২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সালাহকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিলো চেচনিয়া

ফুটবল
মোহাম্মাদ সালাহ - ছবি: সংগৃহীত

মিসর ও লিভারপুলের তারকা ফুটবলার মোহাম্মাদ সালাহকে চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে।

বিশ্বকাপে অনুশীলনের জন্য চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের রাজধানী গ্রোজনিতে বেইস ক্যাম্প করেছিল মিসর। এর মধ্যেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে মিসরের। সালাহদের তাই শুক্রবার বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছে চেচনিয়ার নেতা রমজান কাদিরভ। এরপরই সালাহকে নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কাদিরভ।

কাদিরভ জানিয়েছেন, ‘সালাহ এখন চেচনিয়ার একজন সম্মানিত নাগরিক। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। আজ (শুক্রবার) রাতে আমি মিসর ও লিভারপুলের তারকা মোহামেদ সালাহকে এই সম্মান জানিয়ে ফরমান জারি করছি।’

আল-জাজিরা জানিয়েছে, নৈশভোজে এ ঘোষণার পর সালাহকে চেচনিয়ার পতাকাযুক্ত একটি মর্যাদাপূর্ণ ব্যাজও পরিয়ে দিয়েছেন কাদিরভ। সে সঙ্গে একটি রুপার স্মারক ও চেচনিয়ার ফুটবল দল এফসি আখমত গ্রোজনির একটি জার্সিও দেয়া হয়েছে। কাদিরভের পিতার স্মরণেই এ ক্লাবের নামকরণ করা হয়েছিল। মিসর দলের মুখপাত্র এ ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।

রাশিয়া থেকে আলাদা হতে চাওয়া চেচনিয়া নব্বইয়ের দশকে দুবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। ২০০৪ সালে সেই চেচনিয়ার দায়িত্ব নেয়ার পর অতিরক্ষণাত্মক নিয়মকানুন জারি করেন কাদিরভ।

কাদিরভকে এর আগে সালাহ নিজে মিসরের অনুশীলন ক্যাম্প ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। তখন সমালোচনা হয়েছিল, একজন ‘বিতর্কিত’ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ছবি তুলে সালাহ নিজেকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিলেন কি না। এখন তো ঘটে গেল আরো বড় ঘটনা। দেখা যাক, এ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলারদের একজন সালাহর এই ঘটনা নিয়ে কী হয়!

আরো পড়ুন :
মুসলমানদের গর্ব মোহাম্মদ সালাহ
রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে, ২০ জুন ২০১৮
মোহাম্মদ সালাহ নাকি মো সালাহ এ নিয়ে তর্ক শুরু হয়ে গেল সেন্ট পিটার্স বার্গের মেট্রো রেল এ।। শেষ পর্যন্ত সমাধান, মোহাম্মদ নামের কোনো বিকৃতি নয়। মোহাম্মদ সালাহই বলতে হবে। মো সালাহ নয়। উল্লেখ্য সোমালিয়ান বংশোদ্ভ’ত ব্রিটিশ অ্যাথলেট মোহাম্মদ ফারাহ কে এভাবেই মো ফারাহ বলা হয়।

এখন সালাহকে নিয়ে একই সূর। রশিয়ার সাথে ম্যাচের আগে তীব্র বাতাস শুরু হয়ে গেল বাল্টিক সাগরের তীরে। এতে আরো উত্তল বাল্টক সাগর। কিন্তু সাগরের গর্জনও চাপা পড়ে যাচ্ছিল মিসরীয় সমর্থকদের সালাহ সালাহ চিৎকারের কাছে। তাদের প্রায় সবারই গায়ে সালাহ লেখা মিসর দলের ১০ নাম্বার জার্সী। অবশ্য একটু পড়ে তুমুল বৃস্টি শুরু হয়ে গেলে থেমে যায় সব আনন্দ উল্লাস।

আর ম্যাচ শেষে আরো চুপ মিসরীয়রা। খেলা শুরুর আগে নিরিবিলিতেই সেন্ট পিটার্সবার্গের মাঠে প্রবেশ করছিল রাশিয়ানরা। ম্যাচ শেষে আর তাদের থামায় কে। অন্য দিকে হেরে বিদায় নিলেও আফ্রিকান আরব ভাষাভাষী দেশটির নাগরেকদের মুখে সালাহ’র প্রশংসা। নিজের প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়েছেন তিনি। তাদের একটাই কথা ,মোহাম্মদ সালাহ শুধু মিসরেরই গর্ব নয়। পুরো আফ্রিকা এবং মুসিলম বিশ্বের গর্ব।

কায়রো থেকে আসা আমরের বক্তব্য, ‘সালাহ এখন বেস্ট ফুটবলার । সে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোল দাতা। আফ্রিকারও সেরা। সে ইসলাম এবং মুসলসানদের ইমেজ বাড়িয়ে দিয়েছে।তার কারনে অন্য ধর্মের লোকদের ধারনা পাল্টে গেছে মুসলমান এবং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে।’ হোসেমের মতে, আমাদের পুরো চ্যারিটির সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে সালাহ। তিনি জানেন কিভাবে অন্যকে মূল্যায়ন করতে হয়। সালাহ এখন সবার জন্য উদহারন।

আইমানের বক্তব্য, আমাদের মিশর দলের ৫০ শতাংশ শক্তিই মোহাম্মদ সালাহ। রামি অভিমত, সালাহ’র কারনে, অন্যরা নতুন করেন ভাবতে শুরু করেছে মুসলমানদের নিয়ে। মুসলমানরা সন্ত্রাসী, অন্য ধর্মের লোকদের গলা কাটে এই ইমেজ দূর করছেন সালাহ। একই সূর আমিনেরও।

তবে সালাহকে মুসলমানের গর্ব বলতে নারাজ আধুনিক পোশাক পরা মিসরীয় নারী ইয়াসমিনের। নিজেকে সেকুলার দাবী করা এই মহিলার মতে, মিসরে শুধু তো মুসলমানরই বাস করে না, অন্য ধর্মের লোকও আছে। তাই সালাহ কেন শুধু মুসলমানদের গর্ব হবেন। সবারই অহংকার।

১৯৯০ সালের পর এবার ফের বিশ্বকাপে খেলছে উত্তর আফ্রিকার দেশ মিসর। খেলছে তিউনিশিয়া, মরক্কো, সৌদি আরব ,ইরান সেনেগালের মতো মুসলিম দেশ । কিন্তু কোনো দেশ এতোটা আলোচনায় আসেনি যতোটা এসেছে মিসর। তা সালাহ,র কারনে। কিন্তু দলে একমাত্র সালাহই তারকা। তার ধারে কাছে অন্যরা নেই। আর ডিফেন্স তো জঘন্য। যা মিসরকে বাধ্য করেছে টানা দুই ম্যাচে হেরে বিদায় নিতে। ফলে আগামী ২৫ জুনই ইতি ঘটবে এবারের বিশ্বকাপে সালাহ পর্ব।

আরো পড়ুন :
যেভাবে সালাহ আজ বিশ্ব তারকা

সিএএফ ০২ জুন ২০১৮
মোহাম্মাদ সালাহ বিশ্বকাপ খেলবেন কিনা, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। যদিও সালাহ নিজে এবং মিসর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আশাবাদী তার রাশিয়ায় যাওয়া নিয়ে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে কাঁধে পাওয়া চোটই তাকে ২৮ বছর পর দেশটির বিশ্বকাপে খেলা অনিশ্চিত করে দিয়েছে। বিশ্বকাপে খেলতে প্রথমে তাকে ফিট হতে হবে। এরপর ফর্মে থাকতে হবে। ইনজুরি কাটিয়ে বিপক্ষ দলের কড়া মার্কিং এড়িয়ে তাকে বিশ্বকাপে ভালো করার আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।

মধ্য মিসরের নীল বদ্বীপ অঞ্চলের ন্যাগরিগ গ্রামের সন্তান মোহাম্মদ সালাহ। এখন এই গ্রামের সব ছেলেদেরই লক্ষ্য একটাই। তারা সালাহ’র মতো ফুটবল তারকা হতে চায়। এই গ্রামে ফুটবল খেলেই সালাহ এখন বিশ্বখ্যাত ফুটবল তারকা। মিসরের গন্ডী পেরিয়ে এখন পুরো আফ্রিকারই মডেল ফুটবলার তিনি। ন্যাগরিগ গ্রামও এখন এ কারনে সবার আলোচনায়।

অবশ্য অনেক কস্ট করেই আজকের এই স্থানে আসতে হয়েছে সালাহকে। দলের সাথে অনুশীলনে যেতে দিনে ১০ ঘন্টা বাসে বসেই কাটাতে হয়েছে তাকে। যাকে বলা হতো নিদারুন কস্টের ভ্রমন। জানান ন্যাগরিক গ্রামের মেয়র মাহের শাথিয়া।

১৪ বছর বয়সে সালাহ যোগ দেন রাজধানী কায়রোর এক আরব ঠিাকাদারের ক্লাবে। তখন ন্যাগরিগ গ্রাম থেকে কায়রো যেতে আসতে প্রতিদিন ১০ ঘন্টা বাসে বাসেই কাটাতে হতো সালাহকে। বাসউন শহরের গ্রাম ন্যাগরিগ। এই শহরের ইয়ুথ সেন্টারে ফুটবলে হাতে খড়ি তার। ইয়ুথ সেন্টারটি এখন সালাহ’র নামে নামকরন করা হয়েছে। মেয়র শাথিয়ার দেয়া তথ্য,ন্যাগরিগ থেকে বাসউন। এরপর তানতা সিটি। যা আল ঘারবিয়া প্রদেশের রাজধানী।

ওখান থেকে আরেক বাসে চড়ে কায়রোর উপকন্ঠে পৌঁছা। শেষে আরেক বাসে করে নসর সিটিতে যেতে হতো সালাহকে। যার একটু দূরেই আরব ঠিকাদারের ক্লাব। ন্যাগরিগ ক্লাবের জুনিয়র দলের কোচ ঘামরি আবদেল হামেদ এল সাদনি জানান , ছোট বেলা থেকেই প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছিলেন সালাহ। বর্তমান অবস্থায় তিনি পৌঁছতে পেরেছেন শুধু প্রতিভার জোরে নয়। চেষ্টা এবং একাগ্রতাও এর নেপথ্য।

সালাহ প্রথমে খেলতেন বাসউন শহর দলে। এরপর যোগ দেন তানতা সিটি টিমে। পরে যান আবর ঠিকাদারের ক্লাবে। অনূর্ধ্ব-১৫ বছর বয়সে এই ক্লাবে যোগ দিয়ে ছিলেন পাঁচ বছর। এরপর দেশের সীমা ছাড়িয়ে পাড়ি জমান সুইজারর‌্যান্ডের ক্লাব এফসি বাসেলে। বাসেল ছেড়ে চেলসিতে গেলেও ব্যর্থ হয়ে ফের বাসেলে আসা। অবশ্য পরে ইতালরি ক্লাব রোমাতে যোগ দেয়ার পর লিভারপুল অফিসিয়ালদের চোখে পড়েন সালাহ। তখন ৬০.৮ মিলিয়ন ডলারে রোমা ছেড়ে লিভারপুলে যোগ দেন এই মিশরীয় স্ট্রাইকার। এবার লিভারপুলের হয়ে ৩৮ ম্যাচে ৩২ গোল করে তিনি জয় গোল্ডেন বুট।

ক্রীড়া পরিবারেই জন্ম সালাহ’র। তার বাবা এবং দুই চাচা ন্যাগরিগ যুব দলে খেলেছেন। তার বাবা মা দুই জনই সরকারী চাকুরী করতেন। বাবা একই সাথে বেলী ফুলের ব্যবসায়ীও । তাদের অঞ্চল সুগন্ধী তৈরীর উপাদান বেলী ফুল উৎপাদন ও রপ্তানীর জন্য বিখ্যাত। অবশ্য তার বাবা এবং গ্রাম বাসীদের কেউই মিডিয়ার সাথে কথা বলেননি সালাহ প্রসঙ্গে।

২০ বছর বয়সে বিয়ে করা সালাহ এখন এক কন্যা সন্তানের জনক। মেয়ের নাম রেখেছেন মক্কা। সৌদি আরবের মুসলমানদের পবিত্র শহরের নামে। ছুটি পেলেই তিনি চলে আসেন নিজ গ্রামে। জানান মেয়র। সালাহ’র অনুদানে বাসউন শহরের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট স্থাপিত হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement