নাইজেরিয়ার জয়ে আর্জেন্টিনার পরিস্থিতি কঠন হলো না সহজ?
- ক্রীড়া প্রতিবেদক
- ২৩ জুন ২০১৮, ০৭:৫৪
চলতি বিশ্বকাপে গ্রুপ-‘সি’ থেকে ফেবারিট ছিল আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া। অপর দুই দল আইসল্যান্ড ও নাইজেরিয়া আলোচনায় আসেনি। অথচ এই আইসল্যান্ডে হোচট খেল আর্জেন্টিনা। গতকাল শুক্রবার আবার আহমেদ মুসার জোড়া গোলে আইসল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারাল নাইজেরিয়া। তাতেই জমে উঠল এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় পর্বে উঠার সমীকরণ। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে প্রথম দল হিসেবে শেষ ১৬তে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। দুই ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার পয়েন্ট ৬, নাইজেরিয়ার ৩, আইসল্যান্ড ও আর্জেন্টিনার ১ পয়েন্ট। শেষ তিন দলেরই সুযোগ থাকছে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠার।
আইসল্যান্ডের সাথে প্রথম ম্যাচ ড্র এবং পরে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে আর্জেন্টিনার শেষ ১৬তে যাওয়া হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে গতকাল নাইজেরিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচে চোখ ছিল সবার। নাইজেরিয়া আইসল্যান্ডকে হারিয়ে তিন পয়েন্ট নিয়ে উঠে এসেছে আলোচনায়। আগামী ম্যাচে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে নাইজেরিয়ার। সমীকরণের এই ম্যাচে নাইজেরিয়া ন্যূনতম ড্র করতে পারলেই কপাল পুড়বে আর্জেন্টিনার। জয়ী হলেও তাকিয়ে থাকতে হবে আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের দিকে।
গতকাল প্রথমার্ধ থেকেই ভালো খেলছিল নাইজেরিয়া। বলের দখলে তারাই এগিয়ে ছিল নবাগত আইসল্যান্ডের চেয়ে। ভালো খেলে যোগ্যতার ভিত্তিতেই জয় তুলে নিয়েছে তারা। প্রথমার্ধ আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা হলেও ডি সীমানায় গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলায় গোলবঞ্চিত ছিল দল দু’টি। তবে অপেক্ষাকৃত বেশি আক্রমণে গিয়েছে আফ্রিকার ঈগলরা। আইসল্যান্ডের তিন শটের দু’টিই ছিল অন টার্গেটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সুযোগ এসেছিল প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মিনিটে। দারুণ এক ফ্রি-কিক নিয়েছিলেন গিলফি সিগুর্ডসন। কিন্তু বক্সের ভেতর বলে ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারেননি আলফ্রেড ফিনবগাসন।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হওয়ার ৪ মিনিটের মাথায় নাইজেরিয়াকে বহু আকাক্সিত গোলটি উপহার দেন ফরোয়ার্ড আহমেদ মুসা। সতীর্থ মিডফিল্ডার ভিক্টও মোজেসের দেয়া ক্রস দতার সাথে রিসিভ করেন মুসা।
ড্রপ কিকে তিনি তা জড়িয়ে দেন আইসল্যান্ডের জালে (১-০)। ভলগোগ্রাদে মুসার প্রথম গোলের মতো দ্বিতীয়টিও ছিল অসাধারণ। ৭৫ মিনিটে বল নিয়ে দারুণ গতিতে এক আইসল্যান্ডের খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বল নিয়ে ঢুকে যান ডিবক্সে। সেখানে ডিফেন্ডারসহ গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে দেখেশোনে বল পাঠান জালে (২-০)। ৮০ মিনিটে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তির সহায়তায় পেনাল্টি পেয়েছিল আইসল্যান্ড। দলটির ফিনবগাসনকে বক্সের ভেতর ফাউল করেছিলেন নাইজেরিয়ার এবুচি। রেফারি যদিও প্রথমে পেনাল্টি দেননি। পরে ভিডিও দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। কিন্তু শট মিস করেন সিগুর্ডসন। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হলে তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে নাইজেরিয়া।
আরে পড়ুন :
‘উপহাস’ মেসিদের
স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ডে অশ্রুসিক্ত দিয়েগো ম্যারাডোনা। যন্ত্রণায় ফুঁসছে আর্জেন্টিনা। বিক্ষুব্ধ ভক্ত হৃদয়ের বাস্তব প্রতিচ্ছবি দেশটির গণমাধ্যম। উপহাসের পাত্র মেসি অ্যান্ড কোং। সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অধিনায়কের পারফরম্যান্স ও কোচ সামপাওলির ভূমিকা। বৃহস্পতিবার ফিফার ২১তম বিশ্বকাপের ডি গ্রুপে ক্রোয়েশিয়ার কাছে বিধ্বস্ত টিম আর্জেন্টিনার পারফরম্যান্সের সমালোচনা প্রধান শিরোনাম স্থানীয় গণমাধ্যমের।
লা ন্যাসিওনালের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে কোচ জর্জ সামপাওলি। তাদের দাবি, বর্তমান কোচের আত্মবিশ্বাসবিহীন দলে পরিণত হয়েছে আর্জেন্টিনা। ফুটবলারদের মধ্যে জয়ের আকাক্সা একদমই অনুপস্থিতি। মাঠের নড়াচড়ায় মনে হয় রোগাক্রান্ত একটি দল। ক্রোনিকা টিভির একজন উপস্থাপক প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ইস মেসি বেটার অন ভিডিও গেমস দ্যান ইন রিয়েল লাইফ’।
রাশান বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে আর্জেন্টিনার ছন্নছড়া নৈপুণ্যে চরম ক্ষুব্ধ দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মিডফিল্ডার অসভালদো অরদিলেস। বর্তমান দলটিকে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম বলতেও দ্বিধা করেননি। কোচ সামপাওলিকে অহঙ্কারী ও অজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি দেন আর্জেন্টাইন জার্সিতে দুই বিশ্বকাপ জেতা কিংবদন্তি। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বের সেরা ফুটবলার হাতে পেরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো দল উপহার দিতে ব্যর্থ সামপাওলি। তার প্ল্যান ‘এ’ মেসিকে বল পাস দেয়া। এরপর অপেক্ষা ম্যাজিকের। তবে প্ল্যান এ ব্যর্থ হলে কিছুই ঘটবে না। টানা দুই ম্যাচে ওই বাস্তবতা দেখলাম।’’ বার্সেলোনা সেনসেশন মেসির সমালোচনাও এড়িয়ে গেছেন অরদিলিস। তার বিশ্বাস, মেসির জন্মভূমি হিসেবে গর্বিতবোধ করার প্রয়োজন রয়েছে আর্জেন্টিনার।
১৯৭৪ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে জয়শূন্য আর্জেন্টিনা। নেশনি স্টেডিয়ামে ক্রোয়েটদের কাছে ৩-০ গোলের হার নকআউটের আগেই বিদায়ের লজ্জা হজমের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে দিয়েগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। তবে সব আশা শেষ হয়নি আর্জেন্টাইনদের দ্বিতীয় রাউন্ডে উন্নীতের। কিন্তু সমীকরণ বড়ই জটিল। শেষ ম্যাচে জিততেই হবে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। এরপর প্রার্থনা ও অপেক্ষা গ্রুপের অন্য খেলার ফলাফল অনুকূলে থাকার। বিষয়টির যথার্থ উপলব্ধি থেকেই কারিন হেডলাইন করেছে, ‘এখন নাইজেরিয়া হারাও ও প্রার্থনা করো’। আর্জেন্টিনার অন্যান্য গণমাধ্যমগুলো বিন্দুমাত্র সান্ত্বনার ধার ধারেনি মেসিদের জন্য অবমাননাকর হেডলাইন বেছে নেয়ায়। স্পোর্টস দৈনিক ওলে ক্রোয়েটদের কাছে হারের প্রতিবেদনের শিরোনাম হিসেবে বেছে নিয়েছে ‘ক্রোধের রাত্রি’।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা