২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিদেশী ফুটবলারের মাধ্যমে গর্ভবতী হলে পুরস্কার!

ফুটবল
রাশিয়ার একটি সামাজিক মাধ্যমে এই বিজ্ঞাপণটি দেয়া হয়েছিল যেখানে অন্তস্বত্তা হলে ফ্রি বার্গার ও অর্থ পুরষ্কার দেয়ার কথা বলা হয় - ছবি : বিবিসি

ফাস্ট ফুড চেইন বার্গার কিংয়ের রাশিয়ান বিভাগ রুশ নারীদের পুরষ্কার দেয়ার একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবার সেটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে।

বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়েছিল কোনো রাশিয়ান নারী বিশ্বকাপে খেলা কোনো খেলোয়াড়ের মাধ্যমে গর্ভবতী হতে পারলে তাকে ৩০ লাখ রুবল (৩৬ হাজার পাউন্ড; ৪৭ হাজার ডলার) ও সারাজীবনের জন্য বিনামূল্যে হুপার বার্গার দেয়া হবে।

বিজ্ঞাপনটিতে বলা হয়, ‘যে নারী ফুটবলারের জিন শরীরে বহন করবে, সে রাশিয়ান দলের ভবিষ্যত প্রজন্মের সাফল্যের প্রবর্তক হবে।’

এ বিজ্ঞাপন দেয়ার পর রাশিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়। বার্গার কিং বাধ্য হয় বিজ্ঞাপণটি সরিয়ে নিতে।

সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে একটি নারীবাদী সংস্থা মন্তব্য করে যে, ‘আমাদের সমাজে নারীদের অবস্থানের প্রতিফলন এই বিজ্ঞাপন।’

বিজ্ঞাপন ও মিডিয়ায় রুশ নারীদের যৌন শিকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

ক্রেমলিন সমর্থিত গণমাধ্যমের লেখায় রুশ নারীরা কিভাবে ‘বিদেশীদের প্রলোভন’ দেখাতে পারেন তা বিশেষভাবে চিত্রায়ন করা হয়।

রুশ নারীরা কীভাবে বিদেশীদের প্রলুব্ধ করতে পারেন তা নিয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণও করা হয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ।

রাশিয়ার লিঙ্গ বৈষম্য
এই ধারার আলোচনা কিন্তু কমিউনিস্ট পরবর্তী রাশিয়ায় খুব একটা নতুন নয়। নারীবাদী মতবাদ রাশিয়ায় খুব একটা শোন যায় না।

লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে রাশিয়ান টিভির অনুষ্ঠানগুলো গতানুগতিকের বাইরে খুব একটা সরব নয়।

এমনকি কোনো অনুষ্ঠান যদি নারীবাদ বিষয়ে একটু সোচ্চারও হয়, সেটিকে রাশিয়ান ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র বলে সমালোচনা করা হয়।

এতকিছুর পরও এসবের বিরুদ্ধে রুশ নারীদের পক্ষ থেকে খুব একটা প্রতিবাদ দেখা যায় না।

নারী অধিকার কর্মী অ্যালিওনা পোপোভা বিবিসিকে বলেন যে রুশ নারীদের মধ্যে দৃঢ়তার অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পুরুষরা যখন নারীকে দেহসর্বস্ব উপাধি দেয়, যৌন হয়রানির পক্ষে অজুহাত খোঁজে আর পারিবারিক সহিংসতার জন্যও নারীকেই দোষারোপ করে, তখন নারীরাও বিশ্বাস করা শুরু করে যে সেগুলোই আসলে সত্যি এবং এটিই নিয়ম।’

মিজ পোপোভা সাম্প্রতিক এক যৌন হয়রানির ঘটনার উদাহরণ দেন, যেটিতে রুশ সাংসদ লিওনিড স্লাটস্কি জড়িত ছিলেন।

মি. স্লাটস্কির নামে একাধিক সাংবাদিক যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। তার বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরী হলেও সংসদের নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট কমিশনের তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে তিনি স্ব-পদে বহাল থাকেন।

অ্যালিওনা পোপোভা অভিযোগ করেন যে রাশিয়ার আইন ‘রুশ নারীদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখার’ ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে বিদেশীদের।

যৌন হয়রানি সংক্রান্ত কোনো আইন এই মুহূর্তে রাশিয়ায় কার্যকর নেই। তবে স্লাটস্কি কেলেঙ্কারির পর এই বিষয়ে আইন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

মিজ পোপোভা বলেন, ‘রাশিয়ার গণমাধ্যম নারীদের সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে। মানুষের কাছে নারীদের নতুন ভাবমূর্তি তৈরী করার জন্য লড়তে হবে আমাদের।’

আরো পড়ুন :

বিশ্বকাপ আয়োজন রাশিয়ায় জন্মহার বাড়িয়ে দেবে?
রাশিয়ার জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা ১৫ই জুলাই বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরও আসর সম্পর্কে আগ্রহী থাকবেন। বিশ্বকাপ আয়োজনকারী দেশের শিশু জন্মহারে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসে কিনা সেদিকে নজর রাখবেন তারা।

বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে যে খেলাধূলায় সাফল্যের সাথে জন্মহার বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে।

জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি
রাশিয়ার জন্য এটি সুখবর হতে পারে। ১৯৯২ সাল থেকে রাশিয়ার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার পড়তির দিকে। যার অর্থ প্রতিবছর মৃত্যুর সংখ্যা শিশু জন্মের সংখ্যার চেয়ে বেশি।

