২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

যেভাবে থামানো হলো মেসিদের বিদ্রোহ

প্র্যাকটিসে যাচ্ছে টিম আর্জেন্টিনা - ছবি : সংগ্রহ

ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ‘ভয়াবহ’ পরাজয়ের পর কোচ সাম্পাওলির বিরুদ্ধে একযোগে বিদ্রোহ করেছিলেন আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়রা। যদিও তারা তাতে সফল হননি। আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির কাছে মেসিদের দাবি ছিলো কোচকে অপসারণের। কিন্তু তাতে সায় দেননি সভাপতি ক্লাউদিয়ো তাপিয়া।

ক্রোয়েশিয়ার কাছে পরাজয়ের পর কোচের অপসারণ চেয়েছিলো মেসি-ম্যাচেরানোরা। ম্যাচের পরই লিওনেল মেসি, হাভিয়ের ম্যাচেরানোসহ সিনিয়র খেলোয়াড়রা জানিয়েছিলে, এই কোচের ওপর তাদের আর আস্থা নেই। তারা নতুন কোচ চান। যদিও তাতে সায় দেয়নি আর্জেন্টানই ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান ক্লাউদিয়ো তাপিয়া।

২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা অবশ্য নাইজেরিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচের পর কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। নাইজেরিয়ার কাছে আইসল্যান্ড পরাজিত হওয়ার পর মেসিদের সামনে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার। সে জন্য আগামী মঙ্গলবার শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারাতে হবে তাদের।
ক্রোয়েশিয়ার সাথে পরাজয়ের পরদিন শুক্রবার টিম হোটেলে কোচ সাম্পাওলি, এএফএ প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া তাপিয়া ও অন্যান্য কোচিং স্টাফদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন দলের ২৩ খেলোয়াড়। হাভিয়ের ম্যাচেরানোর নেতৃত্বে খেলোয়াড়রা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের দাবি জানায় বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে। সেই দাবি ছিলো- নাইজেরিয়া ম্যাচের আগে কোচ সাম্পালিকে সরিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া। তারা চেয়েছিলো ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে জয়সূচক গোল করে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেয়া জর্জে বুরুচাগাকে কোচ হিসেবে। বর্তমানে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বুরুচাগা।
১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ী দলের আরেক সদস্য ও বুরুচাগার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিকার্ডো গুইস্তি জানিয়েছেন, খেলোয়াড়রা এই দাবিতে অটল ছিলো। তারা কোন ছাড় দিতে চায়নি। তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়রা দলটিকে আবার গড়ে তুলতে চেয়েছে। তারা সাম্পাওলি ও তাপিয়াকে বলেছে, খেলোয়াড়রাই এখন দলের ভালো-মন্দ দেখভাল করবে। তারা নিজেদের হাতে তুলে নেবে দলের দায়িত্ব। সাম্পাওলি চাইলে দলের ডাগআউটে থাকতে পারেন; কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। তার করার মত কোন কাজ থাকবে না।’

ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে পরাজয়ের জন্য খেলোয়াড়রা কোচ সাম্পাওলির কৌশল পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। আগের ম্যাচের চার ডিফেন্ডারের ফরমেশন পাল্টে এদিন তিন ডিফেন্ডার খেলান সাম্পাওলি। খেলোয়াড়রা মনে করছেন, কোচের কোন কৌশলগত পরিকল্পনাই ছিলো না শক্তিশালী ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে। খেলোয়াড়দের দাবির পরও কোচ সাম্পাওলির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে রাজি হননি আর্জেন্টাইন ফুটবল প্রধান তাপিয়া। যদিও সাম্পাওলি অনেকের কাছে জানিয়েছে, বিশ্বকাপের মাঝপথে না হলেও টুর্নামেন্ট শেষে তাকে বরখাস্ত করা হবে এমনটা তিনি নিশ্চিত।

আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশন চায় সাম্পাওলি নিজ থেকেই চলে যাক এবং কোন বকেয়া বেতন ভাতার দাবি না করুক। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি বেতন ভাতার জন্যেই খেলোয়াড়দের দাবির মুখেও সাম্পাওলিকে সড়াতে চাননি ফেডারেশন সভাপতি?

এই রকম অচলাবস্থা চলতে থাকলে মঙ্গলবার মেসিরা কতটা প্রস্তুতি নিয়ে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামতে পারবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর মাঠের বাইরের গোলযোগের প্রভাব মাঠের খেলায় পড়াটাই স্বাভাবিক। তেমনটি হয়ে হয়তো প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হতে পারে দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের।
এদিকে ম্যাচের পর ড্রেসিং রুমে ম্যাচেরানোর সাথে ফরোয়ার্ড ক্রিশ্চিয়ান পাভোনের হাতাহাতি হয়েছে বলে কথিত আছে। ভুলের জন্য গোলরক্ষক কাবায়েরোকে দুষতে থাকেন ম্যাচেরানো। এর প্রতিবাদ করেন পাভোন, জবাবে পাভোনকে ‘শিশু’ বলে আখ্যায়িত করেন ম্যাচেরানো। এরপরই দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয় বলে জানা গেছে। তবে পরদিন সকালে টুইটারে এই দুই খেলোয়াড়ের একটি হাস্যজ্জ্বল ভিডিও আপলোড করে সব কিছুই স্বাভাবিক বলে দাবি করা হয়েছে। সূত্র : দ্য সান, লন্ডন

 

আরো পড়ুন : 

বিধ্বস্ত মেসিদের উদ্বুদ্ধ করতে ম্যারাডোনার কৌশল
বিশ্বকাপের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচে জিততেই হবে আর্জেন্টিনাকে। তার আগে মেসিদের সাথে কথা বলতে চান দিয়েগো ম্যারাডোনা। দেশের জার্সির গুরুত্ব বোঝাতে ‘ভোকাল টনিক’ দিতে চান জাতীয় দলের ফুটবলারদের। সেই জন্য তিনি দলের অনুশীলনে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছেন।

আর্জেন্টিনার টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনা বলেছেন, ‘যখনই আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে চাপিয়েছি, নিজের সেরাটা নিংড়ে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। সিমোনে, রেডন্ডো, রুগেরি, ক্যানিজিয়া, ফিলোল, লুকিউ এবং গ্যালেগোরাও ঠিক তাই করেছে।’

মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য সেই স্বর্ণালি অতীতকেই তুলে ধরতে চান ম্যারাডোনা। সেজন্যই চান, মেসিদের সাথে কথা বলার অনুমতি দেয়া হোক তাকে।

গ্রুপের প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে অস্ট্রেলিয়া। পেনাল্টি মিস করেছেন মেসি। দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে তারা ০-৩ গোলে হার মেনেছে। এরপরই ম্যাচের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কোচ সাম্পাওলির বিরুদ্ধে দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ফুটবলারের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে।

এমনও শোনা গেছে, নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে কোচের নির্দেশ না মেনে নিজেদের মত করেই খেলতে চান মেসিরা। বিদ্রোহ সামাল দিতে এবং দেশের সম্মানের কথা স্মরণ করাতে মেসিদের সাথে কথা বলতে চান ম্যারাডোনা, যাতে আগামী ২৬ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনা তাদের সেরাটা মেলে ধরে পরবর্তী রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। ম্যারাডোনার এই অনুরোধ কোচ সাম্পাওলি রাখবেন কি না, তা সময়ই বলে দিবে।

ইট মেরে পাটকেল খেলেন ম্যারাডোনা

স্পেন ও রিয়াল মাদ্রিদ তারকা সার্জিও রামোসের দৃষ্টিতে আর্জেন্টিনার কিংবদন্তী ডিয়াগো ম্যারাডোনার চেয়ে ঢেড় গুণ এগিয়ে লিওনেল মেসি। তিনি বলেন, ‘আর্জেন্টিনার মানুষ বেশ ভালোই জানে বিশ্বসেরা ফুটবলারের (মেসি) চেয়ে বেশ পিছিয়ে ম্যারাডোনা। আমার কাছে সেরা আর্জেন্টাইন ফুটবলার একজনই। তিনি হলেন, লিওনেল মেসি।’

সম্প্রতি রাশিয়া বিশ্বকাপে নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে রামোসকে নিয়ে মন্তব্য করেন ম্যারাডোনা। তিনি বলেন, ‘রামোসের চেয়ে দিয়েগো গোডিন অনেক ভাল ডিফেন্ডার।’

ম্যারাডোনার এমন মন্তব্য কানে পৌঁছেছে রামোসের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ম্যারাডোনাকে নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন রামোস।

গোডিন উরুগুয়ের ডিফেন্ডার। ক্লাব ফুটবলে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে খেলছেন তিনি। উরুগুয়ের হয়ে ১১৯ ম্যাচে ৮ গোল ও অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে ২৪৭ ম্যাচে ১৪ গোল করেছেন ৩২ বছর বয়সী গোডিন। ২০১০ সালে ভিয়ারিয়াল ছেড়ে অ্যাথলেটিকোতে যোগ দেন তিনি। এরপর থেকে অ্যাথলেটিকোতেই আছেন গোডিন। রাশিয়া বিশ্বকাপেও উরুগুয়ের ডিফেন্স সামলানোর দায়িত্ব তার কাঁধে রয়েছে।

গোডিনের চেয়ে অভিজ্ঞতায় বেশ এগিয়ে রামোস। স্পেনের হয়ে ১৫৪ ম্যাচে ১৩ গোল ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৩৯১ ম্যাচে ৫৩ গোল করেছেন ৩২ বছর বয়সী রামোস। ২০০৫ সাল থেকে রিয়ালে খেলছেন তিনি।

মেসি কেন এগিয়ে সেটিও স্পষ্ট করেছেন রামোস। তিনি বলেন, ‘মেসির যে রেকর্ড আছে ম্যারাডোনার তা নেই। মেসি যা করে দেখিয়েছে ম্যারাডোনা তা করতে পারেনি। মেসি দুরন্ত খেলোয়াড়। তবে এটি ঠিক, জাতীয় দলের হয়ে ম্যারাডোনার চেয়ে ভালো কিছু করতে পারেনি মেসি। কারণ জাতীয় দলে তাকে যোগ্য সহায়তা কেউই দিতে পারে না। যা ক্লাব ফুটবলে মেসি পেয়ে থাকেন।’

বিশ্বকাপের ‘বি’ গ্রুপে দুটি করে ম্যাচ শেষে সমান চার পয়েন্ট স্পেন ও পর্তুগালের। তিন পয়েন্ট ইরানের। দুই ম্যাচ হেরে ইতোমধ্যে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে মরক্কো। আগামীকাল মরক্কোর মুখোমুখি হবে স্পেন। ওই ম্যাচে জিতলে বা ড্র করলেই শেষ ষোলোর টিকিট কাটবে স্পেন। আর যদি হেরে যায় এবং অন্য ম্যাচে যদি পর্তুগাল-ইরান ড্র করে তবে গোল গড়ের হিসাব-নিকাশে পড়বে স্প্যানিশরা।

তবে এসব নিয়ে না ভেবে শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া স্পেন কিছুই ভাবছে না বলে জানান রামোস। তিনি বলেন, ‘শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া আমরা অন্য কিছু ভাবছি না বা ভাবতে চাই না। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে খেলতে চাই।’


আরো সংবাদ



premium cement