২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্রুস-রয়েসের বুদ্ধিমত্তায় দুর্ভাগ্যকে জয় করল জার্মানি

গোল...... - ছবি : সংগ্রহ

দুর্ভাগ্য যেন পেয়ে বসেছিলো এদিন জার্মানদের। কিছুতেই পিছু ছাড়ছিলো না সেটি। কিন্তু ম্যাচের একেবারে অন্তিম মূহুর্তে টসি ক্রুস আর মার্কো রয়েসের বুদ্ধিমত্ত্বায় সেই জট খুলল তারা। জয় পেল সুইডেনের বিপক্ষে।
দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময় দেয়া হয়েছে পাঁচ মিনিট। সাড়ে চার মিনিট শেষ হয়েছে। বামপ্রান্তে সুইডিশ ডি-বক্সের ফুট দুয়েক বাইরে ফ্রি-কিক পেল জার্মানি। ১-১ গোলে সমতা চলছে। শেষ কিক এটিই। যে কোন মূহুর্তে বাজবে শেষ বাঁশি। নিজেদের বিশ্বকাপ স্বপ্নের মৃত্যু দেখে ফেলছেন অনেক জার্মান সমর্থক। কেউ কেউ চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কারো চোখে অশ্রু।

কিক নিতে এগিয়ে এলেন দুই জার্মান ফরোয়ার্ড টনি ক্রুস ও মার্কো রয়েস। সামনে তিনজন সুইডিশ ডিফেন্ডারের প্রাচীর। প্রথমে ক্রুস আলতো ছুয়ে দিলেন বল। স্পট থেকে গজখানেক দূরে রয়েস পা দিয়ে থামালেন, সাথে সাথে ছুটে গিয়ে পোস্টে কিক নিলেন আবার টনি ক্রুস। সবার মাথার ওপর দিয়ে বাঁক হয়ে বল ঢুকে গেল সুইডেনের পোস্টে। গোল......।

এরই সাথে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো গতবারের চ্যাম্পিয়নদের। এই ম্যাচ ড্র হলে তাদের বিশ্বকাপ ভাগ্য সুতোয় ঝুলে যেত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জার্মানি জয় করতে পেরেছে এই চ্যালেঞ্জ। ২-১ গোলে সুইডেনকে পরাজিত করেছে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে। ফলে দুই ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে তাদের বিশ্বকাপে টিকে থাকার আশা বেঁচে রইলো। শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে জিতলে সুযোগ থাকবে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার।

ম্যাচের শুরু থেকেই এদিন টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রথমার্ধ অবশ্য জার্মান সমর্থকদের জন্য কেটেছে শঙ্কায়। পুরো প্রথমার্ধ জুড়ে সমানতালে লড়াই করেছে সুইডেন। আর দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে জার্মানি দারুণ খেললেও ভাগ্য তাদের বারবার বঞ্চিত করেছে। অন্তত পাঁচটি নিশ্চিত গোল তাদের হাতছাড়া হয়েছে ভাগ্যদোষে। কখনো সুইডিশ গোলরক্ষকের গায়ে লেগে, কখনো ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে বল

ফিরে এসেছে। সাইড বারে ও ক্রস বারে লেগেছে কয়েকটি শট। অবশ্য সুইডিশ গোলকিপারের কিছু দুর্দান্ত সেভও তাদের ম্যাচে টিকিয়ে রেখছিলো প্রায় শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত। আক্রমণের পর আক্রমণ করেও প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার মতো জয় বঞ্চিত হতে হবে কিনা সেই চিন্তায় তখন ঘিরে ধরেছে সবাইকে। কিন্তু আরেক ফেবারিট ব্রাজিলের মতোই দুর্দান্তভাবে গোল আদায় করে নিলো গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।

ম্যাচের একেবারে অন্তিম মূহুর্তের এই গোল যেন মৃতপ্রায় রোগীকে শেষ মূহুর্তে অক্সিজেন দেয়ার মতোই।
প্রথমার্ধে বল দখলে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও বারবার কাউন্টার অ্যাটাক করে সুইডেন কাঁপিয়ে দিয়েছে জার্মান শিবির। ৩২ মিনিটে সফলতা পায় সুইডেন। গোল করেন সুইডিশ ফরোয়ার্ড অলা তইভোনেন। মাঝ মাঠ থেকে বলের দখল নিয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে আচমকা আক্রমণে যায় সুইডিশরা। ডানপ্রান্তের কর্নার ফ্ল্যাগের কাছ থেকে বক্সের মধ্যে ক্রসে বল ফেলেন ভিক্টর ক্ল্যাসন। দুই পাশে থাকা দুই ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে বুক দিয়ে বল থামান তইভোনেন। বল উচুতে উঠে এগিয়ে যায় গোল পোস্টের দিকে। গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার বল ধরতে এগিয়ে আসতেই উড়ন্ত বলে ভলি করে জালে জড়ান।

গোল খেয়ে আক্রমণের ধার বেড়ে যায় জার্মানির। ৩৯ মিনিটে দুর্ভাগ্য ফিরিয়ে দেয় তাদের। বামপ্রান্তে ২৫ মিটার দূর থেকে গুনদোয়ানের বুলেট গতির শট গোলকিপারের বাহুতে লেগে ফিরে যায়। এরপর থমাস মুলার ও এক সুইডিশ ডিফেন্ডারের লড়াইয়ে ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে গোলকিপারের হাতে নিচ দিয়ে বল গড়িয়ে চলে যায় সাইবার ঘেঁষে। ৪৪ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে আরেকট গোল প্রায় করেই বসেছিলো সুইডেন। বক্সের মধ্যে বল নিয়ে ঢুকেও শট নিতে পারেননি ভিক্টর ক্ল্যাসন। অতিরিক্ত সময়ে (৪৫+২) আবার গোলের সুযোগ পায় ‍সুইডেন। লাসনের ফ্রি-কিক থেকে বার্গের হেড কোন মতে ফিরিয়ে রক্ষা করেন জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়ার। এবার অন্তত ভাগ্য ছাড়া আর কেউ রক্ষা করেনি জার্মানিকে।
কিন্তু প্রথমার্ধে ‍সমানতালে লড়াই করা সুইডেন দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণাত্মক খেলতে শুরু করে। আর এই সুযোগে তাদের চেপে ধরে জার্মানি। কিন্তু একের পর এক আক্রমণ করে দেখা মিলছে না সেই কাঙ্ক্ষিত গোলের। ৬১ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে জোশুয়া কিমিখের ক্রসে গোলের একেবারে সমানে পা ছোয়াতে ব্যর্থ হন স্ট্রাইকার রয়েস। ৭২ মিনিটে রয়েসের ক্রস এক সুইডিশ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে নিজেদের গোলে ঢোকার পথে গোল কিপারের পায়ে লেগে ফিরে আসে। নইলে তখনই আত্মঘাতি গোলে এগিয়ে যেতে পারতো জার্মানি।

৮৮ মিনিটে সুইডিশ গোলকিপারের দুর্দান্ত সেভ তাদের বাঁচিয়ে দেয়। বাম প্রান্ত দিয়ে টনি ক্রুসের ক্রসে গোমেজের হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে ঠেলে দেন। অতিরিক্ত সময়ে (৯০+২) গুনদোগানের পাসে বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ইউলিয়ান ব্রান্টের শট দুর্দান্ত প্রচেষ্টা ঝাপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন সুইডিশ গোলরক্ষক অলসেন। তবে শেষ পর্যন্ত টনি ক্রুস আর রয়েসের দারুণ বুদ্ধিমত্তায় দুর্ভাগ্যকে জয় করতে পেরেছে জার্মানি।

ফ্রি-কিক নিতে তার মূলত সামনে দাড়ানো সুইডিশ খেলোয়াড়দের প্রাচীর এড়িয়ে কিক নিতেই অমন কৌশল নিয়েছেন। স্পট থেকে গজখানেক দূরে রয়েসের পায়ে বল দিয়ে কিক নেয়ার কারণে সবাইকে এড়িয়ে বল জালে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। আগামী ম্যাচ জার্মান খেলবে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। আর সুইডেন খেলছে মেক্সিকোর বিপক্ষে। মেক্সিকোর ছয় পয়েন্ট, আর জার্মানি ও সুইডেনের প্রত্যেকের পয়েন্ট ৩ করে।


আরো সংবাদ



premium cement