আর্জেন্টিনা, মেসি ও অ্যাগুয়েরোর প্রথম
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে
- ১৭ জুন ২০১৮, ০৭:৩৩
১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বকাপে খেলছে আর্জেন্টিনা। এবার ২১তম আসর হলেও এই ল্যাতিন দেশটি চারবার বিশ্ব ফুটবলের এই সর্বোচ্চ আসরে অংশ নেয়নি। তা ১৯৩৮, ১৯৫০, ১৯৫৪ এবং ১৯৭০ সালে। '৭০ এ অবশ্য কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ। অর্থাৎ এবার রাশিয়ার মাটিতে মেসি-ম্যারাডোনার দেশের ১৭তম আসর। লক্ষ্যণীয় বিষয় আগের ১৬ আসরের কোনোটিতেই আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম ম্যাচে ড্র করেনি। যা এবার তাদের করতে বাধ্য করেছে আইসল্যান্ড। অর্জেন্টিনা এর আগে সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ইতালি বিশ্বকাপে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে হেরে বসেছিল ক্যামেরুনের কাছে। ১৯৮৬-এর চ্যাম্পিয়নদের ১-০তে কাবু করে আফ্রিকান দেশটি।
আরেকটি প্রথম ঘটনা আছে। ২০০৬ থেকে বিশ্বকাপে খেলছেন লাওলেন মেসি। এটি তার চতুর্থ বিশ্বকাপ। নিজ ক্লাব দলের পেনাল্টি স্পেশালিস্ট তিনি। জাতীয় দলেও তার কাঁধে থাকে পেনাল্টি নেয়ার দায়িত্ব। কিন্তু আগের তিন বিশ্বকাপে মেসি কোনো পেনাল্টি শট নেয়ার সুযোগ পাননি। এবার নিজেদের প্রথম খেলাতেই আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। মেসিও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে নিতে আসেন পেনাল্টি শট। সবাই ধরে নিয়েছিলেন গোল করতে যাচ্ছেন মেসি। কিন্তু কপাল খারাপ। তার নেয়া শট ডান দিকে শরীর ভাসিয়ে ঠেকিয়ে দেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক হানেস হোল্ডারসন। এই শট ঠেকিয়ে তিনি হয়ে যান বীর। আর নিন্দা কুড়াতে মেসি। এই বার্সা তারকা এর আগে তিন বার জাতীয় দলের হয়ে পেনাল্টি মিস করেন। ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকাতে তার নেয়া টাইব্রেকার শট চিলির জালে না গিয়ে বার উঁচিয়ে চলে যায়। তার আরো দুটি পেনাল্টি মিসের ঘটনা আছে দু’টি ফিফা প্রীতি ম্যাচে। ১৬ন জুন রাশিয়ায় করলেন সর্বশেষটি।
অবশ্য ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডস এর বিপক্ষে টাইব্রেকারে গোল করেন তিনি। ২০১০ বিশ্বকাপে কোনো গোল ছিল না তার। এবারকি এই মিস দিয়েই তার ব্যর্থতার শুরু মেসির মোট বিশ্বকাপ গোল পাঁচটি। ২০০৬ সালে সার্বিয়ার বিপক্ষে। ২০১৪ তে ব্রাজিলে তার গোল ইরান, বসনিয়া ও নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে তার গোল ছিল দুটি।
২০১০ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলেছেন সার্জিও অ্যাগুয়েরো। কিন্তু ম্যানচেষ্টার সিটির এই তারকা এত দিন বিশ্বকাপে কোনো গোলের দেখা পাননি। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার সাবেক এই জামাতার গোলেই লিড আর্জেন্টিনার। অথচ সেই লিড ধরে রাখতে পারেনি জর্জ সাম্পাওলির শিষ্যরা।
আরো পড়ুন :
মেসির পেনাল্টি মিসে হতাশ ম্যারাডোনা
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে টিভি পর্দায় ভেসে উঠল ম্যারাডোনার চোহারা। টিভিতে তাকে দেখেই সবার ঘাড় ঘোরোনো শুরু ভিআইপি গ্যালারির দিকে। ভিআইপি গ্যালারির একেবারে দক্ষিণ কোণায় মিলল ম্যারাডোনাকে। মাঠে নামছেন মেসিরা। আর ততক্ষণে গ্যালারি মাতানো শুরু করলেন ম্যারাডোনা। ফটো সাংবাদিকরা তাকে পেয়েই শুরু করে দিলেন তাকে ক্যামেরাবন্দী করতে। তার পাশে বসা দর্শকরা তো তাকে পেয়ে মহা খুশি। তারা তার সাথে ছবি তুললেন ইচ্ছে মতো। ম্যারাডোনার একটু দূরেরই গ্যালারির একটি অংশের শেষাংশ। সেখানে ঠাঁই নিয়েছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। এরা আরো উৎসাহেত হয় সাবেক এই তারকা ও আর্জেন্টিাকে সর্বশেষ বিশ্বকাপ এনে দেয়া ব্যাক্তিটিকে পেয়ে।
কালো রঙের গেঞ্জি, গেঞ্জির বুকে সাদা ছাপ, চোখে কালো চশমা, চশমা থেকে মেরুন রঙের আলোকচ্ছ্বটা বেরুচ্ছিল। ওই অবস্থায় সবার দৃষ্টিবন্দী হন ম্যারাডোনা। একটু পরপরই তিনি হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজ দেশের দর্শকদের সাথে ওলে ওলে, ভামোস ভামোস আর্জেন্টিনা , আর্জেন্টিনা (আর্জেন্টিনা এগিযে যাও) বলে গান গাইতেছিলেন।
ম্যাচের প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার একটি পেনাল্টি আবেদন নাকচ করে দেন পোল্যান্ডের রেফারি সিজম্যান মাসিনিয়াক। এতে অসন্তুস্ট ম্যারাডোনা ভিডিও রিপ্লে দেখার জন্য আবেদন করতে থাকেন দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে। অবশ্য বিরতির পর মেসি পেনাল্টি মিস করার পর হতাশা ছিল তার মধ্যে। বিরতির পর বেশ স্টাইল করে ছবি তুলতে পোজ দেন তিনি। হাতে সিগারেট ও ছিল তখন। এ সময় একটু দূরে থাকা (মাঝ ফাঁকা) আর্জেন্টিনার এক দর্শক নিজ দেশের পতাকা খালি পানির বোতলে প্যাঁচিয়ে ছুড়ে মারেন ম্যারাডোনার দিকে। উদ্দেশ্য পতাকায় এই সাবেক কোচ এবং অধিনায়কের অটোগ্রাফ নেয়া। কিন্তু ম্যারাডোনা বা তার আশপাশে কারো কাছে কলম ছিল না। তাই আবার সেই দর্শক কলম, ছুড়ে মারলেন। এরপর দুই পক্ষই খুশি।
ম্যাচ চলাকালীন আশপাশের দর্শক এবং মিডিয়াকর্মীরা একটু পরপরই তাকাছিলেন তার দিকে। মানে এখন কী করছেন ফুটবলের এই জীবন্ত কিংবদন্তী। তার অঙ্গভঙ্গী কী তা চোখে আটকানোর জন্য। দলের বাজে পারফরম্যান্সে মাঝে মাঝে বিরক্ত হতে দেখা গেছে তাকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাকে এবং অন্য সবাইকে মন খারাপ করেই মাঠ ত্যাগ করতে হয়। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা জয়ের বদলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল আইসল্যান্ডের সাথে লিড নিয়েও ১-১ এ ড্র করে মাঠ ছাড়ে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা