন্টারনেট -
অসাধারণ সব মুহূর্তের অভ্যুদয় চিরস্মরণীয় বিশ্বকাপের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ২০১৮ সালের রাশান মেগা আসর। জায়ান্টদের দুঃস্বপ্ন ও নতুনের উত্থান পাল্টে দিয়েছে ফিফার সর্বোচ্চ আসরের অতীত ইতিহাস। প্রতিষ্ঠিত তারকাদের ব্যর্থতার মিছিলে নব-জন্ম ছোট দলের বড় তারকার। একক তারকার আধিপত্য টপকে দল হিসেবে পারফরম্যান্স প্রদর্শনে বিশ্বমঞ্চে সাফল্যের নতুন অধ্যায়েরও সূচিত হয়েছে ফিফার ২১তম বিশ্বকাপে। বল পায়ে অবিশ্বাস্য কারুকার্য ও দৃষ্টিনন্দন গোলোৎসবের পসরা উপহার দিয়েছে রাশান টুর্নামেন্ট। একেবারে শেষ মুহূর্তের ব্যর্থতায় যন্ত্রণাকাতর অভিজ্ঞতায় বিশ্বকাপ স্বপ্নপূরণের সমাপ্তিও নিয়মিত শিরোনামে ছিল ইউরোপীয় বিশ্বকাপের। ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর ফিফার ২১তম টুর্নামেন্টের অন্যতম আলোচিত ৫ মুহূর্ত নিয়েই এই প্রতিবেদন :

দক্ষিণ কোরিয়ায় স্তম্ভিত জার্মানি
সুইডেনের বিপক্ষে টনি ক্রুস ম্যাজিকে চ্যাম্পিয়ন জার্মানির রাশান বিশ্বকাপ রেসে নতুন প্রাণের সূচনা। ৯৩ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদ সুপারস্টারের ফ্রি-কিক গোলে শেষরক্ষা হলেও বিশ্বকাপ বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক গ্লানির ফাঁদ থেকে মুক্তি মেলেনি চারবারের চ্যাম্পিয়নদের। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে গ্রুপের শেষ খেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসেরও কোনো ঘাটতি ছিল জার্মানদের মধ্যে। কিন্তু মাঠে খেলার সূচনা থেকে ব্রাজিল বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলটির ফুটবলারদের পারফরম্যান্সে স্পস্ট অনুপস্থিতি ‘মাস্টউইন’ স্প্রিরিটের। খেসারতও গুনতে হয়েছে তাদের। নিশ্চিত ড্রতে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় মেনে নেয়া ম্যাচটির ইনজুরি সময়ে অবনমনের চূড়ান্ত গ্লানির ফাঁদে আটকা জার্মানি। দুই খেলা শেষেই বিশ্বকাপ শেষ দক্ষিণ কোরিয়ার। তবে স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার খেলায় রাশান টুর্নামেন্টের অন্যতম চিত্রনাট্যের উপস্থিতির নেপথ্যে এশিয়ার প্রতিনিধি। ইনজুরি টাইমের ৬ মিনিটে ২ গোল আদায়ে মুহূর্তেই ফিফার ২১তম বিশ্বকাপের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দক্ষিণ কোরিয়া।

সেনেগালের দুঃখ ‘হলুদ কার্ড’
জয়/পরাজয় কিংবা গোল ব্যবধান ও পয়েন্টের হিসেবে প্রাথমিক পর্ব টপকে দ্বিতীয় পর্বে ৩২ দলীয় বিশ্বকাপ পরিণত হয় ১৬ দেশের আসরে। ১৯৩০-এ পথচলার সূচনা থেকেই ওই রীতিতে চূড়ান্ত প্রতিটি দলের টুর্নামেন্টে টিকে থাকা অথবা না থাকার ভাগ্য। কিন্তু রাশান মেগা আসর পাল্টে দিয়েছে দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতা। পয়েন্ট, গোলগড় ও মুখোমুখি লড়াইয়ে সমান জাপান-সেনেগালের নকআউট রেসে চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারণে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয়েছে ‘ফেয়ার প্লে’ হিসাব-নিকাশ। ফিফার মেগা আসরের ইতিহাসে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যকার ভাগ্যনির্ধারণের নতুন মাপকাঠি হিসেবে আত্ম প্রকাশ হলুদ কার্ডের। নতুনের আবির্ভাবের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর হয়নি আফ্রিকান দেশ সেনেগালের বেলায়। তিন খেলায় ৬ হলুদকার্ড হজম গ্রুপ পর্বেই সমাপ্তি তাদের ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ। নকআউটে জাপান। তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের চেয়ে দুইটি হলুদ কার্ড কম হজমের কাঁধে পা রেখে শেষ ষোলোয় এশিয়ার জায়ান্টরা।

