২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফুটবলে ইউরোপের প্রাধান্যের কারণ কী? কতদিনই বা থাকবে?

ফুটবল
এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ম্যাচের একটি দৃশ্য - ছবি : এএফপি

রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষে পরের আসর জয়ের স্বপ্ন নিয়ে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের ফ্যানরা আশায় বুক বাঁধতেই পারেন।

আর্জেন্টিনা ফ্যানদের জন্য আশার কথা পরের বিশ্বকাপে মেসির বয়স হবে ৩৩, কাজেই তার খেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

আর নেইমার, কুতিনিয়ো, ফার্মিনো আর হেসুসদের নিয়ে অভিজ্ঞ আর শক্তিশালী দল তৈরী করে কাতার বিশ্বকাপ মাতানোর স্বপ্ন দেখতেই পারেন ব্রাজিল ফ্যানরা।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর জন্য পরের বিশ্বকাপগুলো জেতা আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

পরিকল্পিত অর্থায়ন আর সময়োপযোগী পদ্ধতিতে ফুটবল উন্নয়নের অবকাঠামো তৈরীর কারণে বিশ্ব ফুটবলে ইউরোপের আধিপত্য দিন দিন আরো শক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আর এর পরিষ্কার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এখনই।

২০১৮ বিশ্বকাপ জিতে টানা চতুর্থবারের মত কোনো ইউরোপীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপ জিতলো ফ্রান্স। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ঘটলো এমন ঘটনা।

২০০৬ এর বিশ্বকাপ থেকে দেখা যাবে, একমাত্র আর্জেন্টিনা (২০১৪) বাদে ইউরোপের বাইরের আর কোনো দেশ আসরের সেমিফাইনাল পর্যন্তই উঠতে পারেনি।

যদিও এখন পর্যন্ত হওয়া ২১টি বিশ্বকাপে লাতিন আমেরিকানদের সাফল্যের ইতিহাস ঈর্ষণীয়। ইউরোপিয়ান দেশগুলোর ১২টি শিরোপার বিপরীতে লাতিন দলগুলোর শিরোপা ৯টি।

কিন্তু দিনদিন এই ব্যবধান বাড়ছে।

লোভনীয় স্পন্সরশিপ
স্পন্সরশিপের পাওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান দেশগুলোর জন্য অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে তাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা।

ফুটবলের জন্য লাতিন আমেরিকা বা ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর চেয়ে বেশী অর্থ বরাদ্দ দেয়ার ক্ষমতা রাখে ইউরোপিয়ান দেশগুলো। কাজেই সেসব দেশে খেলোয়াড় তৈরী ও উন্নয়নের সম্ভাবনা বেশি থাকায় ঐসব দেশকে পৃষ্ঠপোষকতা করার প্রবণতা বেশি থাকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর।

এক্ষেত্রে অধিকাংশ দক্ষিণ আমেরিকান দেশই অনেক পিছিয়ে। তবে এক্ষেত্রে ব্রাজিলের অবস্থা অন্যান্য লাতিন আমেরিকার দেশের চেয়ে ব্যতিক্রমী। ব্রাজিল সাধারণত স্পন্সরশিপের হিসেবে সুবিধা পেয়ে থাকে।

তবে ব্রাজিলের এসব লোভনীয় স্পন্সর পাওয়ার পেছনে সাম্প্রতিক সাফল্যের চেয়ে অতীত ঐতিহ্যের ভূমিকাই বেশি।

মেসির আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রেও এই যুক্তি কার্যকর।

ক্রীড়াপণ্য নির্মাতা অ্যাডিডাসের সাথে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জার্সি স্পন্সরশিপের চুক্তির অর্থমূল্য বছরে ১১ মিলিয়ন ডলার, যা কখনো বিশ্বকাপ না জেতা রাশিয়ার সাথে অ্যাডিডাসের চুক্তির যে অর্থমূল্য - তার চেয়েও কম।

জার্মান সংস্থাটির সাথে জার্মানি আর স্পেনের চুক্তির মূল্য যথাক্রমে ৫৮ মিলিয়ন ডলার আর ৪৭ মিলিয়ন ডলারে।

জার্সি স্পন্সরশিপের অর্থমূল্যের বাজারে দরপতন হয়েছে ব্রাজিলেরও।

আমেরিকান সংস্থাটি ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার আর ৪০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ক্ষেত্রে অঙ্কটা ৩৬ মিলিয়ন ডলার।

নিশ্চিত স্লট
বর্তমান পদ্ধতিতে বিশ্বকাপের ৩২টি দেশের মধ্যে ১৩টি ইউরোপিয়ান দেশ খেলার সুযোগ পায়। বাকি দলগুলোর মধ্যে আফ্রিকা থেকে ৫টি, লাতিন আমেরিকা আর এশিয়া থেকে ৪টি, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা থেকে ৩টি এবং মহাদেশীয় প্লে-অফ থেকে তিনটি দল বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার সুযোগ পায়।

এই পদ্ধতিতে নিশ্চিতভাবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় ইউরোপের দেশগুলো। কিন্তু শুধু এই সুযোগের কারণেই ইউরোপের দেশগুলো ফুটবলে দ্রুত উন্নতি করছে, তা নয়।

প্রতিভা অন্বেষণ ও পরিচর্যায় অন্যান্য দেশগুলোর চেয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর ধারা ভিন্ন।

যেমন বেলজিয়ামের সবগুলো ক্লাব তাদের যুব অ্যাকাডেমিতে একই ধরণের কৌশল অনুসরণ করে যেন সব খেলোয়াড়ের মধ্যে কৌশলগত সচেতনতা তৈরী হয়।

অন্যদিকে ব্রাজিলের খেলোয়াড় বাছাই ও উন্নয়নের পদ্ধতি বেশ জটিল। কয়েকটি সফল ক্লাব ও দেশের ভেতরে থাকা ফুটবল প্রতিভা থেকে তারা খেলোয়াড় খুঁজে বের করে।

প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ
একই এলাকায় অনেকগুলো দেশের ফুটবল অবকাঠামো একই ধাঁচের হওয়ায় পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো একে অন্যের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে লাভবান হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের পাসিং স্টাইল আত্মস্থ করে স্পেনের দু’টি ইউরোপিয়ান শিরোপা ও ২০১০ এর বিশ্বকাপ জয় এর বড় উদাহরণ।

এছাড়া ইউরোপের বড় লিগগুলোয় লাতিন আমেরিকান ম্যানেজারের সংখ্যাও হাতে গোনা।

আর এবছর থেকে ইউরোপের মহাদেশীয় সেরা দল শুধু ইউরোপিয়ান ট্রফির মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে না। ইউরোপের ৫৫টি দেশ নিয়ে এবছরের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ‘লিগ অব নেশন্স’ নামের নতুন ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট শুরু হতে যাচ্ছে।

আর বয়সভিত্তিক পর্যায়ে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ইউরোপের আধিপত্য।

আগের তিনটি ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতেছে ফ্রান্স, সার্বিয়া আর ইংল্যান্ড।

বর্তমানে ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ শিরোপাও ইংল্যান্ডের দখলে।

তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো লাতিন আমেরিকান দলগুলোর জন্য ফুটবলের বিশ্ব আসরে বাজিমাত করা দিনদিন আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

সূত্র: বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement