১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিশ্বকাপ জেতার আনন্দ রূপ নিলো দাঙ্গায়

বিশ্বকাপ জেতার আনন্দ রূপ নিলো দাঙ্গায় - ছবি : সংগৃহীত

২০ বছর পর আবারো বিশ্বকাপ জিতেছে ফ্রান্স৷ তাই আনন্দে দিশেহারা ছিলেন অনেক ফরাসি সমর্থক৷ প্যারিসের শঁজেলিজে-তে বিশ্বকাপ জয় উৎযাপনে হাজির হয়েছিলেন ৯০ হাজার মানুষ৷ কিন্তু কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষের কারণে শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা৷

অতি উৎসাহী এবং উচ্ছৃঙ্খল কিছু মানুষ বিভিন্ন ভবনের জানালা ভেঙে ফেলে৷ কিছু দোকানে লুটপাটও চালিয়েছে তারা৷

খেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকার রঙে রঙিন হয়ে ওঠে আইফেল টাওয়ার৷ সেনে ভেসে উঠছিল ১৯৯৮ এবং ২০১৮, যে দুই সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছে৷ বিশ্বকাপ জয়ের উন্মাদনা এত বেশি ছিল যে,অনেকে নগ্ন হয়ে কেবল পতাকা শরীরে জড়িয়ে ছিলেন৷ বিভিন্ন জায়গায় স্মোক বোমা ছোড়া হয়েছিল, যা থেকে ছড়িয়ে পড়ছিল ফ্রান্সের পতাকার তিনটি রঙ৷ গাড়িতে বাজছিল হর্ন আর পতাকা হাতে অনেকেই নেমে পড়েছিলেন রাস্তায়৷ কেবল প্যারিস নয়, পুরো ফ্রান্স জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছিল উন্মাদনা৷

খেলা দেখার সময় কিশোর ও তরুণদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল শঁজেলিজে৷ ফ্রান্স ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে পরাজিত করার পর সেখানে তরুণদের ভিড় আরো বাড়তে থাকে৷ এক পর্যায়ে প্রায় ৯০ হাজার তরুণ-কিশোর-কিশোরী জড়ো হন সেখানে৷

তাদের মধ্যে একজন ১৯ বছরের গোফ্রি হ্যামশিক বললেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে ফ্রান্স অনেক ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেমন সন্ত্রাসী হামলা৷ কিন্তু এই একটা জিনিস আমাদের সবাইকে এক করেছে৷ এই দেশে ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতির মানুষ রয়েছে৷ কিন্তু ফুটবলে কোনো ধর্ম নেই, ভেদাভেদ নেই৷ তাই এটা সবার মধ্যে ভালো একটা অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়৷''

সবকিছু ভালোই চলছিল৷ কিন্তু এক পর্যায়ে অতি উৎসাহী কিছু তরুণ বেশ কয়েকটি দোকানের কাঁচ ভাঙা শুরু করে, বিভিন্ন ভবনের দিকে বোতল ছুড়তে থাকে, আশেপাশে থাকা অস্থায়ী বেড়াগুলো ভেঙে ফেলে৷ তাই মধ্যরাতে এলাকাটি হঠাৎ করেই রণক্ষেত্রে রূপ নেয়৷

ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় ৪ হাজার পুলিশ৷ পানিকামান আর কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে৷

আগামী কয়েকদিন ধরে ফ্রান্সে এই উন্মাদনা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ভবন এলিজে প্রাসাদে চ্যাম্পিয়ন দলটিকে সংবর্ধনা দেবেন প্রেসিডেন্ট মাঁক্রো৷

আরো পড়ুন :
বাসস
ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতলো ফ্রান্স
২১তম ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’র ফাইনালে ফরাসিরা ৪-২ গোলে হারায় প্রথমবারের মত ফাইনালে ওঠা ক্রোয়েশিয়াকে। ১৯৯৮ সালের পর আবারো বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলো ফ্রান্স। আর প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠেও শিরোপা স্পর্শ করা হলো না ক্রোয়েশিয়ার। তাই রানার্স-আপ হয়ে এবারের বিশ্বকাপ মিশন শেষ করলো ক্রোয়েশিয়া।


মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই সর্তক কিন্তু দুর্দান্ত ফুটবল খেলতে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। বল দখলের লড়াইয়ের মাঝে নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। ৪-৪-২ ফরমেশনে শুরু করা ফ্রান্স ১৮ মিনিটেই গোলের স্বাদ নেয়। অবশ্য এজন্য পুরো কৃতিত্ব ক্রোয়েশিয়ার। কারণ গোলটি ছিলো আত্মঘাতী।
নিজেদের বক্সের সামনে ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার মার্সেলো ব্রোজোভিচ প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় আঁতোয়ান গ্রিজম্যানকে ফাউল করলে ফ্রি-কিক পায় ফ্রান্স। ক্রোয়েশিয়ার বিপদ সীমানার ফ্রি-কিক নেন গ্রিজম্যান। বাতাসে উড়ে আসা বল বিপদ মুক্ত করার জন্য হেড দেয়ার চেষ্টা করেন ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার মারিও মান্দজুকিচ। কিন্তু বল তার মাথার উপরের অংশে লেগে ক্রোয়েশিয়ার জালে প্রবেশ করলে আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে ফ্রান্স (১-০)। এবারের বিশ্বকাপে ১২তম আত্মঘাতি গোলে শুরুতেই এগিয়ে যায় ফ্রান্স।

গোল হজমের পর তেতে উঠে ৪-১-৪-১ ফরমেশনে ফাইনাল খেলতে নামা ক্রোয়েশিয়া। অবশ্য এমন অভিজ্ঞতা এবারের বিশ্বকাপ থেকে অর্জন করেছে ক্রোয়েশিয়া। নক-আউট পর্বের তিন ম্যাচেই গোল হজমের পর ম্যাচে সমতা এনে সেই ম্যাচগুলো জিতেছেও ক্রোয়েশিয়া। তাই ম্যাচের ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে তারা। আক্রমণ অব্যাহত রেখে ২১ মিনিটে ফ্রান্স শিবিরে আক্রমণ চালায় ক্রোয়েশিয়া। মিডফিল্ডার ও অধিনায়ক লুকা মড্রিচের ক্রস থেকে মাথার সহায়তায় গোল করার চেষ্টা করেন ডিফেন্ডার ডোমাগো ভিদা। কিন্তু সেই হেডে বল চলে যায় বারের উপর দিয়ে। ফলে গোল বঞ্চিত হয় ক্রোয়েশিয়া।

এরপর ম্যাচের ২৪ মিনিটে আবারো ভালো একটি আক্রমণ করে ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সকে গোল উপহার দেয়া মান্দজুকিচ বল যোগান দিয়েছিলেন মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচকে। বল পেয়ে ফ্রান্সের বারের উপর দিয়ে বল মারেন রাকিটিচ।
তবে ২৮ মিনিটে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ক্রোয়েশিয়া। কর্ণার থেকে জটলার মধ্যে বল পান মিডফিল্ডার ইভান পেরিসিচ। বল দখলে নিয়ে কিছুটা বাঁ-দিকে সড়ে গিয়ে ফ্রান্সের গোলমুখে শট নেয়ার পথ তৈরি করে প্রায় ২০ গজ থেকে তীব্র শটে বলকে ফ্রান্সের জালে আশ্রয় দেন পেরিসিচ(১-১)। পেরিসিচের গোলে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনার আরো আক্রমনাত্মক খেলা শুরু করে ক্রোয়েশিয়া।

সমতা এনেও বল দখলে রাখে ক্রোয়েশিয়া। আক্রমণও রচনা করার চেষ্টায় ছিলো তারা। কিন্তু ৩৮ মিনিটে আবারো ভাগ্যের দোষে গোল হজম করে ক্রোয়েশিয়া। বক্সের ভেতর ফ্রান্সের স্ট্রাইকার গ্রিজম্যানের নেয়া কর্ণারে উড়ে আসা বল হাতে লাগে ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার পেরিসিচের। এতে পেনাল্টির আবেদন করে ফ্রান্স। কিন্তু দেখতে না পারায় পেনাল্টি এড়িয়ে যান অনফিল্ড রেফারি আর্জেন্টিনার নেস্তর পিতানা। তবে ফরাসিদের জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে ভিএআরের সহায়তা নেন পিতানা। ভিডিও’তে স্পষ্টই দেখা যায়, বল পেরিসিচের হাতে লেগেছে। তাই নিজের সিদ্বান্ত থেকে সড়ে এসে পেনাল্টির নির্দেশ দেন পিতানা। পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন গ্রিজম্যান।

২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই ম্যাচের বিরতিতে যায় ফ্রান্স। তবে এসময় বল দখলে এগিয়ে ছিলো ক্রোয়েশিয়াই। ৬৭ শতাংশ বল দখলে রাখতে পারে ক্রোয়েশিয়া। প্রতিপক্ষের সীমানায় আক্রমনেও এগিয়ে ছিলো তারা। সাতবার আক্রমন করে দু’বার ফরাসিদের গোলমুখে শট নেয় ক্রোয়েশিয়া। অপরদিকে, ৩৩ শতাংশ বল দখলে রেখে ক্রোয়েশিয়ার সীমানায় একবার আক্রমন করে একবারই গোলমুখে শট নিতে পারে ফ্রান্স।
বিরতিতে থেকে ফিরে প্রথম আক্রমন করে ক্রোয়েশিয়া। ৪৮ মিনিটে রাকিটিচের পাস থেকে প্রতিপক্ষের গোলমুখে তীব্র গতির এক শট নেন ডিফেন্ডার সিমে ভার্সালিকো। কিন্তু তার শট ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিস কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করেন।

৫২ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে দুর্বার গতিতে ক্রোয়েশিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন ফ্রান্সে স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপে। এরপর গোলমুখে শট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গোলবার ছেড়ে কিছুটা সামনে এসে সেই শট রুখে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচ।

এর পর ৫৯ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে আবারো আক্রমণ শানায় ফ্রান্স। এবার মিডফিল্ডার পল পগবা। পগবার কাছ থেকে বল পেয়ে ক্রোয়েশিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকে গোলে শট নেন এমবাপে। তার শট ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে চলে যায় ডি-বক্সের কাছাকাছি। সেখানে বল পান গ্রিজম্যান। আলতো ছোয়ায় সামনেই থাকা পগবাকে বল দেন গ্রিজম্যান। বল পেয়ে ডান পায়ে ক্রোয়েশিয়ার গোলমুখে শট নেন পগবা। সেই শট ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার ডেজান লভরেনের গায়ে লেগে ফিরে আসে। ফিরে আসা বলে এবার বাঁ-পায়ে শট নেন পগবা। তার বল ক্রোয়েশিয়ার জালে চুমু খেলে ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।

এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতে আবারো গোল আদায় করে নেয় ক্রোয়েশিয়া। ৬৫ মিনিটে এবার গোলদাতাদের তালিকায় নাম তুলেন তরুন-তুর্কি এমবাপে। মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় ক্রোয়েশিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকার চেষ্টায় ছিলেন ডিফেন্ডার লুকাস হার্নান্দেজ। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ডি-বক্সের কাছাকাছি এমবাপেকে দেখতে পান হার্নান্দেজ। আর তাই এমবাপেকে বল বাড়িয়ে দেন হার্নান্দেজ। বল পেয়ে সামান্য বাঁ-দিকে সড়ে ডান-পায়ের তীব্র শটে বল ক্রোয়েশিয়ার জালে পাঠান এমবাপে। এই গোলে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে শিরোপা জয়ের আরো কাছে চলে আসে ফ্রান্স।

ফ্রান্সের চতুর্থ গোলের ৪ মিনিট পর ভাগ্যের সহায়তায় ব্যবধান কমায় ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সের ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমিতিতি বল সড়াতে মধ্যমাঠ থেকে মাইনাস করে দলের গোলরক্ষক হুগো লরিসকে দেন। ততক্ষণে হরিসের সামনে চলে আসেন ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার ও ফরাসিদের প্রথমেই আত্মঘাতি গোল উপহার দেয়া মান্দজুকিচ। ফ্রান্সের গোলরক্ষক লরিস বড় সড়াতে গিয়ে ব্যর্থ হন। বলে পা দিয়ে গোল আদায় করে নেন মান্দজুকিচ। ফলে ব্যবধান কমিয়ে ৪-২ স্কোরলাইন করে ক্রোয়েশিয়া।

শেষদিকে আক্রমণ করেও গোল আদায় করে নিতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। গোলের ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলে জয় নিয়ে দ্বিতীয়বারের বিশ্বকাপ জিতে নেয় ফ্রান্স।


আরো সংবাদ



premium cement
দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় : মতিউর রহমান আকন্দ টানা ১১ জয়ে ডিপিএলের প্রথম পর্ব শেষ করলো আবাহনী দেশে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের অংশ নিতে মানা সবল-দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কাজ শেষ হতে কত দিন লাগবে? জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর

সকল