মেসি-রোনালদোর বিদায়
রাউন্ড অব সিক্সটিন থেকেই সূচনা বিশ্বকাপে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রকৃত লড়াইয়ের। ফিফার ২১তম মেগা আসরের দ্বিতীয় ধাপের শুরুতে ফুটবলের সবচেয়ে আলোচিত দুই নক্ষত্র লায়নেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বিদায় দখলেও নেয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মাত্র ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে তারা দুইজন ছিটকে গেছেন ক্যারিয়ারের একমাত্র অপূর্ণতা বিশ্বকাপ জয়ের বহুপ্রতীক্ষিত সাফল্যের রেস থেকে। স্বল্পতম সময়ের ব্যবধানে হালের সেনসেশন দুই তারকার কাকতলীয় পতন অন্যতম আলোচিত বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রাশান মেগা আসরের ইতিহাসে।
কতুয়ার কৃতিত্বে বিমর্ষ ব্রাজিল
রাউন্ড অব সিক্সটিনে দুর্দান্ত ব্রাজিল। মেক্সিকোর বিপক্ষে নিজ মহিমায় উদ্ভাসিত নেইমারে নির্ভার ব্রাজিল হট ফেবারিট ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ে। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের মোকাবেলায় লাতিন জায়ান্টদের সাফল্য সময়ের ব্যাপার হিসেবে আখ্যা দেন বিশ্লেষকদের অনেকেই। কিন্তু মাঠের প্রকৃত লড়াইয়ে উপস্থিতি অপ্রত্যাশিত চিত্রনাট্যের। ২-১ গোলে পিছিয়ে ব্রাজিল। রেফারি প্রস্তুতি নিচ্ছেন শেষ বাঁশি বাজানোর। নিশ্চিত হার জেনেও ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া সেলেকাও খ্যাত ব্রাজিলও পৌঁছে যায় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। সমতাসূচক গোলের বল জালে প্রবেশের শেষ মুহূর্তেই বেঁকে বসেন সাবেক স্পেন চ্যাম্পিয়ন ও চেলসির বর্তমান গোলরক্ষক থিও কতুয়া। বাঁ হাতের আঙুলের টোকায় বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে বিপদমুক্ত করে চেলসি সুপারস্টার পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদেরও বিশ্বকাপের বাইরে পাঠিয়ে দেন।

‘পারফেক্ট’ বেলজিয়াম
দ্বিতীয়ার্ধের সূচনাতেই হজম ২ গোল। গ্রুপের টানা তিন ম্যাচে জয়ী বেলজীয়দের বড্ড অচেনা দেখাল রাউন্ড অব সিক্সটিনের সূচনায়। ফিফা র্যাংকিং ও ফুটবলীয় গৌরবে ঢের পিছিয়ে থাকা জাপানের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে শিরোপা রেসের ডার্কহর্স দলটির ২ গোল হজম ¯্রফে গোলক ধাঁধার মধ্যে ফেলে দেয় ভক্তদের! তবে ম্যাচটির ভাগ্য নির্ধারণের প্রকৃত নাটকীয়তা তখনো অবশিষ্ট ছিল।
ভক্তদের মনোবেদনাও বেলজীয় ফুটবলারেরা ভুলিয়ে দেন রাশান বিশ্বকাপের অন্যতম কুল ফিনিশিংয়ের ইতিহাস রচনায়। ইনজুরি টাইমের ৪ মিনিটের খেলা শেষ হতে বাকি তখন ১০ সেকেন্ড। স্কোরলাইন ২-২। কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবলের ধ্রুপদী রূপ উন্মোচনে নকআউটের ম্যাচের পারফেক্ট সমাপ্তির উৎসবে বেলজিয়াম। কল্পনার রঙ-তুলির আঁচড়ে ব্যক্তিগত ভূমিকা পালনে দলটির জয়োৎসবের গোলটির বল জালে প্রবেশ করান চাদলি।


আরো সংবাদ



premium cement