কয়েকটি গবেষণা অনুযায়ী এমনও ধারণা করা হচ্ছে যে রাশিয়ার জনসংখ্যা ১৪.৩ কোটি থেকে ২০৫০ সালে এসে ১১.১ কোটিতে নেমে আসতে পারে। উচ্চ মৃত্যুহার, নিম্ন জন্মহার ও জীবনযাপনের নিম্নমানের জন্য জনসংখ্যায় হ্রাস ঘটতে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাশিয়ার জন্মহার প্রতি হাজারে ১৩ জন। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশের চেয়ে তা বেশী।

তবে ১৯৬০ সালের সাথে তুলনা করলে এই জন্মহার প্রায় অর্ধেক। অধিকাংশ দেশেই জন্মহার পতনের মাত্রা এত বেশি ছিল না।

এই সমস্যা নিয়ে ক্রেমলিনও বেশ চিন্তিত। গতবছর নভেম্বরে জন্মহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের সংস্কার প্রকল্প চালু করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করা হয় যেখানে অন্যতম প্রধান প্রস্তাব ছিল সেসব পরিবারের সদ্য জন্ম হওয়া শিশুর প্রথম ১৮ মাসের ভরণপোষণ খরচ রাষ্ট্র বহন করবে।

কিন্তু ফুটবল কি সত্যিই ভূমিকা রাখতে পারবে?
যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছিল যে ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জয় ও আয়োজনের কারণে সেখানে জন্মহার বৃদ্ধি পেয়েছিল।

তবে এর পক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৭ সালে।

২০০৬ বিশ্বকাপের নয় মাস পর জার্মানির হাসপাতালগুলো থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানানো হয় যে জার্মানির জন্মহার ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিসংখ্যান ও গবেষণা
জার্মান গণমাধ্যমকে ধাত্রীবিদ্যাবিশারদ রল্ফ ক্লিশ বলেন, ‘সুখের অনুভূতি বিশেষ ধরণের হরমোন নির্গমন ঘটায় এবং গর্ভধারণে সহায়তা করে।’

‘অনেক মানুষই বিশ্বকাপের মত ইভেন্টের সময় দারুণ উত্তেজিত থাকেন এবং এই উত্তেজনার বহি:প্রকাশ হয়ে থাকে অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে।’

ব্রাজিলের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের মার্চে ব্রাজিলের শিশু জন্মহার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে আগের বছরের তুলনায় জন্মহার প্রায় ৭ ভাগ বেড়েছে।

জন্মহার বৃদ্ধিতে ফুটবলের ভূমিকা পরিমাপ করতে একটি পুরো টুর্নামেন্টও প্রয়োজন হয় না। ২০১৩ সালে বৃটিশ মেডিকেল জার্নাল তাদের এক গবেষনায় ‘জেনারেশন ইনিয়েস্তা’ শব্দটি ব্যবহার করে তা ব্যাখ্যা করতে।

২০০৯ এর মে মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের শেষদিকে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার এক গোলে চেলসিকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে বার্সেলোনা।

এর ৯ মাস পরে, ২০১০ এর ফেব্রুয়ারিতে কাতালোনিয়ার হাসপাতালগুলোতে ১৬% পর্যন্ত জন্মহার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

ইতালিয় কৌতুক
ফুটবলে সাফল্যের সাথে জন্মহার বৃদ্ধির এই সম্পর্ক ইতালিতেও স্বীকৃত।

২০১৮-১৯ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনাকে এএস রোমা হারিয়ে দেয়।

এরপর এএস রোমার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে অনেকটা হাস্যরসাত্মক ভাবেই ক্লাবের নিজেদের শিশুপণ্যের বিজ্ঞাপণ দেয়া হয়।

ঐ টুইটে লেখা হয়েছিল, ‘নয় মাসের মধ্যে এগুলো হয়তো বিক্রি করার সুযোগ পাবো আমরা।’

আইসল্যান্ডের উদাহরণ
একটি ম্যাচ থেকে লাভবান হয়েছিল আইসল্যান্ডও।

বিশ্বকাপে বাছাই হওয়া ক্ষুদ্রতম দেশ ২০১৬ সালের জুনে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়। ঐ টুর্নামেন্ট দেখতে গিয়েছিল আইসল্যান্ডের প্রায় ২৭ হাজার মানুষ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ।

নয় মাস পর আইসল্যান্ডের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী তাদের দেশে রেকর্ড পরিমাণ শিশু জন্ম নেয়। ২০১৮ বিশ্বকাপেও আইসল্যান্ডের জনসংখ্যার ওপর একই ধরণের প্রভাব দেখা যেতে পারে। আইসল্যান্ড এরই মধ্যে তাদের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার সাথে ড্র করে দারুণভাবে আসর শুরু করেছে।

কিন্তু রাশিয়ার ক্ষেত্রে কি হবে?
এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে নিচের র‍্যাঙ্কিংয়ের দেশ স্বাগতিক রাশিয়া।

তবে সৌদি আরব আর মিসরকে হারিয়ে এরই মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ড প্রায় নিশ্চিত করা রুশরা আগামী বছর জন্মহারে ব্যাপক উন্নতি আশা করতেই পারে।

সূত্র: বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement